মুশফিকের একটা রিকোয়েস্ট

আজ সংবাদ সম্মেলনের শেষ মুহূর্তে স্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম হঠাৎই বলে ওঠেন, আমার একটা রিকোয়েস্ট ছিল, একটা রিকোয়েস্ট!

সাউথ আফ্রিকা সফরের জন্য দলের একাংশ বিমানে চেপেছে শনিবার সকাল ১০টায়। বাকিরা উড়াল দেবে সন্ধ্যা ৭টায়। যাওয়ার আগে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে যথানিয়মে হাজির হতে হল মুশফিককে। সেটারই শেষাংশে মুশফিকের দিক থেকে ছুটে এল দলে নড়বড়ে পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে চলা খেলোয়াড়দের পাশে থাকাতে বলার আকুতি।

‘সৌম্য-ইমরুল যাদের একটু খারাপ সময় যাচ্ছে, তাদের নিয়ে এমন কোনও সমালোচনা করবেন না যে, তাদের উপর চাপ হতে পারে, ক্যারিয়ারটা শেষ হয়ে যায়।’

গত কিছুদিন অনুজ্জ্বল পারফরম্যান্সের জন্য সৌম্য-ইমরুলকে নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। প্রোটিয়া সিরিজের দলেও আছেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে তাদের নিয়ে খুব একটা বাঁকা প্রশ্নও ছুটে যায়নি মুশফিকের দিকে। তারপরও সতীর্থদের আগলে রাখতে মুশফিকের আগ বাড়ানো পদক্ষেপ।

তবে কী টানা খারাপ খেলার মধ্যে থাকা কাউকে নিয়ে সংবাদকর্মীদের সমালোচনামূলক কথা লিখতে বারণ করছেন টাইগারদের টেস্ট অধিনায়ক? মুশফিকের পরের কথাতে সেটাও পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে।

‘সমালোচনা হতেই পারে, সেটা সমস্যা নয়। কিন্তু অপ্রয়োজনীয় ভাবে ওদের উপর এমন কোনও চাপ এনে দিয়েন না যে, ওরা ওদের স্বস্তির জায়গাটা থেকে বেরিয়ে আসে। দিনশেষে ওরা যদি পারফর্ম করতে না পারে, দল থেকে বেরিয়ে যায়, তাহলে কিন্তু বাংলাদেশ দলের জন্যই ক্ষতি।’

ক্ষতিটা যে মুশফিকের বা অন্যকারো নয়, বাংলাদেশ দলেরই, সেটা দ্বিতীয়বার বলে মর্মার্থটা আরও পরিষ্কার করতে চাইলেন টেস্ট দলপতি। সঙ্গে মনে করিয়ে দিলেন সৌম্যরা যে মাপের খেলোয়াড়, একটা দেশ-দল সবসময় তাদের মত প্রতিভাবানদের পায় না। দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষা করেই এমন মানের খেলোয়াড়ের জন্য অপেক্ষাটা ফুরোয়।

‘আমার মনে হয়, দলে এখন যারা খেলোয়াড় আছে, তাদের মানের কাউকে পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এখন অনেক কঠিন একটা জায়গা। বছরে নয় মাসই খেলার মধ্যে থাকতে হয়। এখানে টানা পারফর্ম করা, অনেক বিশ্লেষণ থাকে, অনেককিছু থাকে, কিছুটা কঠিন।’

যারা সবসময় নিজেদের সেরাটা দিতে পারছে না, সমালোচনা করেও তাই তাদের পাশে থাকার আবেদন অধিনায়কের। তবে সেই সমালোচনাটা গঠনমূলক হবে বলেই প্রত্যাশা তার।

‘অবশ্যই সমালোচনা করবেন। কিন্তু তাদের কারও জন্য এমনভাবে প্রশ্ন কইরেন না যে, তাদের আত্মবিশ্বাসে লাগে। আমরা অনেক সময় অনেককিছু না দেখতে চাইলেও এদিক-ওদিক থেকে ঠিকই কানে এসে যায়। অনেকে হয়ত বলবে এটা কোনও প্রভাব ফেলে না। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রেই অনেকসময় এটা প্রভাব ফেলতে পারে।’

সমালোচনাটা কিরকম হতে পারে সেটাও একটা পথ বাতলে দিলেন মুশফিক, ‘ওদের একটু স্বাধীনভাবে খেলার সুযোগ করে দিলে, এই বিশ্বাসটা দিলে যে- ওদের বাংলাদেশ দলকে প্রেজেন্ট করার যোগ্যতাটা আছে; দেখবেন তাতে ওরা আরও ভালো পারফর্ম করবে। যেটা কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্যই ভালো হবে।’

সতীর্থদের আগলে রাখার পাশাপাশি তাদের উদ্দীপ্ত করার জন্য সমালোচনাটাও যে দরকার সেটিও বারবার মনে করিয়ে দিলেন মুশফিক। সঙ্গে আর যেটা বললে, একটু সময় দিতে।

‘ভবিষ্যতে আমাকে নিয়েও সমালোচনা করেন। সেটা সমস্যা নয়। কারণ আমার রিপ্লেস অনেক আছে! কিন্তু ওরা কিছু খেলোয়াড় আছে, তাদের বদলি খুবই কম বাংলাদেশ দলে। সেটা আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি।’

সৌম্য-সাব্বিরদের প্রতিভা নিয়ে অবশ্য খুব বেশি প্রশ্ন নেই কারও। তারা পারফর্মও করেছেন। কিন্তু ঘাটতিটা থেকে যাচ্ছে ধারাবাহিকতার ক্ষেত্রে। প্রশ্নটা তাই মাঝেমধ্যে চাড়া দিয়ে ওঠে, দল কী তাদের কেবল টেনে চলেছে! মুশফিক আগাগোড়া সেটাকেই ভুল ভাবনা বলতে চাইলেন। যোগ্য নেতার মত আগলে রাখতে চাইলেন সতীর্থদের।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৬ ঘণ্টা, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসডিএম

Scroll to Top