২০ দলীয় জোট ভাঙায় ‘সরকারের খেলাধুলা’ দেখছেন রিজভী

২০ দলীয় জোট ভাঙতে ‘সরকারের খেলাধুলা থাকতে পারে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। বুধবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।

২০ দলীয় জোট থেকে আন্দালিব রহমান পার্থের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চলে যাওয়া এবং জোটের আরেক শরিক বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের জোট ত্যাগের আলটিমেটামের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এ রিজভী বলেন, ‘২০দলীয় জোটের সঙ্গে আমরা দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছি। একটু মান-অভিমান হতেই পারে, এটা ঠিক হয়ে যাবে। এর পেছনে সরকারের খেলাধুলা থাকতে পারে।’

রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ

রমজানের বাজার পরিস্থিতিতে জনজীবনের দুর্বিষহ অবস্থা তুলে ধরতে গিয়ে রিজভী অভিযোগ করেন, দুষ্টচক্রের সিন্ডিকেটের কাছে সরকার জিম্মি থাকায় বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে।

তিনি বলেন, রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। সাধারণ মানুষ এখন বাজারে গিয়ে সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। স্বল্প আয়ের মানুষজন দিশেহারা হয়ে ওঠেছেন।

রিজভী বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছিলেন রমজানে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে না। অথচ রোজার শুরুতেই বাজার অস্থির হয়ে ওঠেছে। হু হু করে দাম বেড়ে চলেছে। বিভিন্ন পণ্যের দাম গড়ে বেড়েছে তিন থেকে চারগুণ। বাজারে সরকারের কোনো নজরদারি নেই, তাদের নজর লুটপাটে।

তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের প্রতি সরকারের কোনো দায় নেই। তারা (সরকার) জিম্মি অসাধু সিন্ডিকেটের কাছে। বাজারের দুষ্টচক্র সিন্ডিকেট এখন বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। সরকার তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।

রিজভী বলেন, কারণ- বাজারের নিয়ন্ত্রকরাই এখন সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করছে। গণতন্ত্র ধরাছোঁয়ার বাইরে, জনগণের ভোটের অধিকার হরণ শেষে এখন ভাতের অধিকার এবং ন্যায়বিচারের অধিকার কেড়ে নিতে তৎপর তারা।

রাজধানীতে দুই সিটি কর্পোরেশনের বেঁধে দেয়া নির্ধারিত মূল্যে গুরু ও খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে না উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, রমজানে সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত মূল্য গরুর মাংস প্রতিকেজি ৫২৫ টাকা এবং খাসির মাংস ৭৫০ টাকা। কিন্তু এখন বিভিন্ন এলাকায় প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬০০ ও খাসির ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা এর কারণ হিসেবে অতিরিক্ত খাজনা ও সরকারি লোকজনের চাঁদা আদায়কে দায়ী করেছেন। তারা বলছেন, পশুর হাটে চাঁদাবাজি বন্ধ হলে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৩০০ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব। এই চাঁদাবাজির অর্থ সরকারের উপর মহলেও যাচ্ছে। আওয়ামী সিন্ডিকেট পবিত্র রমজান মাস এলেই দ্রব্যমূল বাড়িয়ে মানুষকে জিম্মি করে ফেলে। লুটপাটতন্ত্র সর্বত্র আজ জেঁকে বসেছে।

পাটকল শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়ে রিজভী বলেন, আজকে শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না, কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যে দাম পায় না। বিজেএমসির নিয়ন্ত্রণাধীন পাটকলগুলোর কোনো না কোনোটিতে প্রতিদিন ধর্মঘট চলছে। বহুদিন তারা বেতন পায় না, ক্ষুধায়-দাবিদ্র্যতায় দিনাতিপাত করতে হচ্ছে এই পাটকল শ্রমিকদের।

তিনি বলেন, ২০১৫ সালের মজুরি কমিশন রোয়েদাদ এখনও বাস্তবায়ন করা হয়নি। মিলগুলোতে শ্রমিকদের ১০ থেকে ১৫ সাপ্তাহের মজুরি বাকি পড়ে রয়েছে। স্টাফদের তিন মাসের বেতন বাকি। সামনে ঈদ আসছে, ঈদে তাদের সন্তানদের কাঁপড় দেয়া দূরে থাক, তাদের পেটে আহারটুকু যোগাতে পারবে কি না- সেটাই আজকে শ্রমিকরা সন্দিহান। রমজান মাসে পাটকল শ্রমিকদের এই যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নেয়ার জন্য আমি দলের পক্ষ থেকে জোর দাবি জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপিকা শাহিদা রফিক, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় নেতা মুনির হোসেন, মাহবুবুল হক নান্নু, খান রবিউল ইসলাম রবি ও শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেইন উপস্থিত ছিলেন।

Scroll to Top