রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় জনসমাগম না করার নির্দেশনা

করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনে ইতোমধ্যে জনমনে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার জন্য সচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বক্তব্যও এ রকম। সংস্থটি বলছে, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং সারাবিশ্বের গবেষকরা ওমিক্রনের বিভিন্ন দিক এখনো ভালোভাবে বুঝতে গবেষণা করছেন। সংক্রমণ বাড়ার ক্ষেত্রে ওমিক্রন দায়ী, নাকি অন্য কারণ আছে সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে গবেষণা চলছে।

সামগ্রিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও ১৫ দফা সতর্কতামূলক নির্দেশনা প্রদান করেছে। এসব নির্দেশনায় আপাতত দেশে সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় জনসমাগম নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে জনগণকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে। গত রবিবার রাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এসব নির্দেশনা প্রদান করে। অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ১৫ নির্দেশনা হচ্ছে- দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে, বতসোয়ানা, এসওয়াতিনি, লেসোথো এবং বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক সময় সময় ঘোষিত অন্যান্য আক্রান্ত দেশ থেকে আসা যাত্রীদের বন্দরগুলোতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও স্ক্রিনিং জোরদার করতে হবে। নিরুৎসাহিত করতে হবে সব ধরনের (সামাজিক/ রাজনৈতিক/ধর্মীয়/অন্যান্য) জনসমাগম। ঘরের বাইরে গেলে প্রয়োজনে প্রত্যেক ব্যক্তিকে সর্বদা সঠিকভাবে নাক-মুখ ঢেকে থাকে এমন মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। রেস্তোরাঁতে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা হবে ধারণক্ষমতার অর্ধেক বা তার কম। সব প্রকার জনসমাবেশ, পর্যটন স্থান, বিনোদন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার, সিনেমা হল/থিয়েটার হল ও সামাজিক অনুষ্ঠানে (বিয়ে, বৌভাত, জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি) ধারণক্ষমতার অর্ধেক বা তার কম সংখ্যক লোক অংশগ্রহণ করতে পারবে। মসজিদসহ সব উপাসনালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে। গণপরিবহনে নিশ্চিত করতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। আক্রান্ত দেশগুলো থেকে আসা যাত্রীদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে। সব মাদ্রাসা, প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, সহশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টারে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে। সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে সেবাগ্রহীতা, সেবা প্রদানকারী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সঠিকভাবে পরতে হবে নাক-মুখ ঢেকে থাকে এমন মাস্ক, মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে। করোনা উপসর্গ/লক্ষণযুক্ত সন্দেহজনক ও নিশ্চিত রোগীর আইসোলেশন এবং করোনা পজিটিভ রোগীর ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা অন্যদের কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। কোভিড ১৯-এর লক্ষণযুক্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে রাখা এবং নমুনা পরীক্ষার জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে সহায়তা করতে হবে। অফিসে প্রবেশ এবং অবস্থানকালীন সময়ে বাধ্যতামূলকভাবে নিশ্চিত করতে হবে মাস্ক পরা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা দাপ্তরিকভাবে নিশ্চিত করতে হবে। কোভিড-১৯ রোগ নিয়ন্ত্রণ ও হ্রাসে কমিউনিটি পর্যায়ে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সচেতনতা তৈরির জন্য চালাতে হবে মাইকিং ও প্রচার। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে মসজিদ/মন্দির/গির্জা/প্যাগোডার মাইক ব্যবহার করা যেতে পারে। সম্পৃক্ত করা যেতে পারে ওয়ার্ড কাউন্সিলর/ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যসহ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের।

এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে কোনো সংক্রমণশীল রোগের ক্ষেত্রে ভালোভাবে গবেষণা না করে জনমনে আতঙ্ক ছড়াতে পারে এমন মন্তব্য করা ঠিক নয়। এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলো সতর্কতামূলক পরামর্শ দিয়ে জনগণতে সচেতন করতে পারে। কেননা আতঙ্ক মানুষকে ভুলপথে পরিচালিত করে। অন্যদিকে সচেতনতা সঠিক সিদ্ধান্তের সহায়ক। এ প্রসঙ্গে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভায়েরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, ওমিক্রন এখন পর্যন্ত আমাদের দেশে প্রবেশ করেনি। দেশের সংক্রমণের হার সেই ইঙ্গিত দেয়। তা ছাড়া টিকাদানও নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলছে। তাই এটি নিয়ে আতিঙ্কত না হয়ে সচেতন হতে হবে। ওমিক্রন প্রতিরোধে এখনই কঠোর কোনো নিষেধাজ্ঞার দরকার নেই। তা ছাড়া একটি বা কয়েকটি দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে সংক্রমণশীল ভ্যারিয়েন্টের প্রবেশ বন্ধ করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে সতর্কতামূলকভাবে আক্রান্ত দেশ থেকে আসা সবাইকে কোয়ারেন্টিন করতে হবে। তা ছাড়া লক্ষণযুক্ত সবাইকে আনতে হবে পরীক্ষার আওতায়। তিনি বলেন, টিকা কোনো ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রেই সংক্রমণ বা মৃত্যু ঠেকাতে পারে না। তবে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে এবং একই সঙ্গে মৃত্যুঝুঁকি কমায়। তাই আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।