আগামীকাল ১৯ প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী

কক্সবাজারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। সৈকতনগরী সেজেছে নতুন সাজে। উদ্দীপ্ত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

তাদের মতে, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ করেছে বাংলাদেশ। দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে পর্যটন রাজধানী হিসেবে খ্যাত কক্সবাজারের চিত্রও পাল্টে গেছে। বিশেষ করে সাগর ছোঁয়া রানওয়ে, মুক্তার রঙে ঝিনুকের মতো রেলস্টেশন, মেরিন ড্রাইভ, গভীর সমুদ্রবন্দরসহ নানা রকম প্রকল্প নিয়ে কক্সবাজারে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ চোখে পড়ার মতো।

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের এই জেলায় ছোট-বড় ৭৭টি উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকা।

পর্যটননগরী হিসেবে কক্সবাজার দেশে-বিদেশে সুপরিচিত। ১২০ কিমি দীর্ঘ সমুদ্রসৈকতের কক্সবাজার জেলাটি বর্তমান সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরেও বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে কক্সবাজার জেলাটি সরকারের উন্নয়নের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

আগামীকাল শনিবার কক্সবাজার সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর ২৯ প্রকল্পের উদ্বোধনের ১১ মাসের মাথায় চলতি সরকারের শেষ মেয়াদে কক্সবাজারে এসে শেষ হওয়া মেগাপ্রকল্পসহ আরও ১৯ প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর করবেন তিনি। এদিন সকালে কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা চান্দেরপাড়া এলাকায় নির্মিত আইকনিক রেলস্টেশনের উদ্বোধন করবেন তিনি।

রেল মন্ত্রণালয়ের অধীনে আইকনিক স্টেশন উদ্বোধনের পর সুধীজনের সঙ্গে মতবিনিময় সেরে বিকালে দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। এ সময় রেললাইন প্রকল্প ছাড়াও ১৯ প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন তিনি।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য বলছে, রেললাইন ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকার ১৯ প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। তার মধ্যে রেলসহ ১৫টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ৪টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী যে ১৫টি প্রকল্প উদ্বোধন করবেন তাতে রয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে নির্মিত মাতারবাড়ি ১২০০ মেগ ওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র, সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সংযুক্ত। বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাটে ৫৯৫ মিটার পিসি বক্স গর্ডার ব্রিজ নির্মাণ, কক্সবাজার সদরের খাল লাইনিং অ্যাপ্রোচ রোড ও ব্রিজ। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের চারটি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৪টি, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্প ও জেলা প্রশাসনের দুটি ছাদখোলা বাস।

মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র

সরকারের মেগাপ্রকল্পগুলোর অন্যতম মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র। এটি জাপানের আর্থিক সহায়তার ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম।
১২০০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদন শুরু হয় ২৯ জুলাই দুপুরে। ৬ মেগা ওয়াটের পরীক্ষামূলক উৎপাদনের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর এটি ১২ মেগাওয়াটের উৎপাদন শুরু করে অক্টোবরের শুরুতে।

মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনওয়ার হোসেন মজুমদার। তিনি জানান, উৎপাদিত এই বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে।

সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে কুতুবদিয়ায় জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সংযুক্ত

স্বাধীনতার ৫২ বছরে দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় প্রথমবারের মতো বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয় গত ১৩ এপ্রিল। আগের দিন ১২ এপ্রিল রাত থেকে দ্বীপটির দেড় হাজার গ্রাহক পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ সুবিধা পেতে শুরু করে।

প্রকল্পটির পরিচালক ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. ফারুক আহমেদ জানান, দ্বীপতে ১৯৮০ সালে জেনারেটরের মাধ্যমে সান্ধ্যকালীন কয়েক ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা ছিল। ওই দেড় হাজার গ্রাহককে প্রাথমিকভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ চালু করা হয়। আবেদন করা ২০ হাজার গ্রাহককে পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে।

বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাটে ৫৯৫ মিটার পিসি বক্স গর্ডার ব্রিজ

এলজিইডি কর্মকর্তারা জানান, কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কস্তুরাঘাটসংলগ্ন বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মিত হচ্ছে ‘কক্সবাজার-খুরুশকুল’ সংযোগ সেতু। দীর্ঘ ‘প্রিস্টেইট বক্স গার্বার সেতু’। ৫৯৬ মিটারের এই সেতুর ব্যয় হচ্ছে ২৫৯ কোটি টাকা। সেতুটির আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের গত ১ সেপ্টেম্বর। সেতুটি ২০২১ সালের ২১ আগস্টের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনা মহামারি ও নানা জটিলতায় শেষ হতে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত লেগেছে।

প্রকল্প বাস্তয়ানকারী প্রতিষ্ঠান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর-এলজিইডির কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন খান বলেন, বাঁকখালীতে সেতু নির্মাণের ফলে যে বিষয়টা আমাদের নতুনমাত্রা যোগ করেছে, সেটি হলো— পর্যটনশিল্প এবং আরেকটি দিক থেকে কক্সবাজার শহরকে সম্প্রসারণ করার ক্ষেত্রে এই সেতুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ২৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার সদরের খাল লাইনিং অ্যাপ্রোচ রোড ও ব্রিজ। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ৪টি প্রকল্প। যেখানে রয়েছে ৪ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে নির্মিত কুতুবদিয়ার কৈয়ারবিল ঠাণ্ডা চৌকিদারপাড়ার ৬০ মিটার সিসি গার্ডার ব্রিজ, ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে চকরিয়া বাস টার্মিনাল সম্প্রসারণ প্রকল্প, উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প, সাড়ে ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে গোরকঘাটা সড়ক প্রশস্তকরণ।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প ৪টির মধ্যে রয়েছে ৩ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে কক্সবাজার সদরের জাহারা ইসলাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, সাড়ে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে মহেশখালীর ইউনুসখালী নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে উখিয়ার রত্নাপালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও মারিচ্যা পালং উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন।

Scroll to Top