মহামারি করোনাকালে বাংলাদেশে প্রায় ৩ লাখ যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত

বাংলাদেশে যক্ষ্মা মোকাবিলায় বেশ সাফল্য এলেও এখনো বছরে শনাক্ত হচ্ছেন প্রায় ৩ লাখ রোগী। এছাড়া কমপক্ষে ১৯ শতাংশ রোগী ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সংক্রামক এ ব্যাধিতে আক্রান্ত একজন ব্যক্তি কমপক্ষে আরও ১০ জনের মধ্যে রোগটি ছড়িয়ে দেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময়মতো রোগ শনাক্ত হলে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

১৮ বছর বয়সী রুবেল। কাশি ও বুকে ব্যথা দেখা দেওয়ায় বছর দুয়েক আগে শরণাপন্ন হন চিকিৎসকের। পরীক্ষায় ধরা পড়ে যক্ষ্মা। চিকিৎসা নিয়ে কিছুদিন স্বাভাবিক থাকার পর সম্প্রতি আবারো দেখা দেয় সমস্যা। জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালে আনা হলে দেখা যায় ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা, এমডিআর টিবিতে আক্রান্ত। এ পর্যায়ে সাধারণত কাজ করে না প্রচলিত ওষুধ। বিশেষ ওষুধের ধকল নিতেও পারেন না অনেকে। সরকারি তথ্যমতে, ২০১৯ সালে দেশে প্রায় ৩ হাজার ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন জটিল ধরনের এ যক্ষ্মায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যথাসময়ে শনাক্ত না হলে আর মাঝপথে ওষুধ বন্ধ করে দিলে বিপজ্জনক হতে পারে যক্ষ্মা। বড় একটি অংশই থেকে যাচ্ছে শনাক্তের বাইরে। যারা আক্রান্ত পরে অন্যদের এবং ঝুঁকির কারণ হবে জনস্বাস্থ্যের জন্য। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হলে যক্ষ্মা প্রতিরোধ সম্ভব। জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির রিপোর্ট অনুযায়ী, এক দশক আগে যেখানে শনাক্ত রোগীর বিপরীতে সুস্থতার হার ছিল ৯২ শতাংশ, তা এখন ৯৬ শতাংশ। আর মৃত্যুহার ২ দশমিক ৯ শতাংশ।

জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির বিভাগীয় পরামর্শক ডা. আহমেদ পারভেজ জাবীন বলেন, দুই সপ্তাহের বেশি কাশি হলে যক্ষ্মা হতে পারে, এই ধারণা একেবারে সত্যি। কারণ এ সত্যির বশবর্তী হয়ে সে নির্দিষ্ট পরীক্ষা কেন্দ্রে যাবে আর পরীক্ষা করাবে। যারা এ ধরনের রোগে ভুগছেন তাদের আমরা এক নেটওয়ার্কে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি।

জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিটিউ ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহেদুর রহমান খান সময় সংবাদকে বলেন, সঠিক ওষুধ ও সঠিক পরিমাণ ডোজ এবং সময়, পর্যন্ত অনুসরণ করে থাকে তাহলে কিন্তু কঠিন সমস্যা হয় না।

ডা. শাহেদুর রহমান খান আরও বলেন, সরকারের দেওয়া সময় অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে, সময় চলে যাচ্ছে সেইদিকে। কিন্তু আমাদের সেই ধরনের সাফল্যে আসছে না। আরও প্রচারণা দরকার এ ক্ষেত্রে।

আর করোনা মহামারির সময়েও যক্ষ্মা আক্রান্ত ব্যক্তিদের বাড়তি সচেতনতার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের। পরামর্শ দিচ্ছেন, করোনা আক্রান্ত হলেই এসব ব্যক্তিদের হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে দেশে শনাক্ত মোট যক্ষ্মা রোগী ২ লাখ ৯২ হাজার ৯৪০ জন। পরীক্ষার বিপরীতে প্রতি লাখে শনাক্ত ২২১ জন, আর মৃত্যু ২৪ জন। ২০৩৫ সালের মধ্যে ৯৫ শতাংশ ও শনাক্ত হার ৯০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে বলে মনে করে তারা।

এদিকে বিশ্বব্যাপী আজ পালিত হচ্ছে যক্ষ্মা দিবস। যক্ষ্মা দিবসের এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘সময় বয়ে যাচ্ছে’ বা ‘দ্য ক্লক ইজ টিকিং’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলের জন্য বিশ্বনেতারা কিছু বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ২০৩৫ সালের মধ্যে সেসব প্রতিশ্রুতি পূরণের কথা। কিন্তু সময় আছে অল্প।