ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত ছয় মাসে কোনো সংস্কার করতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।
রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজবাড়ী শহরের আজাদী ময়দানে জেলা বিএনপি আয়োজিত জনসভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।
শামা ওবায়েদ বলেন, ‘আজকে শেখ হাসিনা পালানোর ছয় মাস পরেও কেন বিএনপিকে জেলায় জেলায় সমাবেশ করতে হচ্ছে? হাসিনা পালিয়ে গেছে, কিন্তু জিনিসের দাম কমেনি। হাসিনা পালিয়েছে, আপনারা সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেননি, দুর্নীতি বন্ধ করতে পারেননি। হাসিনা পালিয়েছে, কিন্তু এখনও নারীরা ধর্ষিত হচ্ছে, এখনও ডাকাতি হচ্ছে, এখনও খুন হচ্ছে। ইউনূস সাহেব আপনি ছয়-সাত মাসে কোনো সংস্কার করতে পারেননি।’
তিনি বলেন, ‘আজকে যদি দুর্নীতি বন্ধ করতে হয়, যদি অর্থনীতির উন্নয়ন করতে হয়, যদি ব্যাংকিং খাত ঠিক করতে হয়, যদি আমাদের তরুণ প্রজন্মের নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হয় তাহলে দেশনায়ক তারেক রহমানের ৩১ দফা সারাবাংলাদেশে প্রণয়ন করতে হবে।’
শামা ওবায়েদ বলেন, ‘তারেক রহমান সেই নেতা; যদি আগামীকাল বাংলাদেশে সুষ্ঠু ভোট হয় তাহলে বিএনপি সরকার গঠন করবে, তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হবেন এটা আমরা জানি। এটা জানা সত্ত্বেও তারেক রহমান এমন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান যে উনি নিজে ৩১ দফায় লিখেছেন যে, একজন ব্যক্তি দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না। কারণ ক্ষমতার লোভে জিয়া পরিবার রাজনীতি করে না। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯ দফা দিয়ে গেছেন। উনি রাষ্ট্রকে-দেশকে উন্নয়নের জন্য ভীত স্থাপন করে দিয়ে গেছেন, যেটিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্বৈারাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলেন, যেভাবে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলেন। সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলেছেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান।’
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, ‘আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রামে আমাদের রাজপথে থাকতে হবে। কারণ একটি সুষ্ঠু ভোট গত ১৫ বছরে আমরা পাইনি। এখনও আমাদের ১৮ বছরের ছেলে-মেয়েরা ভোট দিতে পারেনি। আমরা ভোট দিতে চাই। এই সরকারের স্থানীয় নির্বাচন করার কোনো ম্যান্ডেট নেই।’
বর্তমান সরকারের উদ্দেশ্যে শামা ওবায়েদ বলেন, ‘আপনারা সংস্কারের কথা বলেন, এইটা করবো সেইটা করবো। বিএনপিইতো প্রথমে সংস্কারের কথা বলেছে। আড়াই বছর আগে ২৭ দফা দিয়েছিলেন দেশনায়ক তারেক রহমান। যেটা শেখ হাসিনা প্রচার করতে দেয়নি। এখন ৩১ দফা দিয়েছে সেই বিএনপিই। বিএনপিই প্রথম বাংলাদেশে সংস্কারের কথা বলেছে এবং বিএনপিই সংস্কার করবে। সুতরাং আপনারা অতি শিগগিরই একটি রোডম্যাপ দিবেন। আগামী দিনে আমাদের ১৭ কোটি মানুষ যাতে একটি সুন্দর ভোট দেখতে পারে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যেন বাংলাদেশ ফিরে আসে সে ব্যবস্থা আপনারা করবেন বলে আমরা আশা রাখি।’
জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও রাজবাড়ী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও রাজবাড়ী জেলা বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আসলাম মিয়া, রাজবাড়ী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট কামরুল আলম ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর-রশিদ-হারুন বক্তব্য দেন।
জনসভায় সভাপতিত্ব করেন রাজবাড়ী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট লিয়াকত আলী এবং সঞ্চালনা করেন যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল করিম পিন্টু ও আকমল হোসেন।
নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় রাখা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা ও ফ্যাসিবাদের ষড়যন্ত্র মোকাবেলার দাবিতে কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী এ জনসভার আয়োজন করে রাজবাড়ী জেলা বিএনপি।