ঢাকা-৫ আসনে যে তিন কারনে সালাহ উদ্দিনকে বেছে নিল বিএনপি

মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সহসভাপতি নবী উল্লাহ নবী ধরেই নিয়েছিলেন যে ঢাকা-৫ আসনের উপনির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাচ্ছেন তিনি। তাই ঢিলেঢালা নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছিলেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখান থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা এই নেতা, কিন্তু রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই—প্রবাদপ্রতিম কথাটি যেন আরেক দফায় ফলল। এ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমেদ।

প্রার্থী ঘোষণার আগমুহূর্তেও নবী বলেছিলেন, উড়ে এসে জুড়ে বসলেই কি মনোনয়ন মেলে? আরো চারজন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীক চাইছেন, এ বিষয়টি খুব একটা আমলে নেননি তিনি। শেষ পর্যন্ত রাজধানী দক্ষিণের প্রবেশদ্বার খ্যাত এই আসনের জন্য যোগ্যতার বিচারে পেছনে পড়ে গেলেন নবী। মনোনয়ন পাওয়া সালাহ উদ্দিন ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে তিন দফায় এই আসন থেকে দলের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা বলছেন, মূলত তিন কারণে মনোনয়ন পেয়েছেন অবিভক্ত ঢাকা মহানগরের একসময়ের সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই নেতারা জানান, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দিকনির্দেশনা, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাঠে সালাহ উদ্দিনের লড়াকু মনোভাবের পরিচয় আর দলীয় গোপন জরিপে প্রথম কাতারে তাঁর উপস্থিতি। তাই প্রার্থী নির্বাচন করতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি দলকে।

জানতে চাইলে বিএনপির পার্লামেন্টারি বোর্ডের মেম্বার ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, পার্লামেন্টারি বোর্ডের সব মেম্বার যাঁকে যোগ্য মনে করেছেন তাঁকেই মনোনয়ন দিয়েছেন। আগে এই আসনে কে মনোনয়ন পেয়েছিলেন, এখন নতুন একজনকে কেন মনোনয়ন দেওয়া হলো, সেটি বিবেচ্য নয়। বোর্ড সব কিছু বিচার-বিশ্লেষণ করেই প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলের পক্ষ থেকে প্রার্থী চূড়ান্ত করার আগে একটি গোপন জরিপ করা হয়। সেখানে দেখা যায়, স্থানীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে প্রায় সবাই সালাহ উদ্দিনকে চাইছেন। তিনি তিনবার এই আসন থেকেই নির্বাচন করেছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অন্য আসনে (ঢাকা-৪) নির্বাচন করলেও এখানকার নেতাকর্মীদের সুখে-দুঃখে তিনি ছিলেন আগের মতোই। এ ছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনী মাঠে ঢাকার সক্রিয় প্রার্থীদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। নির্বাচনের দিন প্রার্থীদের মধ্যে একমাত্র তিনি ভোট জালিয়াতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে মারধরের শিকার হন। হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় তাঁকে। তাঁর লড়াকু এ মনোভাব তখন দল থেকে প্রশংসিত হয়।

তবে এই আসনে সালাহ উদ্দিন ও নবী ছাড়াও বিএনপির গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ও শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, স্থানীয় বিএনপি নেতা মো. জুম্মন মিয়া ও আকবর হোসেন নান্টু মনোনয়ন চেয়েছিলেন।

মনোনয়ন বোর্ডে থাকা বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা জানান, কথিত রয়েছে, নবী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অনুসারী। তাই তাঁর মনোনয়ন নিশ্চিত বলেই হয়তো ধরে নিয়েছিলেন তিনি। মনোনয়ন বোর্ডেও নবীর পক্ষে সুপারিশ এসেছিল বলে জানান ওই নেতা। যদিও সেখানে মহানগরকেন্দ্রিক এক নেতা মনোনয়ন বোর্ডে দেওয়া সাক্ষাত্কারের সময় জানান, যিনি মাঠে থাকতে পারবেন, জনগণের কাছে যাঁর গ্রহণযোগ্যতা বেশি, দলের প্রতি অনুগত এমন প্রার্থীকে দলের চেয়ারপারসন বিশেষ বিবেচনায় নিতে বলেছেন। মূলত তাঁর ওই বক্তব্যের পরই নবীর বিকল্প ভাবা হয়। এ ছাড়া এক-এগারোর সময় বিএনপির সংস্কারপন্থীদের পক্ষে কাজ করেন নবী। তখন কেন্দ্রীয় কার্যালয় তালা মেরে বন্ধ করে দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকায় ছিলেন তিনি। সেটিও এখানে বিবেচনায় নেওয়া হয়।

জানতে চাইলে সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘যাঁরা মনোনয়ন চেয়েছেন তাঁরা সবাই যোগ্য। তাঁদের মধ্যে জনগণ আমাকে বেশি চায়, দলের হাইকমান্ড হয়তো সেটি মনে করেছে। তাই আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে।’ তিনি সবাইকে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে থাকতে চান বলে জানান।

মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ার পর থেকে অনেকটা আড়ালে রয়েছেন নবী। তবে মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার তিন দিন পর ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন তিনি। সেখানে তিনি বলেন, ‘বিএনপির বড় সারির অনেক নেতা সরকারি এজেন্টদের ফাঁদে এমনভাবে পা দিয়েছেন যে মনে হচ্ছে, বিএনপির এই এজেন্টদের ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কারণ একের পর এক সরকারের এজেন্ডা বিএনপিতে বাস্তবায়ন হচ্ছে। তাহলে কি এটা দেখার কেউ নেই?’

তিনি সেখানে আরো বলেন, ‘বিএনপি নেতাকর্মীদের এত পরিশ্রম, জেল-জুলুম, নির্যাতন, হত্যা, গুম, ত্যাগ বৃথা যাবে? তাহলে কি আমরা বিএনপির বিজয় দেখে যেতে পারব না? হয়তো একদিন এই সরকারি এজেন্টদের পতন হবে, একদিন বিএনপির বিজয় হবে। তত দিনে আমরা অনেকে বেঁচে না-ও থাকতে পারি।’

এর প্রতিক্রিয়ায় দলটির বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন ফেসবুকে বলেন, ‘নবী ২০১৮ সালে নির্বাচনে এই আসনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। এবার এই আসনের উপনির্বাচনে তাঁকে না দিয়ে সালাহ উদ্দিনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে দলের হয়তো অন্য কোনো হিসাব-নিকাশ আছে, কিন্তু এর ফলে আপাতদৃষ্টিতে একটা কোন্দলের ছায়াও ভর করল এই আসনে উপনির্বাচন ঘিরে।’ ঢাকা-৫ আসনের উপনির্বাচনে আগামী ১৭ অক্টোবর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।