এরশাদের দাফন আজ

সাবেক রাষ্ট্রপতি, প্রাক্তন সেনাপ্রধান, জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও চলতি একাদশ সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা মরহুম এইচ এম এরশাদের মরদেহ আজ মঙ্গলবার সকালে হেলিকপ্টার যোগে নিজ এলাকা রংপুরে নেওয়া হবে। বাদ জোহর রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে তাঁর চতুর্থ নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ঢাকায় এনে বিকালে বনানী সামরিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করার কথা রয়েছে। তবে জানাজা শেষে রংপুরেই তাঁকে দাফনের দাবি জানিয়েছেন জাপার স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।

রবিবার সকালে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) এরশাদ মৃত্যুবরণ করার পর তাঁর স্ত্রী ও সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ সাংবাদিকদের জানান, মৃত্যুর আগে বনানী সামরিক কবরস্থানে দাফনের জন্য বলে গেছেন এরশাদ। সামরিক কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে রবিবার এরশাদের প্রেস উইং থেকেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়। রবিবার ঢাকা সেনানিবাসে সেনা কেন্দ্রীয় মসজিদে এরশাদের প্রথম জানাজা শেষে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)- এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে তার দাফন সম্পন্ন করা হবে’।

এদিকে, রংপুরে এরশাদকে দাফনের প্রস্তুতি হিসেবে গতকাল দুপুরে রংপুর সেন্ট্রাল রোডে দলের স্থানীয় কার্যালয়ে জাপার রংপুর ও রাজশাহী বিভাগীয় কমিটি যৌথসভা করে। সভা শেষে জাপা নেতা ও রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা বলেছেন, রংপুর থেকে এরশাদের মরদেহ ঢাকায় নিতে দেওয়া হবে না। জানা গেছে, স্থানীয় নেতা-কর্মীরা এরশাদকে দাফনের জন্য কবরের জায়গা নির্দিষ্ট করে খোঁড়ারও প্রস্তুতি নিয়েছেন।

এদিকে, গতকাল ঢাকায় সকালে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার টানেলে এরশাদের দ্বিতীয় ও বাদ আসর বায়তুল মোকাররম জামে মসজিদের দক্ষিণ পাশে তৃতীয় জানাজা হয়েছে। জানাজা শেষে এরশাদের মরদেহ আবারো সিএমএইচের হিমঘরে রাখা হয়।

সংসদ ভবনে জানাজা

পাঁচবারের এমপি ও সংসদের বর্তমান বিরোধীদলীয় নেতা এরশাদের কফিন জাতীয় পতাকা ও সেনাবাহিনীর পতাকায় মুড়ে গতকাল সকালে জাতীয় সংসদ প্রাঙ্গণে নিয়ে আসা হয়। বৈরী আবহাওয়ার কারণে সংসদের দক্ষিণ প্লাজার বদলে জানাজার আনুষ্ঠানিকতা সারা হয় দক্ষিণ প্লাজার নিচের টানেলে। জানাজায় অংশ নেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। জানাজা শেষে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি।

এখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার সামরিক সচিব, সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর পক্ষে সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস ও ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিরোধীদলীয় নেতার কফিনে। জানাজার আগে এরশাদের জীবনী পড়ে শোনান জাপা মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। বক্তব্য দিতে এসে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এরশাদের ছোটো ভাই ও জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের। ছেলে সাদকে সঙ্গে করে এসেছিলেন রওশন, পরিবারের পক্ষ থেকে দেওয়া বক্তব্যে তিনি সবার কাছে ক্ষমা ও এরশাদের জন্য দোয়া চান। রওশন বক্তব্য দেওয়ার সময় জাপার কিছু নেতা-কর্মী হইচই করেন, একইভাবে জিএম কাদেরের বক্তব্যের সময়ও দলটির কিছু নেতা-কর্মী হইচই করেন।

সংসদ ভবনে জানাজার আগে আওয়ামী লীগের পক্ষে দেওয়া বক্তব্যে দলটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘এরশাদ সাহেব একজন ভদ্র, মার্জিত ও সজ্জন ব্যক্তি ছিলেন। তিনি সবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করেন, তিনি ছিলেন বিনয়ী।’

সংসদ ভবনে জানাজায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ও সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী প্রমুখ অংশ নেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে আরো ছিলেন- শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ফারুক খান, মাহবুব-উল আলম হানিফ প্রমুখ। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও জিএম সিরাজ এমপি জানাজায় অংশ নেন। সৌদিআরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ, বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম সারোয়ার মিলনও এখানে জানাজায় শরিক হন। জাপা নেতাদের মধ্যে ছিলেন- এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, মুজিবুল হক চুন্নু, নাসরিন জাহান রত্না প্রমুখ।

বায়তুল মোকাররমে জানাজা

গতকাল বাদ আসর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে মরহুম এরশাদের তৃতীয় জানাজা হয়। এতে ইমামতি করেন জাতীয় মসজিদের খতিব। জানাজায় বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষ অংশ নেন। এখানে জানাজার আগে দেওয়া বক্তব্যে জিএম কাদের বলেন, ‘আমার ভাই দেশ, জাতি, ইসলাম ধর্ম ও মানুষের জন্য অবদান রেখে গেছেন। মানুষের ভুলত্রুটি থাকে, ওনারও ভুলত্রুটি ছিল, আপানারা সেগুলো মাফ করে দেবেন।’

শেষবারের মত দলীয় কার্যালয়ে

সংসদ ভবনে জানাজা শেষে এরশাদের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর কাকরাইলে জাপার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। বায়তুল মোকাররমে জানাজার আগ পর্যন্ত সেখানে নির্মিত প্যান্ডেলের নিচে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে ছিল এরশাদের মরদেহ। সেখানে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। দলের বাইরেও গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিকও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাপার সভাপতি ও ঢাকা-৪ আসনের এমপি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার সার্বিক তত্ত্বাবধানে দলীয় কার্যালয়ের এই আনুষ্ঠানিকতা দিনভর তদারকি করেন জাপার যুগ্ম-মহাসচিব ও নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা। পরে দলীয় কার্যালয় থেকে চিরবিদায় নেন জাপার প্রতিষ্ঠাতা এরশাদ।

Scroll to Top