করোনাঃ বন্ধ হচ্ছে বিড়ি-সিগারেটের উৎপাদন ও ক্রয়-বিক্রয়

করোনা আতঙ্কে আতঙ্কিত গোটা বিশ্ব। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় তামাক কোম্পানির উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণন ও তামাকপাতা ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যয়ের আলোকে ধূমপানের কারণে শ্বাসতন্ত্রের নানাবিধ সংক্রমণ এবং শ্বাসজনিত রোগ তীব্র হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার কারণে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি পাঠিয়েছে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী মো. খায়রুল আলম সেখ।

চিঠিতে বলা হয়, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা তামাককে কোভিড-১৯ সংক্রমণ সহায়ক হিসেবে চিহ্নিত করে এর ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার কথা বলেছে। ধূমপানের কারণে শ্বাসতন্ত্রের নানাবিধ সংক্রমণ এবং শ্বাসজনিত রোগ তীব্র হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাধিক গবেষণা পর্যলোচনা করে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্রতি জানিয়েছে, অধূমপায়ীদের তুলনায় ধুমপায়ীদের কোভিড-১৯ সংক্রমণে মারাত্মকভাবে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

এছাড়াও গবেষণায় দেখা গেছে, কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ধূমপায়ীর মৃত্যু ঝুঁকিও ১৪ গুণ বেশি। কোভিড-১৯ সংক্রমণ মোকাবেলায় ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সাময়িকভাবে সিগারেট ও তামাকজাত পণ্য ক্রয়-বিক্রয়, সীসা বার, উন্মুক্ত স্থানে পানের পিক ফেলার মত বিষয়গুলো নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

বাংলাদেশেও কোভিড-১৯ ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় সরকার কোভিড-১৯ মোকাবেলায় বহুমাত্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ক্রমবর্ধমান কোভিড-১৯ রোগ প্রতিরোধ, শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা সেবা প্রদানে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে।

এ পরিস্থিতিতে দেশের তামাক কোম্পানিগুলোকে উৎপাদন, সরবরাহ ও বিপণন করার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিশেষ অনুমতিপত্র প্রদান করোনা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে। জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা মোকাবেলা এবং স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি হ্রাস করতে প্রণীত সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল আইন, ২০১৮ এ সংক্রামক রোগের বিস্তার রোধে বাজার, গণ জমায়েত সাময়িকভাবে বন্ধ, দেশের অভ্যন্তরে এক স্থান হতে অন্য স্থানে চলাচল নিষিদ্ধকরণ করা হয়েছে। কিন্তু তামাক কোম্পানিগুলো শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত নির্দেশনার অজুহাতে এ আইন লঙ্ঘণ করে চলেছে।

‘কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঝুঁকি কমানোর পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুয়ায়ী তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় এগিয়ে নিতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা বিশেষ প্রয়োজন।’

চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশে ১৫ বছরের উর্ধ্ব জনগোষ্ঠির ৩ কোটি ৭৮ লাখ (৩৫.৩%) মানুষ তামাক সেবন করে (গ্লোবাল অ্যাভাট টোব্যাকো সার্ভে-২০১৭) ও তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে বছরে ১ লাখ ৬১ হাজারের অধিক লোক মারা যায় (দি টোব্যাকো এটলাস, ২০১৮)। তামাক খাত থেকে রাজস্ব আয়ের চাইতে তামাকজনিত রোগব্যাধির চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেশি।

‘বাংলাদেশ সরকার বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) স্বাক্ষর ও অনুসমর্থন করেছে এবং এর আলোকে ২০১৩ সালে ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন’ এর সংশোধনী পাস ও ২০১৫ সালে বিধিমালা জারি করেছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-এসডিজি অর্জনকে গুরুত্ব দিয়ে ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা তামাক নিয়ন্ত্রণকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ও ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন কর্তৃক আয়োজিত সাউথ এশিয়ান স্পিকার্স সামিট ২০১৬-এর সমাপনী অধিবেশনে (৩১ জানুয়ারি ২০১৬) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাকের ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।’

চিঠিতে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার স্বার্থে করোনা ভাইরাসজনিত কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলায় তামাক কোম্পানিকে প্রদত্ত অনুমতি প্রত্যাহারসহ সকল তামাক কোম্পানির উৎপাদন-সরবরাহ-বিপণন ও তামাকপাতা ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।