সরকার ঘোষিত লকডাউনেও সচল রাজশাহী

সরকার ঘোষিত লকডাউনেও সচল রয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী মহানগরী রাজশাহী। লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে সড়কে যানবাহন চলাচল আরও বেড়েছে। এছাড়া হাট ও বাজার, দোকান ও মার্কেট সর্বত্রই জনসমাগম বেড়েছে। আর প্রথম দিনের ঘোষণার পর মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) থেকে আরডিএ মার্কেটের ব্যবসায়ীরাও তাদের দোকান খুলে ব্যবসা করছেন। এছাড়া মার্কেটের সামনের ব্যবসায়ীরাও আগের মতো বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। এসব ব্যবসায়ীদের দাবি তারা শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করেই তাদের দোকানপাট খোলা রেখেছেন।

আজ মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) সকালে রাজশাহী মহানগরীর সাহেব বাজার আরডিএ মার্কেটে গিয়ে দেখা গেছে প্রায় সব দোকানই খোলা। ব্যবসায়ীরা লকডাউন মানছেন না। তবে প্রতিটি দোকানের সামনের অংশে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা হয়েছে। এছাড়া রাখা হয়েছে জীবাণুনাশক স্প্রেও। আর ব্যবসায়ীরা এখন মুখে মাস্ক পড়ে ব্যবসা করছেন। যদিও দোকান খোলা থাকলেও ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল কম।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, অনেক ক্রেতাই জানেন না যে দোকান খোলা আছে। তাই ক্রেতা কম। জানাজানি হলে আগের মতোই ক্রেতা থাকবে বলেও দাবি ব্যবসায়ীদের।

লকডাউন ভঙ্গ করে মার্কেটের দোকান খোলা এমন প্রশ্নে রাজধানী ফ্যাশানের শহীদুল ইসলাম বলেন, গতবছর ঠিক এমন সময় দেশে লকডাউন ছিল। এর মধ্যেই পহেলা বৈশাখ গেছে, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা গেছে। তারা ব্যবসা করতে পারেননি। ঈদের জন্য যখনই পণ্য কিনে মজুদ করেছেন ঠিক তার পরপরই লকডাউন দেওয়া হয়েছিল। এতে ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতির মুখে পড়েন। এরপর টানা একটা বছর কেটে গেছে করোনায়। এ সময়ে ব্যবসায়ীরা নিজেদের পুঁজি ভেঙে খেয়েছেন। এবছর আবার ঠিক ঈদের আগেই লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু এখন ব্যবসা করতে না পারলে তাদের পথে বসতে হবে। তাই না খেয়ে মারার চেয়ে করোনায় মৃত্যু হলেও ভালো।

এমন মন্তব্য কেবল শহীদুলের নয়, রাজশাহীর আরডিএ মার্কেটের অধিকাংশ ব্যবসায়ীরই। তারা লকডাউনে দোকান বন্ধ না রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খোলা রাখার পক্ষে। এজন্য তারা প্রশাসনের নির্দেশনা ভঙ্গ করেই দোকান খুলেছেন। কেউ বাধা দিলে তারা সড়কে নেমে আন্দোলন করবেন বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।

এর আগে সোমবার (৫ এপ্রিল) সকালে দোকান খোলার দাবিতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন রাজশাহীর আরডিএ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। এর আগের দিন রোববার (৪ এপ্রিল) স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খোলার দাবিতে সংবাদ সম্মেলনও করেন ব্যবসায়ীরা।

এদিকে লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে সড়কে কোনো গণপরিবহন দেখা যায়নি। তবে বিভিন্ন সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও অটোরিকশা চলাচল করছে। এছাড়া পণ্য পরিবহনের ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান ও পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

মহানগরীর নওদাপাড়া আমচত্বর, গোরহাঙ্গা রেলগেট, সাহেব বাজার জিরোপয়েন্ট, তালাইমারীসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ যানবাহন চলাচল সীমিত করার চেষ্টা করছে। এছাড়াও গণজমায়েত ঠেকানোরও চেষ্টা চলছে। মুখে মাস্ক ছাড়া বাইরে বের হলে তাদের সতর্ক করছে পুলিশ। পাশাপাশি সবার মধ্যে বিনামূল্যে মাস্কও বিতরণ চলছে।

কিন্তু এরপরও মহানগরীজুড়ে অনেক মানুষের চলাচলও দেখা গেছে। কেউ অফিস কেউ ব্যক্তিগত কাজে ঘর থেকে বের হয়েছেন। অনেকে আবার খাবার খেতে ও বাজার করতে বের হয়েছেন। আবার অনেকে কেবল মহানগরীর লকডাউন পরিস্থিতি দেখার জন্যই বাইরে বের হয়েছেন। যদিও করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি মোকাবিলায় রাজশাহী জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এরই মধ্যে লকডাউন ঘোষণা করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি গণবিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়েছে।