মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিরুদ্ধে ‘ট্রাম্পনীতি’ আঁকড়ে ধরার অভিযোগ ইরানের

মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদায়ের পর পশ্চিম এশিয়ার দেশ ইরানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর পরমাণু চুক্তি আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাবে, এমনটাই আশা করা হচ্ছিল। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একাধিক আন্তর্জাতিক বিষয়ে ট্রাম্পের ‘একলা চলো রে’ নীতি ত্যাগ করে অন্যান্য দেশের সঙ্গে সহযোগিতা ও সমন্বয়ের কাজ শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু ইরানের প্রশ্নে এখনো কোনো অগ্রগতি ঘটছে না। বাইডেন তার নির্বাচনী প্রচারে সেই অঙ্গীকার করলেও বাস্তবে সেই কাজ মোটেই সহজ হচ্ছে না।

বিগত ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির প্রশ্নে ইরানের প্রত্যাশা স্পষ্ট। তেহেরানের দাবি, ট্রাম্প যেহেতু ২০১৮ সালে একতরফাভাবে আমেরিকাকে সেই চুক্তি থেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন, বাইডেনকে বিনা শর্তে আবার সেই চুক্তিতে ফিরে আসতে হবে। ট্রাম্প প্রশাসনের চাপানো একতরফা নিষেধাজ্ঞাও প্রত্যাহার করতে হবে। তখন ইরানও আবার চুক্তির সব শর্ত মেনে চলবে। জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন, রাশিয়া ও চীন চুক্তির বাকি স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে সেই প্রক্রিয়ায় সহায়তা করতে পারে। উল্লেখ্য, ২০১৯ সাল থেকে ইরান ঘোষিতভাবেই চুক্তির কিছু শর্ত মেনে চলছে না।

বাইডেন প্রশাসন সাফ জানিয়ে দিয়েছে, পরমাণু চুক্তিতে ফেরার বিষয়ে তেহরানের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন আছে। তবে ইরানকে রাজি করাতে ওয়াশিংটন মোটেই একতরফা কোনো ছাড় বা সদিচ্ছার প্রমাণ দেবে না। ইরান পরমাণু চুক্তির সব শর্ত পূরণ করার আগে এমন কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র। তার প্রস্তাব, আলোচনার মাধ্যমে দুই পক্ষ চুক্তির শর্ত পূরণের লক্ষ্যে পদক্ষেপ নিতে পারে৷ অর্থাৎ, ধাপে ধাপে উভয় পক্ষকে চুক্তির আওতায় ফিরতে হবে।

ইরান এখনো এমন প্রস্তাবে রাজি হয়নি। উল্টো আমেরিকার বিরুদ্ধে সমালোচনা অব্যাহত রেখেছে তেহরান। বৃহস্পতিবার সে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহামাদ জাভাদ জরিফ এক টুইট বার্তার মাধ্যমে বাইডেন প্রশাসনের সমালোচনা করেন। তার মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের ‘সর্বোচ্চ চাপ’ সৃষ্টির নীতি ব্যর্থ হয়েছিল। অথচ বাইডেন এখনও সেটি আঁকড়ে ধরে রয়েছেন। দাবি সত্ত্বেও কূটনীতির পথে ফিরছে না আমেরিকা। এমনকি দক্ষিণ কোরিয়া সুইজারল্যান্ডের মাধ্যমে ইরানকে তার প্রাপ্য অর্থ দেবার চেষ্টা করলেও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাধা সৃষ্টি করে বাহবা কুড়ানোর চেষ্টা করছেন। অথচ খাদ্য ও ওষুধপত্রের জন্য সেই অর্থ ব্যয় করার কথা।

ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করতে অন্যান্য দেশের সঙ্গে ইরানের লেনদেনের পথে অনেক বাধা সৃষ্টি করেছিল। ইরানের এক সরকারি মুখপাত্র বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে ইরানের প্রায় ৭০০ কোটি ডলার পাওনা রয়েছে। সে দেশকে পেট্রোলিয়াম বিক্রি করলেও ওয়াশিংটনের বাধার কারণে তেলের দাম হাতে পাচ্ছে না তেহরান। বাইডেন প্রশাসনও এমন লেনদেনকে রাজনৈতিক হাতিয়ার করে চলেছে বলে ইরান অভিযোগ করছে।