দু\’দিনেও সন্ধান মিলেনি নিখোঁজ মেয়র রুকুনুজ্জামানের

জামালপুরের সরিষাবাড়ী পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শিল্পপতি রুকুনুজ্জামান রোকনের সন্ধান মেলেনি নিখোঁজের দু\’দিনেও। রাতে ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়ে পরদিন সকালে তিনি উধাও হওয়ায় জনমনে নানা প্রশ্ন ও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।

মেয়র রোকন সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর উত্তরা ১৩নং সেক্টরের ৬০নং নিজ বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকেই নিখোঁজ হন।

মেয়র রুকুনুজ্জামানকে জীবিত উদ্ধারের দাবিতে মঙ্গলবার দুপুরে পৌরসভা কার্যালয়ে প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে সব কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতিবাদ সভা করে। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ আলী জানান, আজ রাতের মধ্যে প্রশাসন মেয়রকে সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করতে না পারলে পরদিন সকাল থেকে সকল দাপ্তরিক কাজকর্ম স্থগিতসহ কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।

নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ২৪ সেপ্টেম্বর রাত সোয়া ৯টার রুকুনুজ্জামান তাঁর ফেসবুকে এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন। স্ট্যাটাসের একাংশে তিনি লিখেন, ‌\’নতুন প্রজন্মের কাছে আমার আহবান যে, আমাকে হত্যা করা হলেও তোমাদের সিক্ত ভালোবাসা যেন অটুট থাকে এবং আমার উন্নয়নের ধারাবাহিকতা তোমরা ধরে রাখবা\’। স্ট্যাটাসের পরদিন সকাল থেকেই তিনি উধাও হওয়ায় ঘটনাটি রহস্যজনক ও আতঙ্কের সৃষ্টি করে।

মেয়র রম্নকুনজ্জামান রোকনের দেহরক্ষী (গানম্যান) শিহাব জানান, সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মেয়র স্যার উত্তরা ৭নং পার্কে জরুরি কাজ আছে বলে বাসা থেকে একাই হেঁটে বের হন। এ সময় পৌরসভার অফিসিয়াল মোবাইলটিও রেখে যান। এরপর থেকেই তিনি নিখোঁজ রয়েছেন।

নিখোঁজ মেয়রের পারিবারিক, দলীয় ও পৌরসভা সূত্র জানা গেছে, রুকুনুজ্জামান পৌর নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং মেয়র নির্বাচিত হন। ইতিপূর্বে তিনি বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই নানা কারণে তিনি আলোচিত-সমালোচিত ও দলীয় গ্রুপিংয়ে জড়িয়ে পড়েন। ব্যবসার কাজে তিনি সপ্তাহে ৪-৫ দিন রাজধানীর উত্তরায় অবস্থান করায় শুক্র, শনি ও রবিবারেও পৌরসভায় অফিস করেন।

সম্প্রতি তাঁর ব্যক্তিগত কিছু বিষয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় পৌর ছাত্রলীগের এক নেতার সঙ্গে তাঁর মনস্তাত্ত্বিক বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে থানা ও আদালতে পাল্টাপাল্টি জিডি ও মামলা রয়েছে। গত ৫ সেপ্টেম্বর সাতপোয়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলামের সঙ্গে তাঁর সরাসরি উত্তেজনা ও মারধরের ঘটনা ঘটে। সে সময় উভয় পক্ষই নিজেদের লাইসেন্সকৃত পিস্তল নিয়ে মহড়া দেয় এবং থানায় পাল্টাপাল্টি জিডি হয়।

এদিকে ২১ সেপ্টেম্বর বিএনপিপন্থী কর্মচারী (কর আদায়কারী) মিয়া হাসান মাসুদ মোন্নাফকে দুর্নীতির দায়ে মেয়র পৌরসভা থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেন। ওইদিনই বিকেলে তিনি সরিষাবাড়ী থেকে ঢাকায় রওনা করেন এবং রাতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে পরদিন সকাল থেকে উধাও হন। বিষয়টি অপহরণ না অন্যকিছু তা জনমনে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।

এ ব্যাপারে মেয়রের বড়ভাই সাইফুল ইসলাম টোকন জানান, পৌর নির্বাচনের পর থেকেই রাজনৈতিক ও দাপ্তরিক কারণে মেয়র নানা শত্রুতার সম্মুখীন হন। কিছুদিন আগে ঢাকায় এক রাজনৈতিক নেতা মেয়রকে হুমকিও দিয়েছিল। তিনি আরো বলেন, সোমবার সারাদিন মেয়রকে না পেয়ে রাতে তিনি উত্তরা (পশ্চিম) থানায় জিডি (নম্বর ১৬১১) করেছেন।

এদিকে মেয়র রুকুনুজ্জামানের নিখোঁজের ঘটনাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনে তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। তাঁকে উদ্ধারে পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা বিভাগ তত্পরতা চালাচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে উত্তরা (পশ্চিম) থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মেয়রকে উদ্ধারে সব ধরনের প্রচেষ্টা চলছে।

উল্লেখ্য, জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার আরেক বর্ষিয়ান আওযামীলীগ নেতা তেজগাঁও কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক উপাধ্যক্ষ আব্দুল হান্নান ২০১৫ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে নিখোঁজ হলেও আজও তার সন্ধান মেলেনি। তাঁর স্ত্রী একই কলেজের শিক্ষিকা (দর্শন) আফরোজা সুলতানা শেরেবাংলা নগর থানায় ২০১৫ সালের ৮ ডিসেম্বর আব্দুল হান্নান নিখোঁজের ব্যাপারে সাধারণ ডায়রি করেছেন।

এরপর থেকে তিনি আজও নিখোঁজই রয়েছেন। তিনি একুশ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় মাথায় স্লিন্টারবিদ্ধ হয়েছিলেন। তার বাড়ি সরিষাবাড়ী উপজেলার সাতপোয়া ইউনিয়নের চর চুনিয়াপটল গ্রামে। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। গত দুই বছরে সরিষাবাড়ী উপজেলার দুইজন শীর্ষস্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা ঢাকা থেকে নিখোঁজ হওয়ায় সরিষা বাড়ীর রাজনৈতিক নেতাদের মাঝে চরম ভীতি ও আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ০০০২ ঘণ্টা, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭,
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এ