\’মধ্যরাতে আমাকে ঘিরে ধরে মাতালেরা, এরপর শুরু করে…\’

\”কান ধরে ওঠবোস করুন না হলে গাড়ির চাবি পাবেন না। \” মদ্যপরা বলে যাচ্ছিল। গোল করে ঘিরে রেখেছে। ফাঁকা রাস্তা। কেউ নেই। গাড়ির যাতায়াত কম। কাছে একটা মিষ্টির দোকানে আলো জ্বলছে। কয়েকজন আছে সেখানে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। এগিয়ে আসছে না কেউ। মদ্যপদের সামনে দাঁড়িয়ে অসহায় কাঞ্চনা ও তাঁর গাড়ির ড্রাইভার।

বিভিন্ন রকমভাবে মদ্যপরা হেনস্থা করছে তাঁদের। গাড়ির চাবি ওদের কাছে। উপায়ও যে নেই। কী করবেন, কাকে ডাকবেন, কীভাবে এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না। ঘটনাস্থল কলকাতার বেহালা থানার সিরিটি এলাকা। সময় গতকাল রাত। মাতালদের হাতে হেনস্থার শিকার কলকাতার অভিনেত্রী কাঞ্চনা মৈত্র। তিনি নিজেই জানিয়েছেন পুরো ঘটনা। এখনও পর্যন্ত একজন অভিযুক্তকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বাকিরা পলাতক রয়েছে। তাদেরও সন্ধান করা হচ্ছে।

অভিনেত্রী জানিয়েছেন, গতরাতে শুটিং শেষে সিরিটির রাস্তা ধরে বাড়ি ফিরছিলেন। সিরিটির রাস্তায় আচমকা তাঁর গাড়িতে একটি ইট এসে পড়ে। চমকে যান গাড়ির ড্রাইভার। ইট কোথা থেকে এল, দেখতে গাড়ির দরজা খুলে বাইরে যান। ঠিক সেসময় আসে দুই মদ্যপ। গাড়ি ঘেরাও করে তারা। গেট খুলে বাইরে আসেন কাঞ্চনা। তাঁকে দেখে হেনস্থা শুরু করে মদ্যপরা।

রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন অভিনেত্রী। জি়জ্ঞেস করেন, তাঁদের সঙ্গে কেন এমন করা হচ্ছে? কথা কানে নেয়নি অভিযুক্তরা। বরং, বেপরোয়া হয়ে ওঠে। কাকুতি মিনতি শুনে সুযোগ পায় যেন। গাড়ি থেকে চাবি খুলে নিয়ে পালায় দুই মদ্যপ। তাদের পিছু নেন কাঞ্চনা ও গাড়ির ড্রাইভার। কিছুটা যাওয়ার পর তাদের ধরতে সক্ষম হন। ততক্ষণে আরও কয়েকজন মদ্যপ যোগ দিয়েছে সেই দলে। এবারে যেখানে তারা আসে সেটা একটি নির্জন। এখানে এসে চাবি দিতে রাজি হয় অভিযুক্তরা। তবে দেয় শর্ত।

অভিনেত্রীর কথায়, “আমরা ওদের হাতজোড় করি। বলি, চাবিটা দিয়ে দিন। ওরা বলে, ড্রাইভার ও আমি যদি একে অপরের গালে চড় মারি তাহলেই চাবি দেবে। কী করব ভাবতে না পেরে চোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসে আমার। ওরা তা দেখে বলে কান ধরে ওঠবোস করলে চাবি ফেরত দেবে। আমি কী করব তখন ভাবতে পারছি না। ড্রাইভার ওদের এসব কথার প্রতিবাদ করে। তাঁকে মারধর করা হয়। আমি আটকাতে গেলে আমার গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা করে অভিযুক্তরা। সঙ্গে চলতে থাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ। যে কোনও সময় বড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটতে পারত।

ঠিক সেসময় পরিত্রাতার ভূমিকায় আসে পুলিশ। রাস্তায় টহল দিচ্ছিল তারাতলা থানার পুলিশ ভ্যান। লাল গাড়িটি দেখে তার দিকে ছুটে যান কাঞ্চনা। পুলিশকে দেখে কাঁদতে কাঁদতে গোটা ঘটনা বলেন। ততক্ষণে সেখান থেকে ছুট লাগিয়েছে অভিযুক্তরা। তা দেখে পুলিশ তাদের পিছু ধাওয়া করেছে। দুজন পালায়। তবে, একজনকে ধরে ফেলতে সক্ষম হন কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা।

ঘটনা নিয়ে কাঞ্চনা জানিয়েছেন, একজন ধরা পড়েছে। বাকিদের পরিচয় সামনে এনেছে সে। ঘটনার পর থেকে তিনি আতঙ্কে রয়েছেন। বাকি অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৩ ঘণ্টা, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/পিকে