গত শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার আরামবাগ থেকে লোকসভার নির্বাচনে প্রচারণা শুরু করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর শুরুতেই তৃণমূল কংগ্রেসের সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, নারীদের ওপর অত্যাচার, গরিব মানুষদের রুপি লুটের অভিযোগ তুলে এই সরকারকে উৎখাতের ডাক দিলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বললেন \’আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ৪২টা আসনেই যাতে পদ্মফুল ফোটে।\’
তৃণমূলের মুসলিম ভোট ব্যাংকের প্রসঙ্গ টেনে মোদি এও বলেন, তৃণমূলের অহংকার ওদের পাশে একটা নিশ্চিত ভোট ব্যাংক আছে। কিন্তু এবার এই অহংকার ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে। এবার মুসলিম মা, বোনেরা তৃণমূলের গুন্ডারাজকে উপরে ফেলার জন্য আগে এগিয়ে আসবে। ওদের পরাজয়ের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে যাবে।
এদিনের মঞ্চ থেকে মোদি স্লোগান দেন \’এইবার\’ জবাবে দর্শকদের কাছ থেকে উত্তর আসে \’৪০০ পার\’।
এদিন মঞ্চে প্রায় আধ ঘণ্টা বক্তব্য রাখেন মোদি, যার মধ্যে বেশিরভাগটাই ছিল সন্দেশখালি প্রসঙ্গ। গত প্রায় দুই মাস ধরে সেখানে জোর করে জমি দখল, নারীদের উপর অত্যাচার, নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। মোদী বলেন \’মা-মাটি-মানুষের ঢোল পেটানো তৃণমূল সরকার সন্দেশখালির মা, বোনেদের সাথে যা করেছে, তা দেখে গোটা দেশ দুঃখ পেয়েছে, ক্ষুব্ধ হয়েছে। রাজা রামমোহন রায়ের আত্মা যেখানেই থাকুক না কেন, এই জিনিস দেখলে তার আত্মাও কেঁদে উঠতো।\’
তিনি আরও বলেন, তৃণমূলের নেতারা মা, বোনেদের সাথে যা করেছে তা সব সীমা পার করেছে। অবশেষে বিজেপি নেতাদের আন্দোলনের ফলে অভিযুক্তকে (শাহজাহান শেখ) আটক করতে বাধ্য হয়েছে।
মমতাকে নিশানা করেই মোদির স্পষ্ট বক্তব্য \’দুই মাস ধরে শাহজাহান পলাতক ছিলো, কেউ তো আছে যারা ওকে রক্ষা করছে। এরকম তৃণমূলকে ক্ষমা করবেন?\’
মোদির অভিমত \’সন্দেশখালির অত্যাচারিত নারীদের থেকেও কয়েকটা মানুষের ভোট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেল, তৃণমূলের কাছে।\’
বিজেপি বিরোধী \’ইন্ডিয়া\’ জোটকে তোপ দেগে প্রধানমন্ত্রী বলেন \’জোটের নেতারা এখন সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে চোখ, কান, মুখ সব ঢেকে রেখেছে। তারা পাটনা বেঙ্গালুরু, মুম্বাইতে বৈঠক করছে অথচ মুখ্যমন্ত্রী মমতার কাছে উত্তর চাওয়ার হিম্মত নেই বাম এবং কংগ্রেসের।\’
মোদি বলেন \’দুর্নীতি ও অপরাধের মডেল তৈরি হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। শিক্ষক নিয়োগ, পৌরসভা নিয়োগ, সীমান্তে গবাদি পশু পাচার সবকিছুতেই দুর্নীতি। এমন একটিও জায়গা নেই যেখানে দুর্নীতি আর অনিয়ম হয়নি।\’
প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি \’আমি ওয়াদা করছি তৃণমূল সরকার গরিব মানুষের যে পয়সা লুট করেছে, তা ফেরত পাঠাতে হবে। মোদি ছেড়ে দেওয়ার মানুষ নয়। মোদি এদের গালি শুনে ভয় পায় না, ওদের গালি শুনে থেমে যাওয়ার মানুষও নয়।\’
এদিনের এই সভায় উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা ও বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী, বিজেপি সাংসদ ও রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, দলের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ প্রমুখ।
রাজভবনে মোদী মমতার বৈঠক:
আরামবাগের সভা শেষ করেই সেখান থেকে বিকালে কলকাতায় রাজভবনে (রাজ্যপালের সরকারি বাসভবন) এসে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী। কিছু পরে সেখানে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও। সন্ধ্যা ছয়টা থেকে উভয়ের মধ্যে শুরু হয় সেই বৈঠক। প্রায় আধা ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলে সেই বৈঠক।
বৈঠক শেষে সন্ধ্যা পৌনে সাতটা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এটা সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ ছিলো। এখনও নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়নি কিন্তু রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী আসলে তার সাথে প্রটোকল অনুযায়ী দেখা করতে হয়। তাই তার সাথে দেখা করে গেলাম রাজ্যের কথা বললাম। আর কিছুক্ষণ গল্প করলাম।