আমেরিকায় হিজাব পরে বাস্কেটবল টুর্নামেন্টে খেলছেন দুই তরুণী

যুক্তরাষ্ট্রের দুই বাস্কেটবল খেলোয়াড় \’জান্নাহ আইসা\’ ও \’দিয়াবা কোনাতে\’ হিজাব পরে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ায় অনেক নারী এ বিষয়ে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। ভালো বাস্কেটবল খেলোয়াড় হওয়ার সুবাদে তারা অনেক মানুষের কাছে হিজাবকে তুলে ধরার সুযোগ পাচ্ছেন।

এনসিএএ টুর্নামেন্টের খেলায় নারী হিসেবে তারাই প্রথম হিজাব পরে খেলছেন না, তবে এই টুর্নামেন্টের বিশেষ গুরুত্বের কারণে তাদের হিজাব সবার নজর কাড়ছে। নানাভাবে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ এই প্রতিযোগিতা দেখছেন।

আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার দিয়াবা কোনাতে হিজাব পরে প্রতিযোগিতায় নিজের অংশগ্রহণ ও হিজাবধারী তরুণীদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করা প্রসঙ্গে বলেছেন, \’প্রতিনিধিত্ব সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। বাস্কেটবল খেলোয়াড়দের মধ্যে হিজাবের প্রতি আগ্রহী তরুণী নেই বললেই চলে। এখন আমাকে অনুসরণ করা মানুষগুলো আমাকে আনন্দিত করে তোলে। তারা আমার সাফল্যের দিকে তাকিয়ে আছে।\’

কোনাতে তার নিজের দেশ ফ্রান্সে হিজাব পরে মাঠে নামতে চান। কিন্তু বর্তমানে ফরাসি ফেডারেশন অফ বাস্কেটবল হিজাব পরে খেলাকে এখনও নিষিদ্ধ করে রেখেছে।

২০২০ সালে কোনাতে প্রথম হিজাব পরা শুরু করেছিলেন। তিনি বলেন, \’ফরাসি ও অলিম্পিকের আয়োজক হিসেবে স্বকীয়তা প্রকাশ করতে না পারা সত্যিই কষ্ট দেয়। আশা করি, এটা পরিবর্তন হবে।\’

আমেরিকায় আরেক হিজাবধারী বাস্কেটবল খেলোয়াড় হলেন নর্থ ক্যারোলাইনা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের জান্নাহ আইসা। তিনি কোনাতের হিজাব পরে খেলায় অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে বলেছেন: \’আমি খুব খুশি যে অন্যরাও হিজাব পরে খেলায় অংশগ্রহণ করছে।\’

তিনি আরও বলেন, \’আমি কখনই ভাবিনি যে একজন মানুষ এত বড় প্রভাব ফেলতে পারে। আমার চেয়ে কম বয়সী মেয়েরা আমার দিকে তাকিয়ে আছে।\’

এর আগে এনসিএএ-তে খেলেছেন বিলকিস আব্দুল-কাদির। তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ দিয়াবা কোনাতে। এক দশক আগে মেমফিসের হয়ে কলেজ বাস্কেটবল খেলার সময় বিলকিস প্রথম হিজাব পরে এনসিএএ-তে ইতিহাস তৈরি করেছিলেন। ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক বাস্কেটবল ফেডারেশন ‘ফিবা’ (এফআইবিএ) তাদের হিজাব নিষিদ্ধের আদেশ পাল্টাতে বাধ্য হয়েছিল এবং এর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন বিলকিস আব্দুল-কাদির।

কানেকটিকাট বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক খেলোয়াড় বাতৌলি কামারা স্পেনের এলএফ-ওয়ান লিগে প্রথম হিজাব পরিহিতাদের মধ্যে অন্যতম। আইসা ও কোনাতেকে তাদের ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করতে দেখে কামারা খুশি হয়েছেন।

কামারা বলেন, \’এই দুই মুসলিম নারী ক্রীড়াবিদ সর্বোচ্চ স্তরে প্রতিযোগিতা করছেন, এটা প্রত্যক্ষ করা সত্যিই অনুপ্রেরণা-দায়ক। এই টুর্নামেন্ট একটা গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। সেরা দলের উপর সমস্ত আলো এসে পড়েছে এবং পাশাপাশি তারা নিজেদের ধর্মবিশ্বাসকে বজায় রেখেছেন।\’ কামারা ২০১৭ সালে অলাভজনক সংস্থা উইমেন অ্যান্ড কিডস এমপাওয়ারমেন্ট প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বলেন, \’সব অর্থনৈতিক শ্রেণি, বর্ণ, জাতি ও সংস্কৃতির মেয়েদের কাছে এটা একটা জোরালো বার্তা দিচ্ছে।\’

নারীদের মধ্যে হিজাব পরার প্রতি আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে বলে নানা মাধ্যমে খবর আসছে। হিজাব কু-চরিত্রের অধিকারী পুরুষের কলুষ ও লালসাপুর্ণ লোলুপ দৃষ্টি থেকে নারীর সম্ভ্রম ও শুদ্ধতাকে সংরক্ষণ করে। হিজাব এখন শুধু নারীর ধর্মীয় পোশাকই নয়, সাংস্কৃতিক পোশাক হিসেবেও গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। অনেক নারীর মতে, হিজাব বা ইসলামি শালীন পোশাক তাদের নিরাপত্তার বড় হাতিয়ার।