ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির অভিযোগে সহজের কর্মকর্তাসহ গ্রেপ্তার ৯

ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি নিয়ে তোড়জোড় চললেও ধরাবাধার বাইরে ছিলেন এর সাথে জড়িত ব্যাক্তিরা। এবার দেশজুড়ে ট্রেনের টিকেট কালোবাজারির অভিযোগে টিকেট বিক্রির দায়িত্বপ্রাপ্ত কোম্পানি সহজ ডটকমের কর্মকর্তাসহ নয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। তাদেরকে গত বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) রাতে রাজধানীর কমলাপুর ও সবুজবাগ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আজ শুক্রবার (২২ মার্চ) র‍্যাব-৩ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও গোয়েন্দা কার্যক্রমের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) দিবাগত রাতে রাজধানীর কমলাপুর ও সবুজবাগ এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-৩। এসময় তাদের কাছ থেকে অবৈধভাবে সংগ্রহ ও মজুতকৃত ট্রেনের টিকিট উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-মিজান ঢালী, মো. সোহেল ঢালী, মো. সুমন, মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. শাহজালাল হোসেন, মো. রাসেল, মো. জয়নাল আবেদীন, মো. সবুর হাওলাদার ও নিউটন বিশ্বাস।

র‍্যাব জানায়, দেশব্যাপী ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি ঢালী সিন্ডিকেটের হোতা মিজানের নেতৃত্বে চক্রটি সংঘবদ্ধভাবে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রায় সব ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করে আসছিল। মিজান দীর্ঘদিন ধরে রেলওয়ের টিকিট বুকিংয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে যুক্ত রয়েছে। ২০০৩ সালে সে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান ডেফোডিল এর কমলাপুর রেলস্টেশন শাখায় পিয়ন হিসেবে যোগ দেয়।

পরবর্তীতে বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকেট বুকিংয়ে সিএনএসডটবিডি এর সাথে চুক্তিবদ্ধ হলে, অভিজ্ঞ কর্মী হিসেবে তাকে চাকরিতে পুনঃবহাল রাখা হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালে রেলওয়ে টিকেটের চুক্তি সহজ ডটকমকে দেয়া হলে সেখানেও মিজানের চাকরি বহাল থাকে। দীর্ঘদিন টিকিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে যুক্ত থাকায় দেশব্যাপী বিভিন্ন স্টেশনের সহজ ডটকমের অফিসে এবং বড় বড় রেলওয়ে স্টেশনের কর্মচারীদের সাথে তার পরিচিতি বৃদ্ধি পায়।

পরিচয়ের সূত্র ধরে সে বিভিন্ন স্টেশনে থাকা সহজ ডটকমের সদস্য, টিকিট কাউন্টার ও অন্যান্য কালোবাজির চক্রের সদস্যদের সমন্বয়ে বিভিন্ন কারসাজির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টিকিট বিক্রি করতো। সহজ ডটকমের কমলাপুর রেলস্টেশন সার্ভার রুমের সার্ভার অপারেটর গ্রেপ্তারকৃত নিউটন বিশ্বাস, স্টেশন রিপ্রেজেন্টেটিপ সবুর হাওলাদারসহ এবং পলাতক আব্দুল মোত্তালিব, আশিকুর রহমানসহ আরও কয়েকজন উক্ত টিকিট কালোবাজারির সাথে জড়িত।

র‍্যাব আরও জানায়, ঈদ, পূজা, সাপ্তাহিক ছুটিসহ বিশেষ ছুটির দিনকে উপলক্ষ করে গ্রেপ্তারকৃত মিজান ও সোহেল বিভিন্ন কারসাজির মাধ্যমে সাধারণ সময়ের তুলনায় অধিক সংখ্যক টিকিট সংগ্রহ করতো। মিজান ও সোহেল প্রতি বছর ঈদ মৌসুমে দেশব্যাপী বিভিন্ন স্টেশনের সহজ ডটকমের কর্মচারী ও টিকিট কাউন্টারম্যানদের মাধ্যমে আনুমানিক প্রায় ২-৩ হাজার রেলওয়ের টিকিট কালোবাজির মাধ্যমে বিক্রি করতো। তারা আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরে আগের চাইতেও অধিক সংখ্যক টিকিট সংগ্রহের জন্য পরিকল্পনা করছিল বলে জানা যায়।

র‍্যাব জানায়, টিকিট বিক্রয়ের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে ৫০ ভাগ সহজ ডটকম ও রেলওয়ে স্টেশনের টিকিট কাউন্টারম্যানরা পেতো এবং বাকি ৫০ ভাগ সিন্ডিকেটের হোতা মিজান, সোহেলসহ বাকি বিক্রয়কারী সহযোগীদের মাঝে ভাগাভাগি হতো। এই অর্থ কখনো তারা নগদ হাতে-হাতে বুঝিয়ে দিতো আবার কখনো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন করতো বলে জানা গেছে।

Scroll to Top