ইসলামে মেহমান বিদায় দেওয়ার শিষ্টাচার

মেহমানদারি ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিধান। সকল নবীর আদর্শ। এই গুণটির কারণে আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তৎকালীন সময়ে কাফের-মুশরিকদের কাছেও প্রশংসিত ছিলেন। ইসলামে মেহমানদারিকে উত্তম গুণ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেহমানের সম্মান করতে তাকিদ দিয়েছেন। মেহমানকে সম্মান করা একজন মুসলমানের ঈমানি কর্তব্য।

হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন মেহমানকে সম্মান করে। ইসলামিক শিষ্টাচারের অন্যতম একটি হচ্ছে মেহমানকে তার যথাযথ সম্মান করা। এ ক্ষেত্রে মেজবানের যতটুকু সামর্থ্য আছে ততটুকু উজাড় করে মেহমানকে সম্মান করা।

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেছেন, যে লোক আল্লাহ ও শেষ দিনে ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।

আর যে লোক আল্লাহ ও শেষ দিনে ঈমান রাখে, সে যেন মেহমানের সম্মান করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনে ঈমান রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে, নতুবা চুপ থাকে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬১৩৬)

আর এই সম্মানের একটি অংশ হচ্ছে, বিদায় দেওয়ার প্রাক্কালে বা মেহমানকে যখন বিদায় দেওয়া হবে তাকে তার সঙ্গে হেঁটে একটু পথ এগিয়ে দেওয়া। সে যদি কোনো বাহন নিয়ে আসে তাহলে বাহন পর্যন্ত উঠিয়ে দেওয়া। এর মাধ্যমে বস্তুত মেহমানের সম্মান বৃদ্ধি হলো। তার দিল তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকবে। এবং সে আনন্দচিত্তে তার গন্তব্যে ফিরে যাবে। আমাদের অনেকেই আছেন, যারা এই সুন্নত না জানার কারণে এর ওপর আমল করেন না। সমাজের খুব সামান্য মানুষ এই শিষ্টাচারের প্রতি গুরুত্ব রাখে। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, বিদায়ের প্রাক্কালে মেহমানের সঙ্গে ঘরের দরজা পর্যন্ত এগিয়ে যাওয়া সুন্নত। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৩৫৮)

নবীজি (সাঃ) তাঁর প্রিয় সাহাবিকে কিভাবে বিদায় দিয়েছেন, তার দৃশ্য এ হাদিসে ফোটে উঠেছে। আসেম বিন হুমাইদ সাকুনি থেকে বর্ণিত, মুআজ ইবনে জাবাল (রাঃ)-কে ইয়েমেন প্রেরণ করার সময় মহানবী (সাঃ) কিছু পথ এগিয়ে দিতে এবং অসিয়ত করতে তাঁর সঙ্গে বের হলেন। মুআজ (রাঃ) ছিলেন সওয়ারিতে, আর তিনি পায়ে হেঁটে পথ চলছিলেন। অসিয়ত করে অবশেষে তিনি তাঁকে বললেন, ‘হে মুআজ, তুমি হয়তো আগামী বছর আমার দেখা পাবে না। সম্ভবত তুমি আমার মসজিদ ও কবরের পাশ দিয়ে পার হবে!’ এ কথা শুনে আল্লাহর রাসুল (সাঃ)-এর সঙ্গহারা হতে হবে জেনে উদ্বিগ্ন হয়ে মুআজ কাঁদতে লাগলেন। মুআজ (রাঃ) উঁচু আওয়াজে কাঁদতে লাগলেন, তখন নবী (সাঃ) তাকে বললেন, ‘কেঁদো না মুআজ! কারণ (এভাবে) কান্না হলো শয়তানের তরফ থেকে। ’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২২১০৭)

আবু বকর (রাঃ) যুদ্ধে প্রেরণের জন্য বাহিনীর সঙ্গে অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে গেলেন। সঙ্গে রাসুলের প্রিয় সাহাবি ওসামা ইবনে জায়েদ (রাঃ) ছিলেন। আর আবু বকর (রাঃ) পায়ে হেঁটে আর ওসামা (রাঃ) বাহনে। আর এভাবেই তিনি জায়েদ (রাঃ)-কে অনেক দূর এগিয়ে বিদায় দিলেন। (কানজুল উম্মাল)

এভাবেই প্রিয় নবী ও তাঁর সাহাবারা কাউকে বিদায় দিতেন।