baby24

৪০ সপ্তাহ নয় মাত্র ২৪ সপ্তাহে জন্ম নেয় শিশু, পরে যা ঘটল

চতুর্থ সন্তানের মা হওয়ার জন্যে মুখিয়ে ছিলেন দুবাইয়ের বাসিন্দা সাবা আলি। তার আগের তিনটি গর্ভধারণের ঘটনা স্বাভাবিকই ছিল। তবে চতুর্থবারে ঘটল বড় ধরনের বিপত্তি।

গর্ভাবস্থার ২৪ তম সপ্তাহে ভীষণ জ্বরে ভুগছিলেন এই নারী। চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি সকালে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য ১২, ৮ এবং ৬ বছর বয়সী তার তিন সন্তানকে তৈরি করছিলেন তিনি। তাদের স্কুলে রেখে হাসপাতালে পরীক্ষা করতে যান তিনি। শারজাহ এস্টার হাসপাতালে পৌঁছালে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন তার অবিলম্বে অস্ত্রোপচার করাতে হবে। তিনি এর জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন। অনাগত সন্তানকে নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েন তিনি।

তিনি বলেন, ‘কিন্তু চিকিত্সকরা আমার শারীরিক পরিস্থিতির ভয়াবহতা ব্যাখ্যা করেন। আমার একাধারে সংক্রামক, রক্তপাত এবং তীব্র রক্তশূণ্যতা ধরা পড়ে। আমি সময় নষ্ট না করে চিকিৎসকদের উপর আস্থা রাখি।’

দেড় ঘণ্টার অস্ত্রোপচার শেষে মাত্র ৭০০ গ্রাম ওজন নিয়ে জন্ম হয় শিশুটির। চরম অপরিপক্ক শিশুটিকে দ্রুত নিউন্যাটাল নিবিড় পরিচর্যা ইউনিউ বা এন-আইসিইউতে স্থানান্তরিত করা হয়। টানা তিন মাস সেখানেই রাখা হয় শিশুটিকে।

একটি স্বাভাবিক গর্ভাবস্থার সময়কাল ৪০ সপ্তাহ স্থায়ী হয় এবং ৯/১০ মাসের পরিপক্ক শিশুর গড় ওজন ২,০০০ থেকে ৪,০০০ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে।

শিশু ও নিওনাটোলজি বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল মজিদ বলেন, ২৪ সপ্তাহে জন্মগ্রহণকারী শিশুদের বেঁচে থাকার হার ৫০ শতাংশ। এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে প্রসবের সময় শিশুর শারীরিক অবস্থার উপর।’

জরুরি ব্যবস্থা
চিকিৎসকেরা বলেছিলেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অন্তঃসত্ত্বার অস্ত্রোপচার করাতে হবে। সাবা তখন তার অন্য তিন সন্তান নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, আমি অত্যন্ত ভাগ্যবান যে আমার শাশুড়ি সেই সময় দুবাই সফর করেছিলেন।’ তিনি দ্রুত তার নাতিদের দেখভাল করতে সাবার বাসায় যান।

এদিকে কাজ শেষে সরাসরি সাবাকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে আসেন তার বান্ধবী এবং ননদ। সাবার স্বামী অফিসের কাজে শহরের বাইরে ছিলেন।

অ্যাস্টার হাসপাতালের শারজাহের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জেসিকা ফার্নান্দেস বলেন, ‘নিবিড় পর্যবেক্ষণে আমরা স্বাভাবিকভাবে শিশুর জন্ম দিতে সক্ষম হয়েছিলাম কিন্তু পরে মা প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণে ভুগেছিল। এসময় সাবার হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে দুই ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়।’

সন্তান জন্ম দেয়ার দুই দিন পর অস্ত্রোপচার কক্ষ (ওটি) থেকে সাবাকে ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়। দুদিন পরে তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড় দেয়া হয়। তবে বাসায় ফিরে এন-আইসিইউতে থাকা চতুর্থ সন্তানের জন্যে তার কান্না বন্ধ হচ্ছে না।

দুই মাস পর সাবা ও তার স্বামীকে প্রথমবারের মতো স্পর্শ করার অনুমতি দেয়া হয় তাদের চতুর্থ সন্তানকে। এরিমধ্যে মেয়েটির নাম রাখা হয় আসরিন। তিন মাসে আসরিনের ওজন এক কিলোগ্রাম বেড়ে হয় এক হাজার ৭০০ গ্রাম। ধীরে ধীরে ছোট্ট আসরিন অন্য সাধারণ শিশুর মতোই বেড়ে উঠতে থাকে।

Scroll to Top