বাড়তে পারে বাড়ি ভাড়া!

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় নতুন নিয়ম অনুযায়ী বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করা হবে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এ নিয়ে সমন্বয় করে কাজ করছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, রাজধানীতে ১২ শতাংশ হারে আগের নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী মালিকদের কাছ থেকে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করা হত; এখন তা বাসা ভাড়া অনুযায়ী আদায় করা হবে।

জানা গেছে, ১৯৯০ সালের আইন অনুযায়ী তৎকালীন বাসা ভাড়ার মূল্য অনুযায়ী এত বছর সিটি করপোরেশন বাড়ির মালিকদের থেকে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করত। কিন্তু এখন ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে বর্তমান ভাড়া অনুযায়ী হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করার জন্য সমন্বয় করেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন।

কর্তৃপক্ষ বলছে, ২৫ বছর আগে কোনো কোনো বাসার ভাড়া ছিল ৫ হাজার টাকা; যদিও ওই বাসার ভাড়া বেড়েছে; তবে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়েনি। ফলে এক্ষেত্রে সমতা আনা হচ্ছে। এ নিয়ে বাড়িওয়ালাদের কাছেও ইতিমধ্যে নোটিস জারি করা হয়েছে।

তবে এই পরিবর্তনের ফলে ভাড়াটেদের মধ্যেও দেখা দিতে পারে নতুন আতঙ্ক। কয়েকজন ভাড়াটিয়া জানিয়েছেন, এই পরিবর্তনে বাড়ির মালিকরা তাদের ভাড়া বাড়িয়ে ‘ক্ষতি’ পুষিয়ে নিতে পারেন। এতে বাসা ভাড়া মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়ে যাবে। মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষ পড়বে মহাবিড়ম্বনায়।

রাজধানীর অনেক এলাকায় হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে হাইকোর্ট একটি রুল দিয়েছিল। গত মাসে হাইকোর্টের রিট বাতিল হওয়ায় হোল্ডিং ট্যাক্স সমন্বয়ে মনযোগী হয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন।

তবে এই নিয়মে ২০১৬ সালের জুলাই মাস থেকে বর্তমান সমন্বয় করা বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করতে হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বেলাল।

তিনি অর্থসূচককে বলেন, বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো হয়নি। শুধু বর্তমান ভাড়ার সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। আগে রাজধানীবাসী ১৯৯০ সালের বাড়ি ভাড়ার মূল্য অনুযায়ী বাড়ির ট্যাক্স পরিশোধ করত। এখন থেকে বর্তমান ভাড়া অনুযায়ী হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করবে।

দুই সিটি করপোরেশন থেকে জানা যায়, গত ২৭ বছর রাজধানীর বাড়ির মালিকরা কেউ কম-কেউ বেশি বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করতেন। মূলত অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন ১৯৮৯-৯০ সালে সাধারণ কর হার নির্ধারণ করে। এরপর ২০০৩ এবং ২০০৮ সালের পর নবনিবন্ধিত নতুন বাড়ির মালিকদের সেই সময়ের ভাড়ার মূল্য অনুযায়ী বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করতে হত। কিন্তু ২০০৩ সালের আগে নিবন্ধন পাওয়া বাড়ির মালিকরা ১৯৮৯ সালের আগের বাড়ি ভাড়ার মূল্য অনুযায়ী হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করত।

জানা গেছে, ২০০৮ সালের পর থেকে বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্সে আর কোনো সমন্বয় না আনায় সেই সময়ে আদায় করা বাড়ির মূল্য অনুযায়ী বর্তমানে হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করছে বাড়ির মালিকরা। কিন্তু এই কয়েক বছরে কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে বাসা ভাড়া। এছাড়া রাজধানীর বাড়ি মালিকরা তিন ধরনের ভাড়ার মূল্য অনুযায়ী বাড়ির ট্যাক্স পরিশোধ করায় ট্যাক্স আদায়ে বৈষম্য দেখা দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা রবীন্দ্রশ্রী বড়ুয়া বলেন, আগের হারেই ট্যাক্স আদায় হবে। তিনি জানান, নিয়মানুযায়ী প্রতি ৫ বছর পর পর সাধারণ সমন্বয় করার নিয়ম। ঢাকা শহরে প্রতি বছরে বাড়ি ভাড়ার ধরণ পাল্টায়। নতুন বাড়ি নির্মাণ হয়, নতুন ভাড়া নির্ধারণ হয়। কিন্তু বিগত ২৭ বছর সিটি করপোরেশনে কোনো সমন্বয় হয়নি।

তিনি বলেন, ২৭ বছরে ৫ তলা ভবন ১২ তলা হয়েছে। ১ তলা ভবন হাইয়েস্ট বিল্ডিং হয়েছে। কিন্তু কারো হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়েনি। গত বছর থেকে হোল্ডিং ট্যাক্সে সমতা আনার কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি জানান, সব এলাকায় একই রেটে বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করা হয় না। গুলশানের বাড়ির ট্যাক্সের হার রামপুরা এলাকায় আদায় করা যায় না। প্রতি ওয়ার্ডের বাড়ির ট্যাক্সের জন্য আলাদা আলাদা রেট আছে।

বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি পেলে বাড়ি ভাড়ায় প্রভাব পড়বে কি-না সেই বিষয়ে আপনারা ভাবছেন কি? জবাবে তিনি বলেন, বাড়ি ভাড়া বাড়ার কোনো কারণ নেই। রাজধানীতে এমনি প্রতি বছর বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি পায়। বাড়ির মালিক এতো দিন কম টাকা ট্যাক্স দিয়ে এসেছে। এখন তিনি যে পরিমাণ বাড়ি ভাড়া আদায় করেন সেই অনুযায়ী ট্যাক্স পরিশোধ করবেন। এক্ষেত্রে বাড়ি ভাড়া বাড়ানোর কোনো কারণ নেই।

বাংলাদেশ সময় : ২৩১২ ঘণ্টা, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭,
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এ