সিলেটে বেলা তিনটা পর্যন্ত পাঁচ বার ভূমিকম্প অনুভূত, সতর্ক থাকার পরামর্শ

আজ সকাল থেকে অন্তত পাঁচবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা সিলেটে এবং দফায় দফায় এমন কম্পনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয়দের মধ্যে। আবহাওয়াবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন সাধারণত বড় কোন ভূমিকম্পের আগে বা পরে এমন দফায় দফায় মৃদু কম্পন হতে পারে।

ঢাকা আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ মুমিনুল ইসলাম বলছেন, ‘বেলা তিনটা পর্যন্ত পাঁচ বার কম্পন অনুভূত হয়েছে। এর মধ্যে চারটি হলো ৪.১, ৪, ৩ এবং ২.৮ মাত্রার। কোন কোনটি এতো মৃদু যে সব স্টেশনে মাত্রা মাপাও যায়নি।’

মুমিনুল ইসলাম বলছেন ‘সিলেটে এমন আর কখনো হয়নি যদিও সিলেট অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরেই ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে। বিশেষ করে তিনটি প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশে। সিলেটের জৈন্তায় আজকের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল। তবে সবগুলোই ছোটো ধরণের ভূমিকম্প।’

‘কিন্তু ভূমিকম্পের প্রিশক ও আফটারশক থাকে। অনেক সময় বড় ভূমিকম্পের আগে ছোট কম্পন হয়। আবার বড় ভূমিকম্প হলে তারপর ছোট ছোট কম্পন হয়। যেহেতু সিলেট অঞ্চল ভূমিকম্প প্রবণ সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে। তাছাড়া ওই অঞ্চলে বড় ভূমিকম্পের ইতিহাস আছে।’

বাংলাদেশের ঢাকায় আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে সিলেটে ৪.১ মাত্রার মৃদু ভূমিকম্পটি প্রথমবার অনুভূত হয়েছে।

পরে বেলা ২টা ৩৪ মিনিট ২৯ সেকেন্ডে আরও একটি ভূমিকম্প অনুভূত হয় বলে অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ গবেষণার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা হয়েছে আর্থ অবজারভেটরি।

আর্থ অবজারভেটরির পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলছেন সকালের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল সিলেটেরই জৈন্তা এলাকা।

‘সিলেটের জৈন্তা এলাকার ডাউকি ফল্টেই সকালের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল হিসেবে আমাদের কেন্দ্রে আমরা চিহ্নিত করেছি। ডাউকি ফল্ট পূর্ব পশ্চিমে প্রায় তিনশ কিলোমিটার বিস্তৃত এবং এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরেই পলিমাটি দিয়ে ঢাকা,’ বলছিলেন তিনি।

ভূমিকম্পের প্রবণতা নিয়ে ২০০৩ সাল থেকে গবেষণা করছেন অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার। তার গবেষণা মডেল বলছে ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান এবং বার্মা তিনটি গতিশীল প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান।

তিনি জানান, বাংলাদেশের দুই দিকের ভূ-গঠনে শক্তিশালী ভূমিকম্পের শক্তি জমা হয়েছে। তবে আজকের প্রথম ভূমিকম্পটি ভালোভাবে বোঝা গেলেও পরেরগুলো ছিলো আরও মৃদু কম্পন অর্থাৎ খুবই হালকা ধরণের।

‘কিন্তু মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে দুটি অঞ্চলে যেভাবে শক্তি সঞ্চিত হয়ে আছে বহুকাল ধরে তাতে আট মাত্রার পর্যন্ত ভূমিকম্প হতে পারে যদি একবারে হয়। হলে একবারেও হতে পারে আবার ভেঙ্গে ভেঙ্গে বা দফায় দফায়ও হতে পারে। কিন্তু কোন মাত্রার হবে এটা আগে থেকে অনুধাবন সম্ভব না।’

মিস্টার আখতার বলেন, ‘বারবার যেভাবে মৃদু কম্পন অনুভূত হয়েছে তাতে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বড় ধরণের কম্পনও অনুভূত হতে পারে। আবার নাও হতে পারে।’

সংবাদ সূত্রঃ বিবিসি বাংলা।