ঈদুল আজহার আগেই খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি বিএনপির

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে আসছে ঈদুল আজহার আগেই মুক্তি দেয়ার দাবি জানিয়ে বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে নির্জলা ও হাস্যকর বানোয়াট মামলায় ফরমায়েশী রায়ে গত ১৮ মাস কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে। ৭৪ বছর বয়সী চারবারের নির্বাচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী গুরুতর অসুস্থ।

পিজি হাসপাতালের চার দেয়ালে বন্দী রেখে নামমাত্র চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে তাঁকে। সেখানে ভর্তির পর এখনও তাঁর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসেনি, তাঁর বিছানা থেকে উঠতে, ঠিকমত খাওয়া-দাওয়া করতে এবং স্বাভাবিকভাবে হাত পা নাড়াতে কষ্ট হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতেও তাঁর অসুবিধা হচ্ছে। তাঁর শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ব্যক্তিগত ঈর্ষা ও প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য জামিনে সরাসরি বাধা দিচ্ছেন। মিথ্যা মামলাগুলো জামিনযোগ্য হলেও তাঁকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না। শেখ হাসিনা চোখের সামান্য সমস্যার জন্য রাষ্ট্রীয় খরচে লন্ডন চলে গেছেন চিকিৎসা করাতে। আর খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিপীড়ণ-নির্যাতনসহ কারাবন্দী হওয়ার পূর্বে শরীরে বিভিন্ন অস্ত্রোপচারজনিত নানা অসুস্থতায় ভোগার পরেও তাঁর চাহিদা মতো দেশের বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। বেগম খালেদা জিয়াকে ঈদুল আজহার আগেই মুক্তি দিতে হবে। তার জামিন নিয়ে টালবাহানা বন্ধ করতে হবে।

বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, সরকার দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও দেশ পরিচালনায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ। আইনমন্ত্রী এই ব্যর্থতা ঢাকতে গণপিটুনির দায় চাপাচ্ছেন বিরোধীদলের ওপর। আইনমন্ত্রী এই উড়ো-অবান্তর ও উদ্ভট কথা বলছেন ভিন্ন কারণে, বোধহয় তার মন্ত্রিত্বের পদটিই এখন টলমল করছে। তাই হয়তো প্রধানমন্ত্রীকে খুশি করে মন্ত্রিত্বের টালমাটাল পদটি ধরে রাখতে তিনি বিরোধীদলের গুজবে হত্যাকাণ্ডের দায় চাপাচ্ছেন। পীড়াদায়ক আবোল-তাবোল বকছেন।

ঢাকাসহ সারা দেশে ডেঙ্গুর মহামারি চললেও সরকারের কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নেই অভিযোগ করে রিজভী বলেন, দেশে মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে ডেঙ্গু। ডেঙ্গু রোগীতে সয়লাব হাসপাতালগুলো। তিল ধারণেরও জায়গা নেই। ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে। প্রতিদিনই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, যা আগের রেকর্ড ভেঙে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, ডেঙ্গুর এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও ঢাকার দুই সিটির বিনাভোটের মেয়ররা নাগরিকদের জীবন নিয়ে উপহাস করে নির্লজ্জের মতো বলে আসছেন, ‘কিছুই হয়নি, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই’। পত্রপত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, মশা মারতে যে ওষুধ কেনা হয়েছে সেই ওষুধে কাজ হয় না। কারণ বাজেটের টাকা লুটপাট করে সস্তা দামে নকল ওষুধ কেনা হয়েছে। মহামান্য হাইকোর্ট গতকাল বলেছেন, ‘মশা নিধনে অকার্যকর ওষুধ আমদানি করা হয়েছে’।

রিজভী বলেন, এমনকি সরকারের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও শেষ পর্যন্ত জনরোষের ভয়ে বলতে বাধ্য হয়েছেন যে, ‘ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, ঢাকার বাইরেও ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ছে, প্রাণহানি ঘটছে। যে ওষুধ আনা হয়েছে তা অকার্যকর’।

সরকারের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় বসে ডাকাতদের ভূমিকা পালন করছে সরকার। জনগণ বাঁচলো না মরলো তা নিয়ে কোনও মাথা ব্যাথা নেই তাদের। একদিকে দেশে ডেঙ্গুর মহামারি অন্যদিকে ভয়াবহ বন্যায় পানিতে ভাসছে মানুষ, ত্রাণ নেই, সাহায্য নেই, পানিবাহিত রোগের চিকিৎসা নেই, চারিদিকে শুধু হাহাকার ও দীর্ঘশ্বাস চলছে দেশজুড়ে। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লন্ডনে ছুটি কাটাচ্ছেন।

ইত্তেফাক

Scroll to Top