দীর্ঘ ৩৬ বছর পর ছোট পরিসরে অস্ট্রেলিয়ায় চ্যান্সারি ভবন

কেটে গেলো দীর্ঘ ৩৬ টি বছর। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে নির্মাণ কাজ শুরু না হওয়ায় বাংলাদেশকে বড় পরিসরের জমি হারাতে হয়। অবশেষে বড় পরিসরের জমি হারিয়ে ছোট পরিসরে দ্বীপ-মহাদেশ অস্ট্রেলিয়ায় চ্যান্সারি ভবন নির্মাণ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ১৪৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় বাংলাদেশি চ্যান্সারি ভবন নির্মাণ করবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে এটি নির্মাণ করা হবে।

চলতি সময় থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চ্যান্সারি ভবন নির্মাণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ হাইকমিশন, ক্যানবেরা। এরই মধেই প্রকল্পের প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ‘অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় বাংলাদেশি চ্যান্সারি ভবন নির্মাণ’ প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে এরই মধ্যে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় সুপারিশকৃত হয়েছে। এখন যে কোনো সময়ে প্রকল্পটি একনেক সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে যাচ্ছে।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের যুগ্ম প্রধান (ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ণ উইং-১) মো. উবায়দুল হক বলেন, দীর্ঘদিন পরে অস্ট্রেলিয়ায় নিজস্ব ভবন পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে প্রকল্পটি পিইসি সভায় অনুমোদন পেয়েছে। এখন একনেক সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের পালা। অস্ট্রেলিয়া সরকার টাকার বিনিময়ে আমাদের জমি দিচ্ছে।

সূত্র জানায়, অস্ট্রেলিয়া সরকার ১৯৮৫ সালে ক্যানবেরার কুটনৈতিক এলাকা ইয়ালালুমলাতে চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ১১০ কাঠা আয়তনের একটি প্লট বরাদ্দ দেয়। ১৯৯৯ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী প্লটটিতে চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মাণের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্মাণ কাজ শুরু না করায় ২০০৪ সালে সে সময়ের সরকারকে জমিটি অস্ট্রেলিয়া সরকারকে ফেরত দিতে হয়। ২০১০ সালে বর্তমান সরকার পুনরায় একটি প্লট বরাদ্দ পাওয়ার উদ্যোগ নেয়। ফলে অস্ট্রেলিয়ার সরকার ২০১১ সালে উক্ত কুটনৈতিক এলাকায় ১০ কোটি ১৯ লাখ টাকা মূল্যে ৭৪ কাঠার (৪৯৬৫ বর্গমিটার আয়তন) একটি প্লট বরাদ্দ দেয়। জমিটি বর্তমানে বাংলাদেশ হাইকমিশনের দখলে।

প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) তৈরির জন্য ২০১৮ সালের এপ্রিলে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি ক্যানবেরা সফর করে। কমিটি তাদের প্রতিবেদনে ১ হাজার ৪৭২ বর্গমিটার চ্যান্সারি ও ৮০০ বর্গমিটার বাসভবন অর্থাৎ মোট ২ হাজার ২৭২ বর্গমিটার আয়তনের পূর্ণাঙ্গ কমপ্লেক্স নির্মাণের সুপারিশ করে।

প্রথমে যে প্লটটি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, তা চ্যান্সারি ও বাসভবন নির্মাণের জন্য যথেষ্ট বড় ছিল। কিন্তু ২০০৪ সালে জমিটি অস্ট্রেলিয়া সরকার ফেরত নিয়ে নেওয়ার পর ভারতীয় হাইকমিশন ওই প্লটটির এক-তৃতীয়াংশ নিয়ে নেয়। এর ফলে ২০১১ সালে বাংলাদেশ সরকার যে প্লটটি কেনে, তা আগের তুলনায় বেশ ছোট (৪৯৬৫ বর্গমিটার)। এমনকি এটি চ্যান্সারি ভবন নির্মাণের জন্য যথেষ্টও নয়।

তাছাড়া একই এলাকায় এশিয়ার অন্যান্য দেশের বাংলাদেশের চাইতে বড় প্লট রয়েছে এবং এ মিশনগুলো তাদের জমিতে শুধুমাত্র চ্যান্সারি ভবন নির্মাণ করছে।

যেমন ভারতীয় হাইকমিশনের প্লটের আয়তন ৭ হাজার ৩৩৭ বর্গমিটার, পাকিস্তানের ১২ হাজার ২২১ বর্গমিটার, শ্রীলংকার ৭ হাজার ৮৯৬ বর্গমিটার, মালয়েশিয়ার ৭ হাজার ০১৩ বর্গমিটার এবং ইন্দোনেশিয়ার ৬ হাজার ৭৩৭ বর্গমিটার। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মন্ত্রণালয় গত বছর প্লটটিতে শুধুমাত্র চ্যান্সারি ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়।

অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বিদ্যমান দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করতে এবং সরকারের রাজস্ব ব্যয়ের ওপর চাপ কমাতে বাংলাদেশ সরকারের ক্যানবেরায় নিজস্ব জমিতে একটি স্থায়ী ভবন থাকা প্রয়োজন। এসব কারণে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। এরই মধ্যে প্রকল্পের প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় নানা কার্যক্রম বাস্তবায়িত হবে। পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও ল্যান্ডস্কেপিং কাজ থাকবে প্রকল্পের আওতায়। বিদ্যুতায়নসহ চ্যান্সারি ভবন নির্মাণ হবে ২ হাজার ৬০০ বর্গমিটার আয়তনের জমিতে। এছাড়া আসবাবপত্র, বৈদ্যুতিক এবং বিদ্যুৎ সহায়ক যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার, সিসিটিভি কেনা হবে। এছাড়া পরামর্শক সেবা খাতেও ব্যয় হবে প্রকল্পের আওতায়।