অনুমতি পেলে যে কোনো সময় লন্ডনে নেওয়া হবে খালেদা জিয়াকে

করোনা আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসা দিতে বিদেশে নেওয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বিএনপি ও তার পরিবার। সরকারের অনুমতি পেলে যেকোনো সময় তাকে নিয়ে লন্ডনের পথে রওয়ানা করবেন তার চিকিৎসক দলের একজন সদস্য ও পরিবারের ২/১জন সদস্য।

দলীয় সূত্রে এমন তথ্য জানা গেলেও আনুষ্ঠানিকভাবে মিডিয়ায় এ বিষয়ে কেউ কথা বলতে রাজি না।

জানা গেছে, সরকারের আনুষ্ঠানিক অনুমতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশ্যে লন্ডন রওয়ানা করবেন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তা হতে পারে বৃহস্পতিবারের (৬ মে) মধ্যেই।

বিএনপি চেয়ারপারসন সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বৃহস্পতিবার যেকোনো সময় তাকে চার্টার্ড বিমানে করে সিঙ্গাপুর হয়ে লন্ডন নেওয়া হতে পারে। সঙ্গে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং পরিবারের সদস্যরাও থাকবেন। খালেদা জিয়াকে হাসপাতাল থেকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দেওয়া অ্যাম্বুলেন্সও রেডি রাখা হয়েছে।

এর আগে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেন তাঁর ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। তিনি বুধবার (৫ মে) রাত সাড়ে ৮টার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমণ্ডির বাসায় গিয়ে আবেদনপত্রটি হস্তান্তর করেন। আবেদনপত্রটি পর্যালোচনার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, তারা আবেদনপত্রটি পেয়েছেন। এ অবস্থায় অনুমতি মিললে বৃহস্পতিবারের মধ্যেই খালেদা জিয়াকে লন্ডন নেওয়া হতে পারে।

জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড সর্বশেষ অবস্থা পর্যালোচনা করে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেওয়ার সুপারিশ করে। এর পরপরই পরিবারের সদস্যরা একমত হয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এ বিষয়ে লিখিত আবেদন করেন। রাতেই আবেদন পাওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

সূত্র জানায়, চেয়ারপারসনকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যেতে পারলে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হতো। কারণ সিঙ্গাপুরের ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের মনোভাব কিছুটা নমনীয়। কিন্তু সেখানে এই মুহূর্তে বাংলাদেশিদের প্রবেশে বিধি-নিষেধ রয়েছে। একই সঙ্গে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে ১৪ দিন। এটা খালেদা জিয়ার জন্য বেশ কঠিন হবে।

অন্যদিকে লন্ডনে নিতে হলে খালেদা জিয়াকে প্রায় ১০ ঘণ্টা আকাশপথে ভ্রমণ করতে হবে। অবশ্য তাঁকে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে নেওয়া হবে। এর পরও এই দীর্ঘ ভ্রমণের ধকল তিনি সইতে পারবেন কিনা, চিকিৎসকদের মধ্যে সেই প্রশ্নও আছে। কারণ তাঁকে অক্সিজেন নিতে হচ্ছে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন গণমাধ্যমকে বলেন, সরকার রাজি হলে আধাঘণ্টার মধ্যেই সব ব্যবস্থা করা যায়। আমরা চেষ্টা করছি। অনুমতি পেলে তাকে বিদেশে পাঠাবো। করোনার পাশাপাশি তিনি পুরনো অনেক জটিল রোগে ভুগছেন। যেসব রোগের চিকিৎসা এর আগে দেশের বাইরেই করা হয়েছিল। সেজন্য তাকে বিদেশে পাঠানো জরুরি।

চিকিৎসকরা আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না বললেও বিভিন্ন সূত্র বলছে, খালেদা জিয়া করোনা পরবর্তী জটিলতায় ভুগছেন। যদিও তার চিকিৎসকরা বার বার বলছেন, খালেদা জিয়ার মধ্যে করোনার কোনো উপসর্গ নেই। তারপরও করোনা-পরবর্তী জটিলতার কারণেই তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশের অনেক রোগীর ক্ষেত্রেই এটা দেখা যায়। এগুলোকে পোস্ট কোভিড কমপ্লিকেশন বলা হয়। বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে এই জটিলতা বেশি দেখা যায়। ৭৬ বছর বয়স্ক খালেদা জিয়া ডায়বেটিস ও আর্থ্রাইটিসসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। তার কিডনির সমস্যাও রয়েছে। এ কারণে তার চিকিৎসকদের কেউ কেউ মনে করেন, করোনা-পরবর্তী পর্যায়ে যেকোনো সময় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে পারে।

গত ১০ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর প্রথমে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিলেও গত ২৭ এপ্রিল থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১০ সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড তার চিকিৎসার বিষয়টি দেখছে। বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরীক্ষা চলতে থাকার মধ্যেই হঠাৎ শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ায় গত ৩ মে তাকে সিসিইউতে নেওয়া হয়। এখনও তিনি সিসিইউতেই আছেন বলে জানান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।