ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের হাথরাস জেলায় ধর্মীয় সভায় পদদলিত হয়ে এখন পর্যন্ত ১২১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় গ্রেফতার হতে পারেন কথিত ধর্মগুরু নারায়ণ সরকার হরি ওরফে ‘ভোলে বাবা’ ত্তরপ্রদেশ পুলিশের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
পুলিশের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, উত্তরপ্রদেশ পুলিশের একটি দল হাথরাস জেলার সিকান্দাররাউয়ের ঘটনাস্থলে গিয়েছে। অন্য একটি দল গিয়েছে ‘বাবা’ নারায়ণ হরির মূল আশ্রম মইনপুরির রাম কুটির চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ভবনে। পুলিশের ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট সুনিল কুমার বলেন, আমরা ভবনের ভেতরে ‘বাবাজি’ কে খুঁজে পাইনি। তিনি সেখানে ছিলেন না।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্যানুসারে, মঙ্গলবার (২ জুলাই) হাথরাস জেলায় ‘সৎসঙ্গে’ (প্রার্থনা সভা) ভক্তদের উদ্দেশে বক্তব্য দিচ্ছিলেন কথিত ধর্মগুরু নারায়ণ সরকার হরি। সেখানেই পদদলিত হয়ে ১২১ জনের মৃত্যু হয়। মৃতদের মধ্যে শতাধিকই নারী। এছাড়া কয়েকটি শিশুও রয়েছে।
স্থানীয় এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, খুব ছোট একটি জায়গায় এ ‘সৎসঙ্গর আয়োজন করা হয়েছিল। অল্প জায়গায় বহু মানুষের ভিড়ে ‘দমবন্ধকর’ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অনুষ্ঠানস্থলে নিঃশ্বাস নিতে না পারায় ‘সৎসঙ্গে’ উপস্থিত লোকজনের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছিল। এরপর লোকজন সেখান থেকে সরে যেতে তাড়াহুড়ো শুরু করলে পদদলিত হওয়ার ঘটনা ঘটে।
পুলিশ আরও জানায়, অনুষ্ঠানের সময় আবহাওয়া খুব বেশি গরম ও আর্দ্র ছিল। তবে সেখানকার পরিস্থিতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল এবং এ পদপিষ্টের ঘটনা ঘটল, তা পুরোপুরি স্পষ্ট নয়।
স্থানীয় কমর্কতারা জানান, ‘সৎসঙ্গ’ আয়োজকদের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। এফআইআর অনুসারে, সভায় ৮০ হাজার মানুষের অংশ নেয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। তবে ওই সভায় অংশ নিয়েছিল আড়াইলাখেরও বেশি ভক্ত।
এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মু। মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মৃতদের পরিবারের জন্য ২ লাখ রুপি এবং আহতদের জন্য ৫০ হাজার রুপি করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার।
কে ‘ভোলে বাবা’
এ ‘ভোলে বাবা’ নারায়ণ সরকার হরি নামেও পরিচিত। যদিও এটি তার আসল নাম নয়। তার আসল নাম সুরাজ পাল। উত্তরপ্রদেশের ইতাহ বিভাগের বাহাদুর নগরী গ্রামে তার জন্ম। সেখানেই তিনি প্রাথমিক শিক্ষা নেন। তার দাবি, কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে গোয়েন্দা বিভাগে কাজ শুরু করেন তিনি।
এ বিষয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, ‘ভোলে বাবা’ প্রায়ই তার ভক্তদের কাছে দাবি করেন তিনি গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করেছেন। গোয়েন্দা কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করার সময়ই আধ্যাত্মিকতার দিকে ঝুঁকে পড়ায় ১৯৯০ সালে চাকরি থেকে অবসর নেন।
নারায়ণ সরকার হরির অন্যতম বিশেষত্ব হলো ভারতের অন্যান্য কথিত ধর্মগুরুদের মতো জাফরান রঙের পোশাক পরেন না তিনি। এর বদলে পরেন সাদা স্যুট এবং টাই। এছাড়া তার পছন্দের তালিকায় রয়েছে কুর্তা-পায়জামা।
ভক্তদের কাছে কথিত এ ধর্মগুরু বলেন, ভক্তরা তাকে যে অর্থ দান করেন, তার কিছুই নিজের জন্য না রেখে বরং সবটাই তার অনুসারীদের পেছনে ব্যয় করেন তিনি। শুধু তাই নয়, নিজেকে ভগবান হরির শিষ্য বলে অভিহিত করেন তিনি। পাশাপাশি দাবি করেন, উত্তরপ্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলে তার অনেক ভক্ত আছে।