২১ বছর বাজাতে দেয়নি ৭ মার্চের ভাষণ: হাছান মাহমুদ

আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বিএনপিকে উদ্দেশ্যে করে বলেছেন যে, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। ১৯৭৫ সালের পর ২১ বছর সেই ভাষণ বাজাতে দেয়নি আজ ।

যারা এ ভাষণকে নিষিদ্ধ করেছেন, তারাও আজ ৭ মার্চ পালন করছেন। জানি না তারা কোনো মনে দূরভিসন্ধি নিয়ে ৭ মার্চ পালন করছেন, তবে যাই হোক, ইতিহাস বিকৃত করে লাভ হয়নি। আসুন সত্য ইতিহাস মেনে নিয়ে যার যার অবস্থান থেকে রাজনীতি করি।

রোববার (৭ মার্চ) দুপুর দেড়টায় জাতীয় প্রেসক্লাব আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ: বাঙালির মুক্তির সড়ক’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপিকে ইঙ্গিত করে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, তারা ইতিহাস বিকৃত করেছেন। কিন্তু ইতিহাস বিকৃত করে লাভ হবে না।

তিনি বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে বহু কালজয়ী ভাষণ আছে, নেলসন ম্যান্ডেলা, মার্টিন লুথার কিং, আব্রাহাম লিংকন, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুসহ অনেকের কালজয়ী ভাষণ আছে, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ভাষণ এসব কালজয়ী ভাষণ থেকেও অনন্য। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ লিখিত ছিল না। বঙ্গবন্ধু কারো ভাষণ দেখে ভাষণ দেননি।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯ মিনিটে এক নাগাড়ে ভাষণ দিয়েছেন। মানুষের সঙ্গে কানেক্ট করার জন্য যে শব্দ চয়ন প্রয়োজন, সে শব্দ চয়ন করেছেন। বঙ্গবন্ধু সেই ভাষণে জাতিকে তুমি বলে সম্বোধন করেছেন, তিনি জাতিকে আপন করে নিয়েছেন বলেই তুমি বলে সম্বোধন করেন। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ হাজার হাজার বছরের ঘুমন্ত জাতিকে জাগিয়ে তুলে, নিরস্ত্র জাতিকে সশস্ত্র করে। পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক ভাষণ আছে, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ভাষণ যেভাবে মানুষকে উদ্দীপ্ত করেছে, অন্যদের ভাষণ এভাবে করেছে বলে আমার জানা নেই। আমি নেতাজির ভাষণ শুনেছি, কিছু বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সঙ্গে ওই সব ভাষণের তুলনা হয় না।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, আজকে খালি পায়ে ছেঁড়া কাপড়ে মানুষ দেখা যায় না। কুড়েঘরে থেকে আকাশ দেখা যায় না। সন্ধ্যা কিংবা দুপুরে মা আমাকে একটু বাসি ভাত দাও, এসব দৃশ্য দেখা যায় না। এসব সমস্যার সমাধান আমরা করতে পেরেছি।

তিনি বলেন, আসুন হিংসা পরিহার করে যার যার অবস্থান থেকে রাজনীতি করি। সরকারে থাকলে সমালোচনা হবে, কিন্তু গঠনমূলক সমালোচনা করি। ইতিহাস বিকৃত না করি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সাড়ে সাত কোটি বাঙালির মনের কথা। সমুদ্রের তটের একপাশে সাড়ে সাত কোটি মানুষ বাস করছে, বঙ্গবন্ধু বিচক্ষণ নেতা, তিনি দেখছেন সমুদ্রের অপর পাশে কি আছে, সেখানে স্বাধীন বাংলাদেশ। সেই স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য তিনি ভাষণে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। এ ভাষণ শুধু বাঙালির মুক্তির পথ দেখায়নি। এ ভাষণ মানব মুক্তির পথ দেখিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, বিশ্বের অনন্য ভাষণের একটি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ। আমেরিকার আব্রাহাম লিংকন ভাষণ দিয়েছিলেন আমেরিকার গৃহযুদ্ধ বন্ধের জন্য, আর বঙ্গবন্ধুর ভাষণ একটি দেশ স্বাধীন করার জন্য, সুতরাং বঙ্গবন্ধুর ভাষণ অনন্য।

তিনি বলেন, যারা এক সময় বঙ্গবন্ধুর ভাষণের বিরোধিতা করেছেন, তারা আজ নতুন ভাবে পালন করছেন। তবে, তারা সুযোগ পেলে ভবিষ্যতে আবার ইতিহাস বিকৃত করবেন।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক স্বপন সাহা।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাসসের সাবেক সিটি এডিটর অজিত কুমার সরকার।