জবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা নিয়ে যা বললেন সেই সহকারী প্রক্টর

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় মধ্যরাতে উত্তাল হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ক্ষোভে ফেটে পড়েন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের দ্রুত বিচারের দাবিতে রাতভর ক্যাম্পাসে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। পরে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের শান্ত করতে ক্যাম্পাসে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম।

গত শুক্রবার দিবাগত রাতে (১৬ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন ভিসি সাদেকা হালিম। আশ্বাস দেন, ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত কাজ শেষ করার। এ সময় অবন্তিকার অভিযোগপত্র তাকে দেয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।

তবে ওই সহকারী প্রক্টর গণমাধ্যমকে বলেন, মেয়েটি এক থেকে দেড় বছর আগে। কয়েকজন সহপাঠী নিয়ে প্রক্টর অফিসে আসে। সেসময় তৎকালীন প্রক্টর মোস্তফা কামাল স্যার, আমিসহ আরো কয়েকজন সহকারী প্রক্টর অফিসে ছিলাম। মেয়েটা ফেক আইডি ব্যবহার করে তার বন্ধুদের এসএমএস দিত। এটা নিয়ে থানায় জিডি হয়েছে বলে আমাদেরকে জানানো হয়। পরে মেয়েটা স্বীকার করে। এরপর তার পরিবারের লোকজন অনুরোধ করে জিডি তুলে নেবার জন্য। তখন সকল প্রক্টরিয়াল টিম মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেয়, তিন মাস পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। কোন ঝামেলা না হলে জিডি তুলে নেয়া হবে। আমি কখনো মেয়েটার সঙ্গে একা কথা বলিনি। সিসিটিভি ফুটেজ বা প্রক্টর অফিসে লিখিত অভিযোগ দেখলেও বুঝা যাবে। আপনারা ঘটনা তদন্ত করে দেখুন। আমি দোষী হলে শাস্তি দিন। কিন্তু আগেই আমাকে দোষী বানাবেন না দয়া করে। না হলে আমারও সুইসাইড (আত্মহত্যা) করা লাগবে।

এদিকে ঘটনার পর থেকেই মুঠোফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে রয়েছেন অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আম্মান সিদ্দিকী। শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে আম্মান সিদ্দিকী নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে একটি পোস্ট করেন। সেখানে তিনি লিখেন, \”দুই বছর আগে অবন্তিকা নিজেই ফেসবুকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে সহপাঠীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদমূলক কথা লিখেন। পরে বিষয়টি সে নিজে স্বীকার করে নিলে প্রক্টর অফিস থেকে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেয়া হয়। এরপর অবন্তিকার পরিবারের পক্ষে তার বাবা এসে অঙ্গীকার নামা দেন যে, তার মেয়ে ভবিষ্যতে এমন কোন কাজ করবে না। দুই বছর পর সে আত্মহত্যা করল কেন, এটা আমি জানি না। দুই বছর ধরে তার সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নেই।\” এ সংক্রান্ত ডিজির কপি, কারণ দর্শানোর নোটিশ, অঙ্গীকারনামা এবং কিছু ম্যাসেঞ্জার বার্তার স্ক্রিনশট লেখার সঙ্গে সংযুক্ত করে দেন আম্মান।

অপরদিকে ফেসবুক যে পোস্ট দিয়ে অবন্তিকা আত্মহত্যা করেন সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমি যদি কখনো সুইসাইড করে মারা যাই, তবে আমার মৃত্যুর জন্য একমাত্র দায়ী থাকবে আমার ক্লাসমেট আম্মান সিদ্দিকী আর তার সহকারী হিসেবে তাকে সাপোর্টকারী জগন্নাথের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম। আম্মান যে আমাকে অফলাইন অনলাইনে থ্রেটের উপর রাখতো সে বিষয়ে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করেও আমার লাভ হয় নাই। দ্বীন ইসলাম আমাকে নানান ভাবে ভয় দেখায় আম্মানের হয়ে যে আমাকে বহিষ্কার করা ওনার জন্য হাতের ময়লার মতো ব্যাপার। আমি জানি এখানে কোনো জাস্টিস পাবো না।

পোস্টে আরো উল্লেখ করা হয়, আমি উপাচার্য সাদোকা হালিম ম্যামের কাছে এই প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক হিসেবে বিচার চাইলাম। আর আমি ফাঁসি দিয়ে মরতেসি।

এদিকে আত্মহত্যাকারী ছাত্রী ফাইরুজ অবন্তিকার ফেসবুক পোস্ট দ্বারা অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আম্মানকে সাময়িক বহিষ্কার ও আম্মানকে সহায়তাকারী হিসেবে উল্লেখ করা সহকারী অধ্যাপক দ্বীন ইসলামকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একই সাথে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে আছেন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন ও সদস্য সচিব আছেন আইন শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার অ্যাডভোকেট রঞ্জন কুমার দাশ। এছাড়াও সদস্য হিসেবে আছেন, সামাজিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন, আইন অনুষদের ডিন ড. এস এম মাসুম বিল্লাহ ও সংগীত বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ঝুমুর আহমেদ।

শুক্রবার রাত ১০টার দিকে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের (১৩তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকা কুমিল্লায় নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। তার মৃত্যুতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম এবং ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো. হুমায়ুন কবীর চৌধুরী গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেন।