আরো একটি লড়াই হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে: জামায়াত আমির

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী যদি দেশের সেবা করার সুযোগ পায়, তাহলে তারা মালিক হবে না, সেবক হবে। তিনি বলেন, ‘আগামীর বাংলাদেশে আরেকটি লড়াই হবে, ইনশাআল্লাহ। একটি লড়াই হয়েছে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, আরেকটি লড়াই হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে-দুর্নীতির মূল উৎপাটনের জন্য। তারুণ্য ও যৌবনের শক্তিকে একত্রিত করে সেই লড়াইয়ে আমরা বিজয় লাভ করব।’

গতকাল শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সাত দফা দাবিতে জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সকাল সাড়ে ৯টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমাবেশের প্রথম পর্ব শুরু হয়। এরপর দুপুর ২টায় কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে মূল কার্যক্রম শুরু হয়। এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টায় সমাবেশস্থলে পৌঁছান দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান।

জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, ‘গত ১৫ বছরের কঠিন অন্ধকার যুগের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে যাঁরা তিলে তিলে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন, নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ দিয়েছেন, যাঁরা লড়াই করে আহত হয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, আমরা তাঁদের কাছে গভীরভাবে ঋণী। জামায়াতের অস্তিত্ব যত দিন থাকবে, আমরা সেই ঋণ শোধ করার চেষ্টা করব। আল্লাহ আমাদের সেই শক্তি দিন।’

সমাবেশে উপস্থিত লাখো জনতার উদ্দেশে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আবু সাঈদরা বুক পেতে না দাঁড়ালে, এ জাতির মুক্তির জন্য যদি বুকে গুলি লুফে না নিতেন, তাহলে হয়তো আজকের এই বাংলাদেশটা আমরা দেখতাম না। এরই মধ্যে হয়তো আরো অনেক মানুষের জীবন ফ্যাসিবাদীদের হাতে চলে যেত। চব্বিশে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধটা যদি না হতো, তাহলে আজ যাঁরা বিভিন্ন ধরনের কথা এবং দাবিদাওয়া পেশ করছেন, তাঁরা তখন কোথায় থাকতেন?’

জাতীয় ঐক্যের আহবান জানিয়ে জামায়াত আমির বলেন, ‘আসুন, যাঁদের ত্যাগে এই নিয়ামত পেয়েছি, তাঁদের যেন অবজ্ঞা না করি, অবহেলা না করি। যেন শিশু বা তুচ্ছ বলে তাঁদের উপেক্ষা না করি। অহংকার করে যেন অন্য দলকে তাচ্ছিল্য না করি। অরাজনৈতিক ভাষায় কথা না বলি। এগুলো যদি আমরা না পারি, তাহলে বুঝতে হবে, ফ্যাসিবাদের রূপ আমাদের ভেতরেই বাসা বেঁধেছে। আমরা আশা করব, কেউ এসব করবেন না। রাজনৈতিক শিষ্টাচার রক্ষা করে জাতীয় ঐক্যের বীজতলা একসঙ্গে গড়ে তুলতে হবে।’

জামায়াত দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়বে জানিয়ে জামায়াত আমির বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী যদি দেশের সেবা করার সুযোগ পায়, তাহলে আমরা মালিক হব না, সেবক হব। আমি ঘোষণা দিচ্ছি, জামায়াতে ইসলামী যদি আগামী দিনে সরকার গঠন করে তাহলে কোনো এমপি ও মন্ত্রী আগামী দিনে সরকারি প্লট গ্রহণ করবে না। কোনো এমপি বা মন্ত্রী ট্যাক্সবিহীন কোনো গাড়িতে চড়বেন না। তাঁরা নিজেদের হাতে কোনো টাকা চালাচালি করবেন না।’

তিনি আরো বলেন, ‘কোনো এমপি বা মন্ত্রী যদি তাঁর নির্দিষ্ট কোনো কাজের জন্য বরাদ্দ পেয়ে থাকেন, কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের ১৮ কোটি মানুষের কাছে তাঁরা তাঁর প্রতিবেদন তুলে ধরতে বাধ্য হবেন। চাঁদা আমরা নিব না, দুর্নীতি আমরা করব না। চাঁদা আমরা নিতে দেব না, দুর্নীতি আমরা সহ্য করব না।’

জাতির প্রতিটি স্তরের মানুষের পক্ষ থেকে কথা বলার দায়বদ্ধতা অনুভব করে তিনি বলেন, ‘আমি শিশুদের বন্ধু, যুবকদের ভাই, বয়স্কদের সহযোদ্ধা, বোনদের ভাই। তাদের মুক্তির জন্য দায়িত্ব নিয়ে আমি এখানে দাঁড়িয়েছি। আমি বলতে চাই, বাংলাদেশ নির্দিষ্ট কোনো শ্রেণির নয়, আমাদের লড়াই সব মানুষের মুক্তির জন্য। রাস্তার পরিচ্ছন্নতাকর্মী, চা-বাগানের শ্রমিক, রিকশাচালক, মাঠের কৃষক—আমি তাদের পক্ষেই কথা বলতে এসেছি। আমি অভিজাত শ্রেণির প্রতিনিধি হয়ে কথা বলতে আসিনি।’

জামায়াত আমির বলেন, ‘আজীবন রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেছি। জেল-জুলুমের পরোয়া করিনি। আফসোস, ২০২৪ সালে জাতিকে মুক্তি দিতে গিয়ে যাঁরা জীবন দিয়েছেন, শহীদ হয়েছেন, আমি তাঁদের একজন হতে পারলাম না। আপনাদের কাছে দোয়া চাই, ইনসাফভিত্তিক একটি দেশ গড়ে তোলার জন্য আগামী দিনে যে লড়াই হবে, আমার আল্লাহ যেন সেই লড়াইয়ে আমাকে একজন শহীদ হিসেবে কবুল করেন।’

তিনি বলেন, ‘২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু করে শাপলা গণহত্যা, সারা দেশব্যাপী গণহত্যা, পিলখানার গণহত্যা, ২০২৪-এর গণহত্যা যারা করেছে, তাদের সবার বিচার বাংলার মাটিতে নিশ্চিত করতে হবে।’

নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহবান জানিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘এদের বিচারের দৃশ্যমান প্রক্রিয়া শুরু না হওয়া পর্যন্ত পুরনো ব্যবস্থাপত্রে বাংলাদেশ আর চলবে না। এত মানুষ এমনি এমনি জীবন দেননি। যদি সেই পুরনো পচা ব্যবস্থা টিকে থাকে, তাহলে তাঁরা কেন জীবন দিলেন? যাঁরা ওই ব্যবস্থায় বাংলাদেশকে আবার গড়তে চান, তাঁদের বলি, জুলাইয়ে যুদ্ধ করে যাঁরা জীবন দিয়েছেন, শক্তি থাকলে তাঁদের জীবন ফেরত দিন।’

Scroll to Top