মানুষ ছুটছে গ্রামে রাজধানী ফাঁকা

করোনা প্রতিরোধে সরকার ১০ দিন ছুটি ঘোষণা করায় রাজধানীর মানুষ করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পেতে ছুটছে গ্রামের বাড়ীতে। একারণে রাজধানীর বাস টার্মিনাল ও কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড়। রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ। তাই সড়কপথে ঘাটে পৌঁছে ঠাসাঠাসি করে ফেরিতে নদী পাড়ি দিচ্ছেন। অন্যদিকে গণপরিবহন কম থাকায়, পুরো রাজধানীতে বিরাজ করছে ছুটির দিনের আবহ। রাস্তাঘাট এখন অনেকটাই ফাঁকা।

ঢাকার মহাখালীতে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ইকবাল হোসেন। তিনি স্ত্রী, ছোট ভাইসহ লাগেজ নিয়ে ইউটিলিটি ফেরি চন্দ্রমল্লিকায় নদী পাড়ি দিয়ে দৌলতদিয়ায় পৌঁছান। ফেরি থেকে নেমে হাঁপিয়ে ওঠায় পল্টুনের ওপর একটু বিশ্রাম নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তিনি বললেন, ঢাকা শহর থেকে গ্রাম অনেকটা নিরাপদ। তাই কষ্ট করে হলেও গ্রামের বাড়ি যশোরের শার্শায় যাচ্ছেন তিনি।

আজ দুপুরে দৌলতদিয়ায় দেখা যায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ। তবে ফেরি চালু থাকায় পাটুরিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে আসা প্রতিটি ফেরিতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষে ভরপুর। কোথাও দাঁড়ানোর পর্যন্ত জায়গা নেই। যেখানে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি থেকে বাঁচতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হচ্ছে, সেখানে এমন ঠাসাঠাসি করে বাড়ি ফেরা কতটা নিরাপদ তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

ভিড় সামলে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলেন গৃহবধু খোদেজা বেগম। তিনি বলেন, ‘স্বামীর সঙ্গে ঢাকা শহরেই থাকি। পরিস্থিতি দিন দিন যেদিকে যাচ্ছে, সবার মাঝে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। আল্লাহ যদি বাঁচিয়ে রাখেন, তাহলে আবার শহরে ফিরতে পারব। তাই স্বামী-সন্তান নিয়ে যশোরে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি।’ ফেরিতে এত মানুষের ভিড়ে এভাবে আসা ঠিক না জানলেও কোনো উপায় নেই বলে মন্তব্য তাঁর।

ঢাকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আল হেলাল বলেন, ‘আমরা এখন সবাই ঝুঁকির মধ্যে আছি। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে ফেরিতে মানুষের ভিড় ঠেলে আসতে হলো। কিছু করার নেই।’

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক আবু আব্দুল্লাহ বলেন, লঞ্চ বন্ধ থাকায় ফেরিতে মানুষের চাপ বহুগুণে বেড়েছে। মানুষের ভিড় দেখে মনে হয়, ঈদের ছুটিতে সবাই বাড়ি ফিরছে। কিন্তু এতে করে এসব মানুষ নিজেদের চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছেন।

তবে রাজধানীবাসী মনে করেন ভাইরাস আতঙ্ক কেটে অচিরেই ঢাকা ফিরবে তার আপন রূপে এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।