কাকরাইলে ডাবল মার্ডার : বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য!

কাকরাইলের চাঞ্চল্যকর ডাবল মার্ডারের পেছনে একাধিক ব্যক্তির সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ। টার্গেট ছিলেন শেখ মো. আবদুল করিমের প্রথম স্ত্রী শামসুন্নাহার। শামসুন্নাহারকে হত্যা করতে গিয়ে হত্যা করা হয় তার সন্তান সাজ্জাদুল করিম শাওনকেও। শামসুন্নাহারকে হত্যার পরিকল্পনা হয় কয়েকমাস আগে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, কয়েকমাস আগে রাঙ্গামাটিতে বেড়াতে গিয়েছিলেন শেখ মো. আবদুল করিম, তার তৃতীয় স্ত্রী শারমিন আক্তার মুক্তা, তার ভাই আল আমিন জনিসহ আরো একজন। সেখানে বসেই পারিবারিক বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয় তাদের মধ্যে।

ওই সময়েই শামসুন্নাহারকে হত্যার পরিকল্পনা হয় বলে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন করিমের তৃতীয় স্ত্রী মুক্তা।

সূত্রমতে, জিজ্ঞাসাবাদে শেখ মো. আব্দুল করিম নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করলেও মুক্তার স্বীকারোক্তিতে প্রকাশ পাচ্ছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। গত বছরের অক্টোবরে মুক্তার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয় করিমের। ওই সময়ে করিম তাকে ডিভোর্স দিচ্ছেন বলে জানতে পারেন মুক্তা। মুক্তা মনে করেন এ ঘটনার পেছনে হাত ছিল করিমের প্রথম স্ত্রী শামসুন্নাহারের।

এমনকি মুক্তাকে একটি ডিভোর্স লেটারও পাঠান করিম। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে মুক্তা, তার মা ও ভাই জনি। রিমান্ডে মুক্তার স্বীকারোক্তি অনুসারে, শামসুন্নাহারকে ‘শায়েস্তা’ করতেই গত বছরের নভেম্বরে কাকরাইলের বাসায় গিয়ে তাকে মারধর করেছিলেন। তাতেও শামসুন্নাহার থেমে থাকেননি। বাধ্য হয়েই তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।

এ বিষয়ে করিম ও শামসুন্নাহার দম্পতির মেজ ছেলে আশিকুর রহমান অনিক বলেন, আব্বু একটি ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছিলেন শারমিন মুক্তাকে। এরপরই ক্ষুব্ধ হয়ে গত বছরের নভেম্বরে তারা আমাদের বাসায় এসেছিল। আমি তখন ঢাকার বাইরে ছিলাম। তারা আমার আম্মুকে মারধর করেছে। বাসার আসবাবপত্র ভাঙচুর করেছে।

এ ঘটনায় শামসুন্নাহার জিডি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারিবারিক সম্মানের কথা ভেবে থানা-পুলিশ মুখো হননি বলে জানান তার দুই সন্তান মুন্না ও অনিক। এই পরিবারের ঘনিষ্ঠরা জানান, এরপর থেকেই মুক্তা ও তার মা এবং ভাই মিলে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করে। মুক্তাকে নিয়ে রাঙ্গামাটিতে বেড়াতে যেতে চাইলে তাদের সঙ্গে যায় আল আমিন জনি। সেখানে একটি রির্সোটে রাতের খাবার শেষে পারিবারিক বিষয়ে আলোচনা হয়।

ওই বৈঠকে করিমের কাছে নিজের নামে একটি ফ্ল্যাট দাবি করেছিলেন মুক্তা। কিন্তু করিম এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। এসব আলোচনার এক পর্যায়ে কান্না করেছিলেন মুক্তা। তার অশান্তির জন্য শামসুন্নাহারকে দায়ী করেছিলেন তিনি। তখন করিমও জানান, শামসুন্নাহারের কারণেই ইচ্ছে থাকলেও অনেক কিছু করতে পারেন না তিনি।

তখনই জনি জানিয়েছিল সে এই পথের বাধা দূর করে দেবে। মুক্তা তাকে সমর্থন দিয়ে বলেছিল একটা কিছু করা উচিত। এভাবেই শামসুন্নাহার হত্যা পরিকল্পনা হয় বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

পরিকল্পনা অনুসারেই ৩১শে অক্টোবর নিউমার্কেট থেকে একটি ধারালো অস্ত্র কেনে জনি। ঘটনার দিন ১লা নভেম্বর সন্ধ্যায় সে কাকরাইলের বাড়িতে যায়। কলিংবেল চাপলে গৃহকর্মী দরজা খুলে দেয়। পরে গৃহকর্মী রান্নাঘরে ঢুকলে জনি রান্নাঘরের দরজা বাইরে থেকে আটকে দেয়।

ঘটনার সময় বাসায় শামসুন্নাহার ও তার তৃতীয় সন্তান শাওন বাসায় ছিলেন। শাওন তার মাকে রক্ষার চেষ্টা করলেই তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। এ বিষয়ে রমনা থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক আলী হোসেন জানান, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। করিম ও মুক্তার দেয়া তথ্যগুলো যাচাই করা হচ্ছে।

সূত্রমতে, অন্য নারীতে ‘আসক্ত’ করিমকে বাধা দিতে গিয়ে প্রায়ই ঝগড়া হতো করিম-শামসুন্নাহারের মধ্যে। অতিষ্ঠ হয়ে কাকরাইলের ওই বাসায় আসা কমিয়ে দিয়েছিলেন করিম। কাকরাইলের রাজমনি সিনেমা হল সংলগ্ন করিমের ফিল্মের অফিসে প্রায়ই বিভিন্ন নারীদের সঙ্গে আড্ডা জমতো।

ঘটনার কিছুদিন আগে হঠাৎ ওই অফিসে হাজির হয়েছিলেন শামসুন্নাহার। ওই সময়ে করিম-শামসুন্নাহারের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছিল। ফিল্ম জগতে জড়িত থাকা এক তরুণী তখন করিমের কক্ষে ছিলেন। শামসুন্নাহারের উপস্থিতিতে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন ওই তরুণী। এভাবেই করিম-শামসুন্নাহারের সম্পর্ক দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছিল।

শামসুন্নাহারের বড় ভাই আমান উল্লাহ হাওলাদার বলেন, আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে রাঙামাটিতে এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা হয়েছে। এ ঘটনায় করিম, মুক্তা ও মুক্তার ভাই জনিসহ আরো অনেকে জড়িত। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

একইভাবে এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে করিম ও শামসুন্নাহার দম্পতির দুই সন্তান মুন্না ও অনিক বলেন, এই হত্যাকাণ্ডে যদি আমাদের আব্বুও জড়িত থাকেন আমরা তার শাস্তি চাই। আমাদের মা অত্যন্ত ধার্মিক ছিলেন। তিনি আব্বুকে সবসময় বিপদগামিতা থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন।

এসব কারণেই মুক্তা ও তার পরিবারের সদস্যরা আমার মাকে পথের বাধা মনে করতো। তারা আমার মা ও ভাইকে হত্যা করেছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন নিহতের দুই সন্তান। সূত্র: মানবজমিন।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, ৭ নভেম্বর, ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/পিকে