আবারও বাড়ছে বিদ্যুতের দাম

বিদ্যুতের দাম ফের বাড়ছে। প্রতি ইউনিট খুচরা বিদ্যুতের দাম গড়ে ৬ থেকে ১৪ শতাংশ এবং পাইকারি বিদ্যুতের দাম প্রায় ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে বিতরণকারী সংস্থা-কোম্পানিগুলো।

ওই প্রস্তাব যাচাই-বাছাই শেষে আজ সোমবার গণশুনানি শুরু করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।

বিইআরসি’র ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, বিদ্যুত্ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শুধু পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) লোকসানে রয়েছে। বাকি কোম্পানিগুলো লাভজনক অবস্থায় আছে। তেলের দাম কমানো হলে মুনাফার পরিমাণ আরো বাড়বে। তবে এ খাতে গৃহীত প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সরকারি অর্থায়ন নিশ্চিত করতে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে আগ্রহী সরকার। বিইআরসি আইন অনুযায়ী গণশুনানির পর ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে বিইআরসি সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে হবে। সব মিলিয়ে চলতি বছরেই বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়া হবে।

২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এখন পর্যন্ত পাইকারি পর্যায়ে ৫ বার এবং খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে ৭ বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর নিত্যব্যবহূত পণ্যটির দাম বাড়ানো হয়।

দেশে বিদ্যুত্ উত্পাদনকারী কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে বিদ্যুত্ কিনে বিতরণকারী সংস্থাগুলোর কাছে বিক্রি করে বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। পিডিবি নিজেই সবচেয়ে বেশি বিদ্যুত্ উত্পাদন করে। বিইআরসি সূত্র জানায়, বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে পাইকারি বিক্রির ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৭২ পয়সা (প্রায় ১৫ শতাংশ) বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে পিডিবি। বিভিন্ন বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্রাহক পর্যায়ে ৬ থেকে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে।

খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে ডিপিডিসি গড়ে ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ, ডেসকো ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ, ওজোপাডিকো ১০ দশমিক ৩৬ শতাংশ, আরইবি ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং পিডিবি ১৪ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। কয়েকটি কোম্পানি গ্রাহক পর্যায়ে ডিমান্ড চার্জ ও সার্ভিস চার্জ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে।

পাইকারি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিতে পিডিবির প্রস্তাব, বর্তমানে প্রতি ইউনিট পাইকারি বিদ্যুতের দাম ৪ টাকা ৮৭ পয়সা। কিন্তু প্রতি ইউনিট বিদ্যুত্ বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে সরবরাহ করতে গড়ে ব্যয় হয় ৫ টাকা ৫৯ পয়সা। এ ৭২ পয়সার ঘাটতি দূর করা দরকার।

এ দিকে বিদ্যুতের মূল্য পুনঃনির্ধারণে সংস্থাগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার রাজধানীর কাওরান বাজারে টিসিবি মিলনায়তনে গণশুনানি শুরু হচ্ছে। আগামী ৪ অক্টোবর পর্যন্ত ৭ কর্মদিবসে প্রতিদিন সকাল ১০ থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এ শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) পাইকারি (বাল্ক) ও খুচরা মূল্যহার পরিবর্তনের আবেদনের ওপর যথাক্রমে আজ এবং আগামীকাল মঙ্গলবার শুনানি হবে। মূল্যহার পরিবর্তনে আরইবির প্রস্তাবের ওপর বুধবার এবং ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) প্রস্তাবের ওপর বৃহস্পতিবার শুনানি গ্রহণ করা হবে।

আগামী ২, ৩ ও ৪ অক্টোবর যথাক্রমে ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) এবং নবগঠিত নর্থ ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (নওজোপাডিকো) প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

