সুদিনের অপেক্ষায় থাইল্যান্ডের মুসলিমরা

মুসলিমদের দাবী নিয়ে সরকারের সঙ্গে বৈঠক: দক্ষিণ থাইল্যান্ডের মুসলিম প্রতিনিধির সঙ্গে গত ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ রবিবার সে দেশের সরকার প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের মুসলিমদের দাবিগুলো জানতে সরকার এই বৈঠকের আয়োজন করে।

‘দক্ষিণ থাইল্যান্ড শান্তি আলোচনা’য় মুসলিম প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বাবা আবদুর রহমান। তিনি ‘পাতানি ইসলামিক রিলিজিয়াস কাউন্সিল’-এর চেয়ারম্যান। অন্যদিকে সরকারি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন জেনারেল ওয়ালপ রক্ষনাহ। মুসলিমরা সেখানে বেশ কিছু দাবি তুলে ধরে, যার মধ্যে আছে—মুসলিমদের জন্য শুক্রবার রাষ্ট্রীয় ছুটি ঘোষণা এবং মালয় ভাষাকে দক্ষিণ পাত্তানি, ইয়ালা, নার্তিওয়াত ও সংখলা প্রদেশের দাপ্তরিক ভাষার মর্যাদা দেওয়া।

থাইল্যান্ডের এই চার প্রদেশে সবচেয়ে বেশি মালয় মুসলিমদের বাস। এ ছাড়া তারা হজবিষয়ক অধিদপ্তর খোলা, চারটি প্রদেশের জন্য খসড়া ইসলামী আইন প্রণয়ন ও হালাল শিল্পের বিকাশে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব দেয়।

থাইল্যান্ডে মুসলিম আগমন ও সংগ্রাম : আর-রানিরি স্টেট ইসলামিক ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিষয়ক ইসলামী বিশ্লেষক তেউকু জুলখাইরি মুসলিমদের সঙ্গে থাই সরকারের এ শান্তি আলোচনার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দক্ষিণ থাই-মালয় মুসলিম সম্প্রদায়ের দীর্ঘ ও জোরালো ইতিহাস রয়েছে। তারা দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোর নতুন কোনো সম্প্রদায় নয়। কেননা এ অঞ্চলে ১৫ শতকে ইসলামের আগমন হয় এবং মুসলিমরা ‘পাতানি দারুস সালাম কিংডম’ প্রতিষ্ঠা করে। পাতানি নামের উৎস আরবি শব্দ ‘আল-ফাতানি’, যার অর্থ বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান বা বুদ্ধিজীবী। যা ইঙ্গিত করে মুসলিমদের আগমনের পর এ অঞ্চলে বহু মুসলিম পণ্ডিতের জন্ম হয়েছে।

১৭৮৫ সালে পাতানি দারুস সালাম কিংডম দখল করেন থাই শাসক সিয়াম। দখলের পর তিনি মুসলিম রাজ্যটিকে সাতটি প্রদেশে বিভক্ত করেন। থাই শাসক রাজা চুলালংকর্ন ১৯০১ সালে প্রদেশগুলোর সঙ্গে শান্তিচুক্তি ভেঙে সামরিক অভিযান শুরু করেন, যা শেষ হয় ১৯০৯ সালের অ্যাংলো-সিয়াম চুক্তির মাধ্যমে। এটা মুসলিম অধ্যুষিত দক্ষিণাঞ্চলকে থাইল্যান্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করার পথ সুগম করে।

ধর্মীয় স্বাধীনতা পাবে মুসলিমরা? : জুলখাইরি মনে করেন, থাই সরকারের পক্ষ থেকে সংখ্যালঘু মুসলিমদের জন্য নিজস্ব ভাষায় ধর্মীয় শিক্ষা ও পাঠক্রম পরিচালনার স্বাধীনতা প্রদানের অঙ্গীকার গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশির ভাগ মুসলিম দেশ থাইল্যান্ডের পাতানি মুসলিমদের অধিকার রক্ষার বিষয়টি সমর্থন করে। দক্ষিণ থাইল্যান্ডের মুসলিমরা শান্তি ও স্থিতির সঙ্গে বসবাস করতে পারলে তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে থাইল্যান্ডের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে। থাই সরকারের জন্য নিজের অঙ্গীকার রক্ষা করা একটি চ্যালেঞ্জও বটে।

‘দ্য মালয়েশিয়ান সিভিল সোসাইটি সলিডারিটি অ্যাসোসিয়েশন’-এর সদস্য মোস্তফা মানসুর, যিনি দক্ষিণ থাইল্যান্ডে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করেছেন তিনি বলেন, পাতানি মুসলিম প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে উত্থাপিত দাবিগুলো ১৯৪৮ সালে ঘোষিত জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদ দ্বারা সমর্থিত। পাতানি মুসলিমদের মত প্রকাশ, ধর্মচর্চা ও ভীতিমুক্ত জীবনযাপনের অধিকার থাকা উচিত।

সংশয় কাটেনি মুসলিমদের: পাতানি প্রদেশের অধিবাসী মারওয়ান আহমদ (২৯) আশা প্রকাশ করে বলেন, সরকার ও কর্তৃপক্ষের বৈঠক নিছক কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছিল না। তিনি বলেন, ‘বহু পাতানি জনগণ সরকার প্রতিনিধিদের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় আস্থা রাখতে পারছে না। কেননা সম্প্রতি ব্যাংককে সামরিক জান্তাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে বিক্ষোভ হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘সরকার দক্ষিণের সংঘাতকে দাঙ্গা হিসেবেই দেখে। অথচ তা ১৯০৯ সাল থেকে শুরু হয়েছে।’

উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের সংঘাতের পর থেকে মুসলিমপ্রধান পাতানি, নার্তিওয়াত ও সংখলা প্রদেশে সরকার সামরিক আইন বলবৎ করে রেখেছে। এই সময়ে কমপক্ষে সাত হাজার ৪০ জন নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তাদের মধ্যে চার হাজার ৯২৪ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।