তলানিতে শেয়ারবাজারের লেনদেন

আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে দেশের শেয়ারবাজারে লেনদেনের গতি। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন কমে ৩০০ কোটি টাকার ঘরে নেমে এসেছে। এর মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর শেয়ারবাজারে সব থেকে কম লেনদেন হয়েছে। অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। এতে কমেছে প্রধান মূল্যসূচক। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর পর ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর শেয়ারবাজারে উল্লম্ফন দেখা দেয়। এমনকি লেনদেন দুই হাজার কোটি হয়েছিল। পরবর্তীতে খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বিএসইসির চেয়ারম্যান হওয়ার পর ধারাবাহিক দরপতন চলছে। ফলে প্রতিনিয়ত পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। দরপতনের সঙ্গে শেয়ারবাজারে লেনদন খরা দেখা দিয়েছে।

বেক্সিমকোর শেয়ার নিয়ে কারসাজির দায়ি গত মঙ্গলবার ৯ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে রেকর্ড ৪২৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এই জরিমানার খবরে বুধবার ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ১৩০ পয়েন্টের ওপরে কমে যায়। এ পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে। ফলে আবারও দরপতনের শঙ্কা পেয়ে বসে বিনিয়োগকারীদের। তবে লেনদেনের শেষদিকে দাম কমার তালিকা থেকে দাম বাড়ার তালিকায় চলে আসে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। ফলে একদিকে দাম বাড়ার তালিকা বড় হয়, অন্যদিকে মূল্যসূচক বেড়ে দিনের লেনদেন শেষ হয়। তবে লেনদেন তলানিতেই থাকে।দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে ২০৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ১৩৮টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৫০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৮ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৪৬২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২২১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৯৯০ পয়েন্টে অবস্থান করছে। সবকটি মূল্যসূচক বাড়ার দিনে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩১৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪৪০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন কমেছে ১২৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে সব থেকে কম লেনদেন হলো।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে বৃহস্পতিবার লেনদেন তলানিতে নামার দিনে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি অবদান লেনদেন হয়েছে ইবনে সিনার শেয়ার। কোম্পানিটির ১৫ কোটি ১৫ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা মিডল্যান্ড ব্যাংকের ১৩ কোটি ৮২ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১১ কোটি ৪৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক। এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- গ্রামীণফোন, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, এমজেএল বাংলাদেশ, ওরিয়ণ ফার্মা, লাভেলো আইসক্রিম এবং আফতাব অটোমোবাইল।অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৯ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৮৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৯টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৯৫টির এবং ২০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।

Scroll to Top