‘সত্যতা’ মিলেছে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের চুল কাটার

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে অবস্থিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের (রবি) শিক্ষার্থীদের মাথার চুল কেটে দেওয়ার ঘটনায় শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত শিক্ষিকার অপসারণের দাবিতে আমরণ অনশন করছেন। তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রশাসনিক ভবনসহ অন্যান্য ভবনেও। পরীক্ষাও বর্জন করেছেন তারা।

এদিকে, ইতিমধ্যেই এ ঘটনার তদন্তে গঠিত কমিটির সদস্যরা তদন্ত কাজ শুরু করেছেন। ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন বলেও জানিয়েছেন কমিটির সভাপতি। বুধবার দুপুর থেকে রবির অস্থায়ী ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে অনশন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের আরেকটি অংশ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে ক্যাম্পাস ও আশেপাশের এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এ সময় তারা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে স্থায়ীভাবে অপসারণের দাবি জানান।

অনশনে অংশ নেওয়া সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র নোমান সিদ্দিকী শান্ত বলেন, ‘আমরা অভিযুক্ত শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন মুক্ত ক্যাম্পাস চাই। এ কারণে প্রশাসনিক ভবনসহ অন্যান্য কয়েকটি ভবনেও তালা ঝুলিয়ে দিয়েছি। তাকে অপসারণ না করা পর্যন্ত আমাদের অনশন ও আন্দোলন চলতে থাকবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ১৪ জন শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে অংশ নিয়েছি। অন্যরা মিছিল-সমাবেশের মাধ্যমে কর্মসূচি পালন করছে।’

গতকাল বুধবার অনশন চলাকালে হাবিবুর রহমান হাবিব ও মাজেদুল ইসলাম নামে দুজন ছাত্র অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়ে তারা আজকে আবারও অনশনে ফিরেছে।

আজ বৃহস্পতিবার তদন্ত কমিটির সভাপতি এবং রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগের প্রভাষক ও চেয়ারম্যান লায়লা ফেরদৌস হিমেল বলেন, ‘চুল কেটে দেওয়ার ঘটনাস্থলে একটি সিসি ক্যামেরা লাগানো ছিল। ওই ক্যামেরার ফুটেজ আমাদের হাতে এসেছে। ফুটেজে কাঁচি হাতে শিক্ষার্থীদের চুল কাটার ঘটনার সত্যতা মিলেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তদন্ত কমিটির সদস্যরা মিলে ইতিমধ্যে একাধিক বৈঠক করেছি। আজও বৈঠক করব। আশা করছি আগামীকালের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিতে পারব। প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর একটি প্রেস রিলিজ গণমাধ্যমকর্মীদেরও দেওয়া হবে। দেখানো হবে সিসি ক্যামেরার ফুটেজও। ’

এদিকে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন তীব্র হচ্ছে এবং আমরন অনশনের দ্বিতীয় দিনে অনশনরত শিক্ষার্থীদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপজেলার কান্দাপাড়ার রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগিয়ে দেওয়ার ভিসিসহ শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারী কার্যত অবরুদ্ধ রয়েছেন।

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. তানিয়া ফেরদৌস জানান, অনশনরতদের মধ্যে প্রায় সবাই কম-বেশি অসুস্থ। তবে এদের মধ্যে জেহাদ নমের এক ছাত্রের অবস্থা গুরুতর।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সোহরাব আলী বলেন, ‘বুধবার রাত ১১টার দিকে একাডেমিক ভবনে অনশনরতদের আমরা দেখতে গিয়েছিলাম। ছাত্রদের সকল দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়ার পরও তারা আন্দোলন করছে। আমরা তাদের জানিয়েছি ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী অব্যাহতির বিষয়টি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ব্যাপার। ’

তিনি জানান, অনশনরতদের জন্য সার্বক্ষণিক চিকিৎসক এবং অ্যাম্বুলেন্স সার্পোট রেডি রাখা হয়েছে। আজ রাত ৮টায় সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করা হয়েছে। একইসঙ্গে ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কেটে নেওয়ার বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটিকে ৫ দিনের মধ্যে রির্পোট জমা দিতে বলা হয়েছে। তিনি মনে করেন শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এখন আর যৌক্তিক পর্যায়ে নেই।