নিউজিল্যান্ডের নুর মসজিদের মোয়াজ্জিন ছিলেন নিহত ড. সামাদ

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে জুমার নামাজের সময় দুটি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষিতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবদুস সামাদ। তার গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার মধুরহাইল্যা গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের জামাল উদ্দিন সরকারের ছেলে।

ড. সামাদের মৃত্যুর খবরে তার গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তার স্বজনরা।

পরিবারিক সূত্রে জানা যায়, ড. মুহাম্মদ আবদুস সামাদ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা শেষে সেখানেই কৃষিতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পিএইচডি করেন নিউজিল্যান্ডে। পরবর্তীতে তিনি ওই বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে নাগরিকত্ব নিয়ে স্ত্রী ও তিন ছেলেকে নিয়ে স্থায়ীভাবে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরে বসবাস শুরু করেন। সেখানে তিনি লিংকন ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং ‘মসজিদ আল-নুর ’ নামে একটি মসজিদে মোয়াজ্জিন হিসেবে দায়িত্ব নেন।

এদিকে নিউজিল্যান্ডে বাবা-মায়ের সঙ্গে কিছুদিন বসবাস করার পর তার বড় ছেলে তোহান মোহাম্মদ দেশে ফিরে ঢাকায় বসবাস করছেন। তোহান বর্তমানে ঢাকার একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। আর তার অপর দুই ভাই তারেক, তানভির ও মা কেশোয়ারা সুলতানাকে নিয়ে বাবা ড. আবদুস সামাদ সেখানেই থাকতেন।

ড. আবদুস সামাদ নিহতের সংবাদ কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার মধুরহাইল্যা গ্রামে তার নিজ বাড়িতে পৌঁছালে শোকে কাতর হয়ে পড়েন স্বজন ও পরিবারের লোকজন।

সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ভাইয়ের শোকে বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন ছোট ভাই মতিয়ার রহমান। তারা কোনোভাবে মেনে নিতে পারছেন না এ ঘটনা। ড. মুহাম্মদ আবদুস সামাদ পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তৃতীয়। তার বড় ভাই আসাদ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। অন্য দুই ভাই গ্রামের বাড়িতে থাকেন।

নিহত ড. মুহাম্মদ আবদুস সামাদের ছোট ভাই হাফেজ হাবিবুর রহমান জানান, তারা এ ঘটনায় মর্মাহত। তারা চান দ্রুত এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হোক এবং ড. সামাদের মরদেহ অবিলম্বে বাংলাদেশে এনে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হোক।

উল্লেখ্য, শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে জুমার নামাজের সময় দুটি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় ৪৯ জন নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে তিনজন বাংলাদেশি নাগরিকও রয়েছেন। হামলার সময় মসজিদটির খুব কাছেই ছিলেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। জুমার নামাজ আদায় করতে মসজিদে ঢোকার মুখে অজ্ঞাত এক নারীর কাছ থেকে হামলার বার্তা পেয়ে কোনোরকমে বেঁচে ফিরেছেন তামিম, মিরাজ, তাইজুলরা।

পরে ঘটনাস্থল থেকে অদূরে অবস্থিত হাগলি ওভাল স্টেডিয়ামের ড্রেসিংরুমে তারপর নিজেদের টিম হোটেলে ফিরে যান বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। হামলার পর নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে তৃতীয় টেস্ট বাতিল করে শনিবার দেশে ফেরার কথা রয়েছে বাংলাদেশ দলের।