বিশ্বজুড়ে ফরাসি পণ্য বর্জনের ডাক

সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে অবমাননার দায়ে এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরনের ইসলামবিরোধী বক্তব্যের প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে ফরাসি পণ্য-সামগ্রী বর্জনের ডাক দিয়েছে মুসলিম সম্প্রদায়।

ইসলাম অবমাননার এই ঘটনায় বিশ্বব্যাপী তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে মুসলমানদের মধ্যে। এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করছেন ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা। এসব সমাবেশ থেকে বিশ্বজুড়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি ফরাসি পণ্য বর্জনের আহ্বান জানানো হয়েছে।

যেসব ফরাসি পণ্য বাজারে প্রচলিত, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- টোটাল এলপি গ্যাস, কসমেটিকস সামগ্রী গার্নিয়ার ও লরিয়েল, সানোফির মেডিসিন পণ্য টেলফাস্ট, পেভিসন, ল্যাসিক্স, এভিল, স্টেমিটিল ও বুটাপ্যান। আরও রয়েছে মটুল ইঞ্জিন ওয়েল, সুপারক্রিট সিমেন্ট, ল্যাকোস্টে জুতা ও পারফিউম সামগ্রী, এভিয়ান মিনারেল ওয়াটার, পিউজিট ইলেকট্রিক গাড়ি, বিক কলম, গ্যাস লাইটার ও রেজর।

এছাড়াও ক্যারিফোর বহুজাতিক করপোরেশন (Carrefour Multinational Corporation) এর বিভিন্ন পণ্য, টেফাল নন-স্টিক রান্নার পাত্র ও বিভিন্ন হোম অ্যাপ্লায়েন্স, ডায়ার (Dior) প্রসাধনী এবং জুয়েলারি সামগ্রী, গেরলাইন (Guerlain) স্কিনকেয়ার এবং পারফিউম এবং লা ওয়চে কি রিট প্রসেসড পনির বাজারে প্রচলিত রয়েছে।

সেই সঙ্গে অ্যালায়েন্স ফ্রান্সাইজ ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউটেও না যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে।

এদিকে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে অবমাননা ও ইসলামবিরোধী বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তিনি বলেছেন, “বাক-স্বাধীনতা মানে এটা নয় যে ‘যার কোনও সীমা নেই’। সেই সঙ্গে কারও উচিত নয় নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের প্রতি “নির্বিচারে এবং অযথা আঘাত করা”।

জাস্টিন ট্রুডো বলেন, “আমরা সবসময় বাক-স্বাধীনতার পক্ষে। কিন্তু এটা এমন নয় যে এর কোনও সীমা নেই। অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ করা আমাদের কর্তব্য। তাছাড়া যাদের সঙ্গে আমরা এই সমাজ এবং গ্রহে একত্রে বাস করছি- তাদেরকে নির্বিচারে বা অযৌক্তিকভাবে আঘাত উচিত নয়।”

ফ্রান্সে মহানবী (সা.)-কে অবমাননা ও সেদেশের প্রেসিডেন্টের ইসলামবিরোধী মন্তব্যের সমালোচনা করেছে রাশিয়াও। দেশটির জাতীয় সংসদ ‘ক্রেমলিন’ এর মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, “ইসলামের অবমাননা করে এমন ব্যঙ্গচিত্র রাশিয়া সমর্থন করে না।”

তিনি আরও বলেন, “ইসলামের অবমাননা করে এমন গণমাধ্যমের অস্তিত্ব আমাদের দেশে থাকা একেবারেই অসম্ভব।”

এছাড়াও ইসলাম অবমাননার এই ঘটনার পর থেকেই সরাসরি আওয়াজ তুলেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। এর প্রতিবাদে তিনি তার দেশের নাগরিকসহ বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি ফরাসি পণ্য বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন।

ফ্রান্সের এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিভিন্ন আরব দেশেরও নেতারাও। প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে ইরান ও পাকিস্তানও। সেসব দেশ থেকেও ফরাসি পণ্য বর্জনের আহ্বান জানানো হয়েছে। এমনকি বিভিন্ন ফরাসি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি বাতিলের হিড়িক পড়েছে বিভিন্ন মুসলিম দেশে।

এদিকে, ফরাসি বেশ কিছু কোম্পানি বাংলাদেশে ব্যবসা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইতোমধ্যে ফ্রান্সের একটি কোম্পানি বাংলাদেশের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ব্যবসা করতে জোর তৎপরতাও চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।