বাস্তুচ্যুত গাজাবাসীর যাওয়ার মতো নিরাপদ জায়গা নেই

গাজা ভূখণ্ডের বহু ফিলিস্তিনি ইসরাইলি সেনাবাহিনীর আদেশে নিজ নিজ এলাকা ছেড়ে নিরাপত্তার জন্য ওই বাহিনীর নির্দেশিত এলাকায় গিয়ে দেখতে পেয়েছে, সেখানে হাজার হাজার মানুষের থাকার মত পর্যাপ্ত জায়গা নেই। জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় দপ্তরের প্রধান জেমা কনেল কয়েক সপ্তাহ ধরে গাজায় অবস্থান করছেন।

তিনি জানিয়েছেন, ঘনবসতিপূর্ণ ছিটমহলটিতে বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের যাওয়ার মতো জায়গা বেশি নেই। জেমা জানান, গাজা ভূখণ্ডের হাজার হাজার মানুষ ইতিমধ্যে অনেকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে, তারা আবারও নতুন এলাকার খোঁজে ছুটছে আর যেখানে যাচ্ছে, তাও যে নিরাপদ হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। পুরো গাজা ভূখণ্ডকে দাবার বোর্ডের সঙ্গে তুলনা করেছেন তিনি, যেখানে মানুষকে দাবার ঘুঁটির মতো এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় তাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরায়েলকে নিরঙ্কুশ সমর্থন দিচ্ছে মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। তারাও বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে আরো পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ইসরায়েলকে কয়েক সপ্তাহ ধরে চাপ দিয়ে আসছে। গাজার ভেতরে নিরাপদ এলাকা শনাক্ত করে সেখানে লোকজন পাঠানোর জন্য মানবিক রুট পরিষ্কার করতে বলেছে তারা।

জেমা সোমবার গাজার মধ্যাঞ্চলীয় এলাকা দেইর-আল-বালাহ পরিদর্শন করার পর বলেন, লোকজন বিছানাপত্র ও তাদের সবকিছু নিয়ে ভ্যান, ট্রাক ও গাড়িতে চেপে দক্ষিণ দিকে রওনা হয়েছিল। কোথাও নিরাপদ জায়গা পাওয়া যায় কি না, তার খোঁজে ছিল তারা। তিনি বলেন, ‘আমি বহু মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। এখানে রাফায় খুব অল্প জায়গা অবশিষ্ট আছে। লোকজন কোথায় যাবে কিছুই জানে না। কোথাও না কোথাও এলাকা ছেড়ে যাওয়ার আদেশ জারি আছে। সত্যি মনে হচ্ছে, মানুষকে দাবার বোর্ডের মতো এখানে-সেখানে সরানো হচ্ছে। লোকজন এক এলাকা ছেড়ে আরেক এলাকায় পালাচ্ছে। কিন্তু সেখানেও তারা নিরাপদ নয়। দেইর-আল-বালাহতে ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত ৯ বছর বয়সি বালক আহমদের মৃত্যু নিয়ে কথা বলেছেন জেমা।

তিনি বলেন, আহমদ এমন কোনো এলাকায় ছিল না, যেখান থেকে সবাইকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সে এমন এলাকায় ছিল, যা নিরাপদ হওয়ার কথা ছিল। আসলে গাজায় কোনো নিরাপদ স্থান নেই। তিনি জানান, তিনি দেইর-আল-বালাহর আল-আকসা হাসপাতাল পরিদর্শনকালেও ঐ এলাকায় নতুন করে বিমান হামলা চালানো হয় আর আহতদের হাসপাতালে নিয়ে আসার সময় প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে তা দেখেছেন তিনি। বড়দিনের আগের রাতে গাজায় ভয়াবহ বিমান ও স্থল হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এই রাতে গাজার মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে তাদের হামলায় শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়। ১১ সপ্তাহ ধরে চলা ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের অন্যতম প্রাণঘাতী রাত ছিল এটি। এদের নিয়ে গাজায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৭০০।

Scroll to Top