ইয়েমেনে মার্কিন হামলাঃ বড় কোন যুদ্ধের পথে মধ্যপ্রাচ্য?

ফিলিস্তিনের গাজার পর এবার যুদ্ধক্ষেত্র মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ ইয়েমেন। হামাসের প্রতি সমর্থন জানিয়ে লোহিত সাগরে একের পর এক ইসরায়েল ও তার মিত্রদের বানিজ্য জাহাজে হুথি বিদ্রোহীদের আক্রমন। এমন প্রেক্ষাপটে গত সপ্তাহে ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান ও নৌ হামলা শুরু করে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুুক্তরাজ্য। এর পাল্টায় হুথির হুঁশিয়ারি, এর প্রতিশোধ হবে ভয়াবহ। ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীটি বলছে, নির্মম এই আগ্রাসনের জন্য তাদের চড়া মূল্য পরিশোধ করতে হবে। পশ্চিমাদের এই হামলার কড়া ভাষায় প্রতিবাদ জানিয়েছে রাশিয়া, ইরান, তুরস্ক, সৌদি আরবসহ বিশ্বের অনেক দেশ।

লোহিত সাগরে বানিজ্য জাহাজে হামলা ও গাজায় হামাসকে সমর্থনের কারণে শুক্রবার একযোগে বিমান ও নৌ হামলা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে তারা ইরান সমর্থিত হুথিদের ষোলটি অবস্থানে ৬০টি লক্ষ্যবস্তুতে টার্গেট করে হামলা চালিয়েছে। পেন্টাগন বলেছে এই টার্গেটের মধ্যে ছিল রাডার সিস্টেম, ড্রোন স্টোরেজ এবং উৎক্ষেপণ কেন্দ্র, ক্ষেপণাস্ত্র মজুদ রাখার জায়গা ও উৎক্ষেপণ এলাকা এবং হুথি কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার। মার্কিণ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দাবি তাদের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক বানিজ্য প্রবাহকে সুরক্ষা দেবে। যদিও এই হামলার পর বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে গেছে ৪ শতাংশ।

এই হামলার ঘটনায় এরই মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে বিশ্বে। নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া ও লেবানন এই হামলার পক্ষে অবস্থান নিলেও, ইরান, সৌদি আরব, রাশিয়া, তুরস্ক, জর্ডান, সিরিয়া ও মিশর। ইরান বলছে ইয়েমেনে হামলা পরিস্কারভাবে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং দেশটির সার্বভৌমত্বের ওপর আক্রমন। আর রাশিয়া বলছে এই আগ্রাসন অবৈধ।

হুথি বিদ্রোহীদের মিত্র লেবাননের সশস্ত্র গ্রæপ হিজবুল্লাহ বলছে ইয়েমেনের ওপর আগ্রাসন এটাই প্রমান করে যে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের যেকোনো আগ্রাসনের সমর্থক। আর হামাস বলছে এই হামলার জন্য মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়লে এর জন্য দায়ি হবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। হুথিদের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা হলেও ইরান সমর্থিত ইয়েমেনের এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা এবং গাজায় হামাসকে সমর্থন অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। ইয়েমেনেও বিভিন্ন শহরে হামলার প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছে দেশটির জনগন।

এদিকে শুক্রবারের হামলার পর শনিবার হুথি নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনের রাজধানী সানায় হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেন। এই হামলায় টমাহক ক্রুজ ক্ষেপনাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলো। লোহিত সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ জাহাজ থেকে এই মিসাইল হামলা চালানো হয়েছে।

যৌথ বিমান হামলার পর যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্রান্ট শ্যাপস ইরানের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন দেশটি যেন তার সহযোগীদের ক্ষান্ত হতে বলে। ডেইলি টেলিগ্রাফকে দেয়া সাক্ষাতকারে শ্যাপস বলেন বিশ্ব তেহরানের ওপর ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলেছে। ইয়েমেনে হুথি, লেবাননে হেজবুল্লাহ, ইরাক ও সিরিয়ায় যারাই আপনাদের হয়ে প্রক্সি দিচ্ছে এসব সংগঠনকে অবশ্যই আপনাদের থামাতে হবে। এখন দেখার বিষয়, ইরান পশ্চিমাদের এই হুমকিকে কীভাবে নেয়? তারা কী কুটনৈতিক ভাষায় এর জবাব দেবে নাকি জবাব দেবে পাল্টা কোন হামলার মাধ্যমে। আর এর মাধ্যমেই বুঝা যাবে গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধ আরও বিস্তৃত হয়ে আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নেয় কী না।

Scroll to Top