প্রধান বিচারপ‌তি‌কে ছু‌টি নি‌তে বাধ্য করা নোংরা দৃষ্টান্ত : বিএনপি

বিএনপি দাবি করেছে, ষোড়শ সংশোধনীর আপিলের রায়ের জের ধরে ‘আক্রোশমূলকভাবে’ প্রধান বিচারপতিকে এক মাসের ছুটিতে যেতে ‘বাধ্য করা’ হয়েছে, যা দেশের বিচার বিভাগের ‘স্বাধীনতা হরণের ক্ষেত্রে একটি নোংরা দৃষ্টান্ত’ স্থাপন করেছে।

বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে করা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় গত ১ আগস্ট প্রকাশের পর থেকে মন্ত্রী-এমপিদের কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েন প্রধান বিচারপতি। জাতীয় সংসদেও তাঁর সমালোচনা করা হয়।

এর মধ্যেই গত ১০ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি দেশের বাইরে ছুটিতে ছিলেন। ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি দেশে ফেরেন। গত সোমবার প্রধান বিচারপতি অসুস্থতাজনিত কারণে রাষ্ট্রপতির কাছে এক মাসের ছুটি চান। ‘প্রচণ্ড চাপের মুখে’ প্রধান বিচারপতি ছুটি নিতে বাধ্য হয়েছেন বলেও গতকাল মঙ্গলবার বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা দাবি করেছেন।

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ বুধবার বলেন, ‘সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের সর্বসম্মত রায় দেওয়ার পর থেকে সর্বোচ্চ আদালত এবং তার সম্মানিত বিচারপতিগণকে সরকারপ্রধান থেকে সরকারের মন্ত্রী, সরকারি দল ও জোটের নেতাকর্মীরা অসাংবিধানিক, অযৌক্তিক ও কুৎসিত ভাষায় সমালোচনা করে চলেছেন। এমনকি জাতীয় সংসদে যে ভাষায় সর্বোচ্চ আদালত ও তার বিচারপতিগণের সমালোচনা করা হয়েছে, তা শুধু অভূতপূর্ব নয়, অস্বাভাবিকও।’

‘সর্বোচ্চ আদালতের রায় পছন্দ না হলে তা রিভিউ করার সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় না গিয়ে সরকার দেশের প্রবীণ বিচারপতিকে নজিরবিহীনভাবে ছুটি নিতে বাধ্য করার যে নোংরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, তার বিরুদ্ধে দেশের আইনজীবী সমাজের পাশাপাশি সচেতন জনগণ প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন’, যোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।

প্রধান বিচারপতির ছুটি নিয়ে যখন সারা দেশে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে, তখন মঙ্গলবার সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে এ নিয়ে কথা বলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি জানান, প্রধান বিচারপতি ক্যানসার আক্রান্ত, তাই তিনি ছুটি নিয়েছেন।

আনিসুল হক বলেন, ‘যারা প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে গণতন্ত্র ব্যাহত করার ষড়যন্ত্রের জাল বুনছিল, তারাই তাঁর ছুটিতে যাওয়ার বিষয় নিয়ে চিৎকার করছে। তাদের ষড়যন্ত্র ব্যাহত হয়েছে। মানুষ অসুস্থ হতে পারেন না? এমন তো কোনো কথা নেই। যেকোনো মানুষ যেকোনো সময় অসুস্থ হতে পারে।’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল প্রশ্ন তোলেন, ‘প্রধান বিচারপতি মাত্র কদিন আগে জাপান ও কানাডা সফর করে এসেছেন। এসব দেশে উন্নত চিকিৎসা থাকা সত্ত্বেও তিনি সেখানে কোনো চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন বলে দেশবাসী জানে না।’

আজ বেলা ১১টায় বিএন‌পির নয়াপল্ট‌নের কেন্দ্রীয় কার্যাল‌য়ে এক সংবাদ স‌ম্মেল‌নে লিখিত বক্তব্যে এসব ব‌লেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সংবাদ স‌ম্মেল‌নে আরো উপ‌স্থিত ছি‌লেন জাতীয় স্থায়ী ক‌মি‌টির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, বিএন‌পির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাস‌চিব রুহুল ক‌বির রিজভী আহ‌মেদ, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু প্রমুখ।

এ সময় বিএন‌পি মহাস‌চিব বর্তমান সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনী প্রহসনের মাধ্যমে অনুগত বিরোধী দল সাজিয়ে প্রকৃতপক্ষে একদলীয় সরকার কায়েম করেছে। প্রশাসন ও নিম্ন আদালতকে কুক্ষিগত করেছে। অবাধে রাজনৈতিক তৎপরতা চালানো এবং স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার প্রতিনিয়ত বাধাগ্রস্ত করছে। গুম, খুন, মিথ্যা মামলা দিয়ে বিরোধী মতের জনগণের জন্য স্বাভাবিক রাজনৈতিক তৎপরতা চালানো অসম্ভব করে তুলেছে।’

মির্জা ফখরুল আরো ব‌লেন, ভোট ও ভোটারবিহীন এক নির্বাচনী প্রহসনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসীন বর্তমান সরকারি দল আওয়ামী লীগ ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি কয়েক মিনিটের মধ্যে বহুদলীয় সংসদীয় গণতন্ত্রকে হত্যা করে একদলীয় স্বৈরশাসন বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল।

‘স্বাধীনভাবে রাজনৈতিক বিশ্বাস লালন করার জন্য অন্য কোনো দল গঠনের অধিকার থেকে জনগণকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছিল। এমনকি বিচার বিভাগকে প্রশাসনের অধীন করা হয়েছিল। উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগ ও বরখাস্তের ক্ষমতা ছিল প্রশাসনের প্রধান রাষ্ট্রপতির হাতে। আজ আবার সেই রাজনৈতিক দলটিই কৌশলে ক্ষমতা দখল করে সুকৌশলে বাকশাল কায়েমের অপচেষ্টায় রত হয়েছে’, যোগ করেন ফখরুল।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, ০৪ অক্টোবর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসএফ