ছাত্রাবাসে ধর্ষণ: নির্যাতিত নারীর কানের দুল-সোনার চেইন কেড়ে নেয় ধর্ষকরা

সিলেট শহরের টিলাগড় এলাকার মুরারী চাঁদ (এমসি) কলেজ ছাত্রাবাসে সেদিনের রোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা এসেছে নির্যাতিত নববধূর স্বামীর দায়ের করা মামলায়। ধর্ষকরা স্বামীকে মারধর করে নববধূকে প্রাইভেটকারেই গণধর্ষণ করেন।

হায়েনাদের হাত থেকে স্ত্রীকে রক্ষায় পায়ে ধরে কেঁদেও মন গলাতে পারেননি স্বামী। উপরন্তু ধর্ষণের পর নববধূর গলা থেকে সোনার চেইন ও কানের দুল ছিনিয়ে নেয়। এমনকি তার স্বামীর মানিব্যাগ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেয় এবং প্রাইভেটকার ছাড়িয়ে নিতে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। সেদিনের সন্ধ্যা রাতের আলো-আধারি খেলায় তাদের কোনো আর্তনাদই উন্মাতাল হায়েনাদের মন গলাতে পারেনি।

শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) স্ত্রীর সম্ভ্রমহানির ঘটনার পর দিন শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) নগরের শাহপরান (র.) থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে এসব উল্লেখ করেন প্রবাস ফেরত হতভাগা স্বামী।

এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন শুক্রবার আনুমানিক বিকেল ৫টায় তিনি স্ত্রীসহ প্রাইভেটকারে হযরত শাহপরাণ (র.) মাজার জিয়ারত শেষে পৌনে ৮টার দিকে এমসি কলেজের মূল ফটকের সামনে এসে পাকা রাস্তার উপর গাড়ি রেখে পাশের দোকানে যান। এসময় কয়েকজন তার স্ত্রীকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করতে থাকেন। এর প্রতিবাদ করলে আসামি সাইফুর রহমান এবং অর্জুন লস্কর তাকে চড় থাপ্পড় মারতে থাকেন। একপর্যায়ে আসামিরা স্ত্রীসহ তাকে জোর করে গাড়িতে তোলে। এসময় তারেকুল ইসলাম তারেক ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি চালায়। তাদের পেছনের সিটে বসিয়ে আসামি সাইফুর রহমান ও অর্জুন লস্কর তাদের পাশে বসে।

শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে উঠে বসে। তারা গাড়ি নিয়ে এমসি কলেজ ছাত্রাবাস প্রাঙ্গণের ৭ নম্বর ব্লকের ৫ তলা নতুন ভবনের দক্ষিণপূর্ব খালি জায়গায় দাঁড় করায়। এরপর অন্য আসামিরা মোটরসাইকেলে পেছনে পেছনে ঘটনাস্থলে আসে।

বাদী এজাহারে আরও বলেন, ছাত্রাবাস চত্বরে যাওয়ার পর তরিকুল তার মানিব্যাগ থেকে ২ হাজার টাকা নেন। শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি স্ত্রী কানের দুল ও অর্জুন লস্কর স্ত্রীর গলার সোনার চেইন কেড়ে নেয়।

পরে তার স্ত্রীকে গাড়িতে রেখে সাইফুর, তারেক রনি ও অর্জুন বাদীকে ৭ নম্বর ব্লকের পশ্চিম পাশে নিয়ে যায়। এসময় সাইফুর রহমান, তারেকুল ইসলাম, মাহবুবুর রহমান রনি ও অর্জুন লস্কর প্রাইভেটকারের ভেতরেই তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করেন। তখন স্ত্রী চিৎকার করলে বাঁচাতে চেষ্টা করেন তিনি। আসামিরা তাকে মারধর করে আটকে রাখে।

এজাহারে বলা হয়, প্রায় আধ ঘণ্টা পর তার স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে তার কাছে গেলে আসামিরা প্রাইভেটকারের দরজা লক করে রেখে স্ত্রীকে নিয়ে চলে যেতে বলে এবং প্রাইভেটকার নিতে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। তিনি স্ত্রীকে নিয়ে পায়ে হেঁটে কলেজে ছাত্রাবাসের গেটে যান। এরপর সিএনজি অটোরিকশায় টিলাগড় পয়েন্টে গিয়ে পুলিশে খবর দেন।

নির্যাতিত নারীর স্বামীর দায়ের করা মামলায় আসামিরা হলেন- সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার উমেদনগরের রফিকুল ইসলামের ছেলে তারেকুল ইসলাম তারেক (২৮), হবিগঞ্জ সদরের বাগুনীপাড়ার জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে শাহ মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), জকিগঞ্জের আটগ্রামের কানু লস্করের ছেলে অর্জুন লস্কর (২৫), দিরাই উপজেলার বড়নগদীপুর (জগদল) গ্রামের রবিউল ইসলাম (২৫) ও কানাইঘাটের গাছবাড়ি গ্রামের মাহফুজুর রহমান মাসুম (২৫)। এছাড়াও অজ্ঞাতনামা আরও তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। এসব ঘটনা নির্যাতিত নারী জবানবন্দিতে আদালতকে জানিয়েছেন।

দায়েরকৃত মামলায় এ যাবত এজাহারনামীয় ৫ জনসহ মোট ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-পুলিশ। সোমবার এ মামলায় ৩ আসামির ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

মহানগরীর শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, আমরা ঘটনাটি জানার পরপরই ছুটে এসে নির্যাতিত নারীকে উদ্ধার করি। এসময় অধ্যক্ষের অনুমতি নিয়ে ছাত্রাবাসে অভিযান চালালেও অভিযুক্তরা পালিয়ে যায়। এসময় মামলার প্রধান আসামির কক্ষ থেকে একটি পাইপগান, চারটি রামদাসহ দেশিয় অস্ত্র উদ্ধার করি। ঘটনার পর থেকেই আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলমান রয়েছে।

শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটক রেখে এক নারীকে ছাত্রলীগের ছয়জন নেতাকর্মী গণধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওই দম্পতিকে ছাত্রাবাস থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরবর্তীতে ধর্ষণের শিকার তরুণীকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি সেন্টারে ভর্তি করা হয়।

এ ঘটনায় শনিবার ভোর রাতে ৬ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ২/৩ জনকে অভিযুক্ত করে নগরের শাহপরান থানায় এ মামলা দায়ের করেন নির্যাতিত নারীর স্বামী।