৬ ভিআইপি ফেঁসে যাচ্ছেন মোবাইলের ফরেনসিক টেস্টে

চিত্রনায়িকা পরীমনি, মডেল মরিয়ম আক্তার মৌ ও ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসা গ্রেফতারের পর তাদের সঙ্গে ‘বিশেষ সম্পর্ক’ থাকা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা দ্রুত নষ্ট করে ফেলেন তাদের ঘনিষ্ঠ আলাপচারিতা, অবৈধ লেনদেন, অন্তরঙ্গ মেলামেশার ছবি-ভিডিওসহ অন্যান্য তথ্য-প্রমাণ। তাদের এসব দামি গ্রাহকরা যাতে বিপদে না পড়েন এজন্য তড়িঘড়ি করে একই কাজ করেছেন পরী, মৌ, পিয়াসাও।

কিন্তু তাদের সব চেষ্টাই ভেস্তে যাচ্ছে সিআইডির প্রযুক্তিগত তদন্ত কৌশলের কাছে। তদন্তে সংশ্লিষ্ট সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, পরীমনি, মৌ, পিয়াসা, নজরুল ইসলাম রাজসহ এ সিন্ডিকেটের সবার মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপসহ অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস জব্দ করে সেগুলো করা হচ্ছে ফরেনসিক ল্যাব টেস্ট। এতে এসব ডিভাইস থেকে মুছে ফেলা ছবি, ভিডিও, কথোপকথন, ই-মেইলসহ সবকিছু পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে। গোয়েন্দাদের ধারণা, এর মাধ্যমে এ চক্রের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কার কী সম্পর্ক ছিল তা জানা যাবে। কাদের তারা ব্ল্যাকমেইল করে নিয়মিত অর্থ আদায় করত তা বেরিয়ে আসবে। আদালতে তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করাও সহজ হবে।

উল্লেখ্য, মডেল পিয়াসার সঙ্গে একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কথোপকথনের অডিও রেকর্ড; মডেল মৌয়ের সঙ্গে একটি বীমা কোম্পানির চেয়ারম্যানের গোপন ভিডিও; মডেল পিয়াসার সঙ্গে একজন অলঙ্কার ব্যবসায়ীর কয়েকটি অডিও রেকর্ড; পরীমনির সঙ্গে একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ ব্যক্তির কল রেকর্ড; ব্যবসায়িক সংগঠনের নেতার সঙ্গে কথোপকথন অডিও এবং একজন প্রভাবশাল রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে তোলা ছবি রয়েছে। সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক রোববার সাংবাদিকদের জানান, “নায়িকা পরীমনি ইস্যুতে অনেক ভিআইপির নাম পাওয়া গেছে। এসব বিষয় যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে এগুলো এখন বলা সম্ভব না। অভিযোগ নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হওয়ার পরই নাম জানানো হবে। আসামিদের মোবাইল-ল্যাপটপসহ বেশ কিছু ডিভাইস জব্দ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় তথ্য না পেলে তাদের আবারও রিমান্ডের আবেদন করা হবে।”

শেখ ওমর ফারুক আরও বলেন, “বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি তদন্তে আসছে। তাদের নাম যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। পরীমনিসহ অন্যদের মামলার তদন্তভার আমাদের কাছে এসেছে। মামলাগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করতে আমাদের সময় লাগবে। মামলাগুলোর তদন্তের কাজ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে এবং যারা এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তারা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।” এডিসি সাকলায়েনের সঙ্গে পরীমনির সম্পর্ক কী, এ বিষয়ে সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদে পরীমনি কোনো তথ্য দিয়েছেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে ওমর ফারুক বলেন, “আমাদের কাছে যেসব মামলা এসেছে বেশিরভাগই মাদকদ্রব্য সংক্রান্ত মামলা। মাদকদ্রব্য সম্পর্কিত বিষয়গুলো আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি। তদন্তের বিষয়গুলো ঠিক করেই আমরা অগ্রসর হচ্ছি। যদি অন্য কোনো বিষয় থাকে আমরা পরে তদন্তের মাধ্যমে এগুলো নিয়ে আসব।” কোনো ইনোসেন্ট লোক যেন ভিকটিম না হয় সে ব্যাপারে সিআইডি কাজ করছে দাবি করে ওমর ফারুক বলেন, “ব্যাংকের অনেক লোক জড়িত আছে, এমন খবর প্রকাশিত হয়েছে। তবে আসলেই তারা এ ধরনের ঘটনায় সম্পৃক্ত কি-না এ বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “সিআইডির উদৃতি দিয়ে যেসব ব্যক্তির নাম প্রকাশিত হয়েছে, সেসব নাম সিআইডি থেকে দেওয়া হয়নি। এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কারও নাম আমরা এখনো প্রকাশ করিনি। আমাদের কাছে অনেক তথ্য আছে, অনেক নাম আছে। যাচাই-বাছাই করার পরেই আমরা বলতে পারব।” তিনি আরও বলেন, “ব্ল্যাকমেইলের শিকার যারা হয়েছেন- তাদেরও নাম আমরা পেয়েছি। তবে তাদের সঙ্গে এখনো আমরা কথা বলতে পারিনি। তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলব। তাদের বক্তব্য আমরা নেব। বক্তব্য যাচাই-বাছাই করব। যাচাই-বাছাই করেই পরবর্তিতে বলতে পারব- আরও কারা এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত।” রিমান্ডে থাকা ব্যক্তিদের বাসায় তলস্নাশি চালিয়ে ল্যাপটপ এবং ইলেকট্রনিক ডিভাইস উদ্ধার এবং সেগুলো ফরেনসিক ডিপার্টমেন্টে দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

মোবাইল ফোন ফরেনসিক কী?

আইটি বিশেষজ্ঞরা জানান, মোবাইল ফোন ফরেনসিক আইনি প্রমাণের উদ্দেশ্যে এক ধরনের বৈদ্যুতিক ডেটা সংগ্রহ। এটি ডিজিটাল ডেটার ট্রেইল থেকে অপরাধ প্রমাণ সংগ্রহ করার পদ্ধতি হিসেবে তদন্তকারীদের একটি দরকারি সরঞ্জাম। ফৌজদারি প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত মুছে ফেলা মোবাইল ফোন ফাইল উত্তোলন মোবাইল ফোন ফরেনসিক তদন্তকারীদের প্রাথমিক কাজ। মোবাইল ফোনের ফরেনসিকগুলোর ধরনগুলোর মধ্যে রয়েছে টেপযুক্ত কথোপকথন, ডিজিটাল ফোন ছবি, মোবাইল ফোনের পাঠ্য বা ইমেইল, ফোন নম্বর তালিকা এবং মোবাইল ফোন ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডিং। মোবাইল ফোনের ফরেনসিকগুলোর বিকাশের কারণে, আইন প্রয়োগকারীরা মোবাইল ফোনের ফরেনসিকের মাধ্যমে আরও সহজেই পেডোফিল, স্টলকার বা হয়রানকারীদের শনাক্ত করতে পারে।