করোনা: দেশে এক সপ্তাহে মৃত্যু বেড়েছে ৬ শতাংশ

মহামারী করোনার নমুনা পরীক্ষা কমার পাশাপাশি দেশে নতুন রোগী শনাক্তও কমছে। তবে মৃত্যু আগের তুলনায় বাড়ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশে করোনায় মৃত্যু ৬ শতাংশ বেড়েছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে করোনায় মোট মারা গেলেন ২ হাজার ৮৭৪ জন।

নতুন রোগী কিছুটা কমে এলেও এখনো বিশ্বে যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছে, তার শীর্ষ দশেই আছে বাংলাদেশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, ২১৫ দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে গত এক সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি নতুন রোগী বেড়েছে, এমন দেশের তালিকায় বাংলাদেশ দশম।

আপাতদৃষ্টে সংক্রমণের লেখচিত্র বা গ্রাফ দেখলে মনে হবে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে এসেছে। কিন্তু আসলে তা নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩ জুলাইয়ের বৈশ্বিক পরিস্থিতি প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন রোগী বাড়ছে এমন দেশের মধ্যে বাংলাদেশ দশম। কিছুদিন ধরে এই দেশে রোগী শনাক্ত ধীরে ধীরে কমছে। একই সঙ্গে শনাক্তের পরীক্ষাও কমছে। কিন্তু রোগী শনাক্তের হার ২০ শতাংশের ওপরে থাকছে। এটা নির্দেশ করে যে এখানে মূলত পরীক্ষা কমে যাওয়ায় নতুন রোগী শনাক্ত কমছে, সংক্রমণ কমছে না।

৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্তের কথা জানায় সরকার। জুনের শুরু থেকে দৈনিক নতুন রোগী শনাক্ত তিন হাজারের ওপরে চলে যায়। এ সময় থেকে পরীক্ষাও বাড়ানো হয়। তবে জুলাইয়ের শুরু থেকে আবার পরীক্ষা কমে গেছে। এতে দৈনিক নতুন রোগী শনাক্ত তিন হাজারের নিচে নেমে এসেছে।

গতকাল শনিবার দেশে সংক্রমণের ২০তম সপ্তাহ শেষ হয়। গত সপ্তাহের তুলনায় ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ মৃত্যু বেড়েছে। ২০তম সপ্তাহে মোট ২৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে মারা গেছেন প্রায় ৪২ জন। আগের ১৯তম সপ্তাহে মোট মৃত্যু হয়েছিল ২৭৬ জনের। অবশ্য করোনা আক্রান্তের শীর্ষে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে এখনো মৃত্যুর হার তুলনামূলক কম, ১ দশমিক ৩ শতাংশ। তবে সরকারি হিসাবের এসব মৃত্যুর বাইরে কোভিড-১৯-এর উপসর্গ নিয়ে অনেকে মারা গেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের (সিজিএস) বাংলাদেশ পিস অবজারভেটরি (বিপিও) দেশে এমন উপসর্গ নিয়ে ১ হাজার ৮৭৪ জনের মৃত্যুর তথ্য পেয়েছে। এসব মৃত্যু করোনায় হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত নয়।

গত সপ্তাহে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৯ হাজারের কিছু বেশি, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ৮ দশমিক ৭১ শতাংশ কম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পরীক্ষা কম হয়েছে ৫ শতাংশ। এ সপ্তাহে পরীক্ষার তুলনায় সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ২২ দশমিক ৮০ শতাংশ।

পরীক্ষা করানোর আহ্বান
জুলাইয়ের শুরু থেকে পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করাসহ কিছু নিয়ন্ত্রণ আরোপের পর থেকে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কমতে শুরু করে। গতকাল নিয়মিত সংবাদ বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা বলেন, কিছুদিন ধরে পরীক্ষার জন্য নমুনা কম আসছে। কারও লক্ষণ উপসর্গ থাকলে বা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে থাকলে তাঁরা অবশ্যই নমুনা পরীক্ষা করাবেন। প্রতিটি উপজেলা ও জেলায় নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা আছে।

অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, গত শুক্রবার সকাল আটটা থেকে গতকাল শনিবার সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১০ হাজার ৪৪৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ২ হাজার ৫২০ জনের দেহে সংক্রমণ পাওয়া যায়। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ২ লাখ ২১ হাজার ১৭৮। এর মধ্যে মারা গেছের ২ হাজার ৮৭৪ জন, সুস্থ হয়েছেন এক লাখ ২২ হাজার ৯০ জন।

নাসিমা সুলতানা বলেন, যাদের প্রয়োজন, তাদের নমুনা পরীক্ষা করিয়ে রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করতে হবে। সেই সঙ্গে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি অর্থাৎ সব সময় মাস্ক পরা, কিছুক্ষণ পরপর সাবান–পানি দিয়ে হাত ধোয়া, জনসমাগম এড়িয়ে চলা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। সামনে ঈদ। ঈদের ছুটিতে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।
:প্রথম আলো