বিদ্যুতের বর্তমান মূল্য

দরিদ্র শ্রেণির গ্রাহকদের জন্য নির্ধারিত লাইফ লাইন এক থেকে ৫০ ইউনিট (কিলোওয়াট/ঘণ্টা) বিদ্যুত্ ব্যবহারকারীকে বর্তমানে কোম্পানিভেদে প্রতি ইউনিটে পরিশোধ করতে হয় ৩ টাকা ৩৩ পয়সা থেকে ৩ টাকা ৮৭ পয়সা। এক থেকে ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারী গ্রাহকরা ইউনিট প্রতি ৩ টাকা ৮০ পয়সা দেন। প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের মূল্য ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারীদের জন্য ৫ টাকা ১৪ পয়সা, ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারীদের জন্য ৫ টাকা ৩৬ পয়সা, ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের জন্য ৫ টাকা ৬৩ পয়সা, ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারীদের জন্য ৮ টাকা ৭০ পয়সা এবং ৬০০ ইউনিটের বেশি ব্যবহারকারীদের জন্য ৯ টাকা ৯৮ পয়সা।

কৃষিকাজে ব্যবহূত সেচ পাম্প ব্যবহারকারী পিডিবি, ডিপিডিসি, ডেসকো ও ওজোপাডিকোর গ্রাহকদের জন্য ইউনিট প্রতি ৩ টাকা ৮২ পয়সা এবং আরইবি ও পবিস গ্রাহকদের জন্য ৩ টাকা ৮২ পয়সা নির্ধারিত আছে। ক্ষুদ্র শিল্প গ্রাহকদের জন্য ফ্ল্যাট রেট ৭ টাকা ৬৬ পয়সা, অফ-পিক সময়ে ইউনিট প্রতি ৬ টাকা ৯০ পয়সা এবং পিক সময়ে প্রতি ইউনিট ৯ টাকা ২৪ পয়সা। অনাবাসিক খাতে বিদ্যুত্ বা দাতব্য প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের দাম ৫ টাকা ২২ পয়সা। বাণিজ্যিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট ফ্ল্যাট মূল্য ৯ টাকা ৮০ পয়সা, অফ-পিক সময়ে ৮ টাকা ৪৫ পয়সা এবং পিক সময়ে ১১ টাকা ৯৮ পয়সা। বৃহত্ শিল্পের (১১ কেভি লাইন ব্যবহারকারী) গ্রাহকদের জন্য ফ্ল্যাট রেট প্রতি ইউনিটে ৭ টাকা ৫৭ পয়সা, অফ-পিক সময়ে ৬ টাকা ৮৮ পয়সা, পিক সময়ে ৯ টাকা ৫৭ পয়সা।

অতি উচ্চচাপ (১৩২ কেভি) গ্রাহকদের জন্য ফ্ল্যাট রেট ইউনিট প্রতি ৭ টাকা ৩৫ পয়সা, অফ-পিক সময়ে ৬ টাকা ৭৪ পয়সা এবং পিক সময়ে ৯ টাকা ৪৭ পয়সা। পিডিবির ২৩০ কেভি লাইন ব্যবহারকারী গ্রাহকরা বর্তমানে ফ্ল্যাট রেট ৭ টাকা ২৫ পয়সা, অফ-পিক সময়ে ৬ টাকা ৬৬ পয়সা এবং পিক সময়ে ৯ টাকা ৪০ পয়সা করে ইউনিট প্রতি পরিশোধ করতে হবে। উচ্চচাপ (৩৩ কেভি) ব্যবহারকারী গ্রাহকরা ফ্ল্যাট রেটে ইউনিট প্রতি ৭ টাকা ৪৯ পয়সা, অফ-পিক সময়ে ৬ টাকা ৮২ পয়সা এবং পিক সময়ে ৯ টাকা ৫২ পয়সা পরিশোধ করছেন। রাস্তার বাতি ও পানির পাম্পের ক্ষেত্রে ইউনিট প্রতি ফ্ল্যাট রেট ৭ টাকা ১৭ পয়সা।

বাংলাদেশ সময় : ১২৫৮ ঘণ্টা, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭,
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/ডিএ