মালয়েশিয়ায় বিয়ে করে নারীদের শোষণ করছেন বিদেশিরা

মালয়েশিয়ার তেরেঙ্গানু রাজ্যে জালিয়াতির মাধ্যমে বিয়ে করে স্থানীয় নারীদের শোষণ করছেন বিদেশিরা। এ ঘটনায় রাজ্যের নাগরিকদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। ইমিগ্রেশন বিভাগ বলছে, বিদেশি পুরুষরা ইচ্ছাকৃতভাবে বয়স্ক ব্যক্তিসহ স্থানীয় নারীদের লক্ষ্য করে এবং বিয়ে করে, শুধুমাত্র তাদের ব্যক্তিগত লাভের আশায়।

গত সোমবার (১ এপ্রিল) রাজ্যের ইমিগ্রেশন পরিচালক আজহার আবদ হামিদ এক বিবৃতিতে বলেছেন, বিদেশিদের প্রায়শই সরকারি সুযোগ-সুবিধা এবং ব্যবসায়িক লাইসেন্স পাওয়ার জন্য স্থানীয় নারীদের বিয়ে করে থাকে। বিয়ের পরে দায়িত্বে অবহেলা করে এবং তাদের স্ত্রীদের নামে কাঙ্ক্ষিত সুবিধা পাওয়ার পরে আলাদাভাবে বসবাস করে।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে, তেরেঙ্গানুতে স্থানীয় নারী এবং বিদেশিদের মধ্যে ৬১টি নতুন বিবাহ নিবন্ধিত হয়েছে এবং ১৯২ দম্পতি তাদের সামাজিক ভিজিট পাস নবায়ন করেছে।

আজহার বলেন, ২০২২ সালে মালয়েশিয়ান দম্পতিদের পাসপোর্টে মেয়াদ বাড়ানোর জন্য ১ হাজার ৯৫টি আবেদনসহ মোট ২৪৩টি নতুন বিয়ের রেকর্ড করা হয়। ২০২৩ সালে বিদেশিদের সঙ্গে মোট ৯২৫টি বিবাহ রেকর্ড করা হয়েছিল, যার মধ্যে ৭৩টি নতুন বিয়ে এবং বিদ্যমান দম্পতিদের জন্য ৮৫২টি পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন ইমিগ্রেশনে রয়েছে।

এদিকে ২০২৩ সালের ৪ নভেম্বর, মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশনের মহাপরিচালক রুসলিন জুসোহ বলেন, বিদেশি শ্রমিকরা মালয়েশিয়ান মেয়েদের বিয়ে করলে বিতাড়িত করা হবে। মালয়েশিয়ায় পিএলকেএসধারী (অস্থায়ী ওয়ার্ক পারমিট) বিদেশি কর্মীদের স্থানীয় নাগরিকদের (মেয়েদের) বিয়ে করা ইমিগ্রেশন আইনে নিষিদ্ধ।

এ আইন মেনে চলতে ব্যর্থ হলে তাদের ওয়ার্ক পারমিট স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে এবং ইমিগ্রেশন অ্যাক্ট ১৯৫৬/৬৩ (অ্যাক্ট ১৫৫) অনুযায়ী দেশ থেকে বিতাড়ন করা হবে।

তিনি বলেন, দেশের ইমিগ্রেশন আইন ভঙ্গ করে স্থানীয় নারী পিএলকেএসধারী (শ্রমিক ভিসা) কোনো বিদেশিকে বিয়ে করলে পরিত্যক্ত হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। দেখা গেছে, বিদেশি কর্মীরা বিয়ে করে এবং একটা সময়ে মালয়েশিয়ায় স্ত্রী-সন্তানদের রেখে নিজ দেশে ফিরে যান। তখন এ স্ত্রী-সন্তান পরিত্যক্ত হয়ে যায়। এনজি ও তথ্যমতে- এ কারণে মালয়েশিয়ায় সিঙ্গেল মাদারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে; যা সামাজিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত।

পিএলকেএস হলো মালয়েশিয়ায় বৈধভাবে কাজ করতে বিদেশি শ্রমিকদের একটি ওয়ার্ক পারমিট; যা সরকার নির্ধারিত এক থেকে ১০ বছরের জন্য সাতটি সেক্টরে দেওয়া হয়।

মুসলিম দম্পতির বিবাহ বৈধ হবে যদি বিবাহের আইনি প্রয়োজনীয়তাগুলো পূরণ করে এবং বিবাহবিচ্ছেদ শুধুমাত্র তখনই ঘটতে পারে যদি তালাকের আবেদনটি শরিয়াহ আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়।

অমুসলিম দম্পতিরাও একই ঝুঁকির সম্মুখীন হয়। তবে সিভিল হাইকোর্টের মাধ্যমে বিবাহ নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। পিএলকেএস ধারক যারা মালয়েশিয়ায় বসবাসকারী বা কর্মরত বিদেশি বিয়ে করতে চান তাদের আবেদন নিজ নিজ দূতাবাসে পাঠাতে হবে।

ইমিগ্রেশনের মহাপরিচালক দাতুক রুসলিন জুসোহ বলেন, তার ডিপার্টমেন্ট স্থানীয় এবং বিদেশিদের, বিশেষ করে পিএলকেএস ধারকদের বিবাহের বিষয়ে রাজ্যের ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলেচনা করবে।

মহাপরিচালক বলেন, অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় এবং বিদেশি বিশেষ করে পিএলকেএস হোল্ডারদের বিয়ে সংক্রান্ত ইমিগ্রেশনের কঠোর শর্ত ও বিধিবিধান মেনে চলতে উপেক্ষা করা হয়।

২০২৩ সালে, বেরিতা হারিয়ানে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশি পুরুষরা, বিশেষ করে পাকিস্তানিরা এদেশে থাকা এবং ব্যবসা করার জন্য আইনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে স্থানীয় মালয় নারীদের বিয়ে করেন। পাকিস্তানিরা অধিকাংশ বয়স্ক মালয় নারীদের বিয়ে করেন। একটি বিষয় লক্ষ্য করা গেছে একজন পাকিস্তানি বয়স্ক মালয়েশিয়ান নারীকে বিবাহ করেছেন এবং তিনি স্ত্রীর নামে ব্যবসা করছেন।

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে বেরিতা হারিয়ানের আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় নারীদের বিয়ে করা পাকিস্তানি পুরুষদের দ্বারা ব্যবহৃত কৌশলগুলোর মধ্যে একটি হলো ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য শহর এবং উপকণ্ঠে অবস্থান করে। যেখানে কর্তৃপক্ষ খুব কমই নজরদারি করে।

আরেকটি কৌশল, তারা স্থানীয় নাগরিকের নাম ব্যবহার করে বা ব্যবসার লাইসেন্সে নাম পরিবর্তন না করে নির্দিষ্ট ভাড়া পরিশোধ করে একজন স্থানীয় বাসিন্দার মালিকানাধীন একটি বিদ্যমান ব্যবসা দখল করে নেয়।

প্রকৃতপক্ষে, স্থানীয় নারী অভিবাসন আইনে নির্ধারিত বিয়ের শর্ত এবং পদ্ধতিগুলো মেনে বিদেশি কর্মীদের যদি বিয়ে না করে তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ অভিবাসীদের আশ্রয় দেওয়া অপরাধে আইনের আওতায় আনা হবে।