রায়হান হত্যা: ঘটনা লুকাতে চেয়েছিল পুলিশ

সিলেটে পালিশ হেফাজতে নির্যাতনে রায়হান আহমেদের (৩৩) মৃত্যুর ঘটনাটি শুরু থেকেই লুকাতে চেয়েছিল আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পলিশ। রায়হানকে ‘ছিনতাইকারী’ এবং ‘গণপিটুনি’তে তাঁর মৃত্যু হয়েছে পুলিশ এমন দাবিও করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে। বরখাস্ত করা হয় ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চারজনকে। অথচ স্থানীয় পুলিশের হেফাজত থেকে পালিয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন মূল হোতা আকবর। হঠাৎ তাঁর খোঁজ মিলছে না। অথচ মঙ্গলবারও আকবর নিজেদের হেফাজতে রয়েছে বলে দাবি করেছিল পুলিশ।

এদিকে এ ঘটনায় রায়হানের স্ত্রীর করা মামলার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গতকাল বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি এবং নগরের কাষ্টঘর এলাকা পরিদর্শন করেছে তদন্তদল। এ ছাড়া রায়হানের লাশ ফের ময়নাতদন্তের আদেশ দিয়েছেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। শিগগিরই লাশ তুলে ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ খালেদ উজ জামান।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বন্দরবাজার ফাঁড়িতে এনে এসআই আকবরের নেতৃত্বেই রায়হানের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছিল। পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার রাতে নগরের কাষ্টঘর এলাকা থেকে রায়হানকে ধরে ফাঁড়িতে নিয়ে আসেন পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আশিক এলাহী। এ সময় দুই কনস্টেবল রায়হানকে দুই দিক থেকে ধরে রাখেন।

আর এসআই আকবর নির্যাতন চালান। একপর্যায়ে রায়হানকে ফাঁড়িতে রেখেই বেরিয়ে যান আকবর, আশিকসহ নির্যাতনকারী পুলিশ সদস্যরা। এরপর ফাঁড়িতে ডিউটিতে থাকা এক কনস্টেবল ভোর ৬টার দিকে দেখতে পান রায়হানের নিথর

দেহ পড়ে আছে। তিনি আকবরকে বিষয়টি জানালে তাঁরা ফাঁড়িতে ফিরে আসেন। সকাল ৬টা ২২ মিনিটে একটি অটোরিকশা আসে বন্দর ফাঁড়ির সামনে। এর ঠিক ২ মিনিট পর ৬টা ২৪ মিনিট ২৪ সেকেন্ডে দুই পুলিশের কাঁধে ভর করে রায়হানকে অটোরিকশায় তুলতে দেখা যায়। এরপর তাঁকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তখনও জীবিত ছিলেন রায়হান। হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি মারা যান।

এ ঘটনার পরদিন সোমবার রাত পর্যন্ত নির্যাতনের মূল হোতা এসআই আকবর পুলিশের জিম্মায় ছিলেন। ওই দিন সিলেট মহানগর পুলিশের গঠিত তদন্ত দলের মুখোমুখিও হন তিনি। পরে বিভিন্ন সূত্র দাবি করে, ওই রাত থেকেই আকবর পলাতক। কিন্তু এ বিষয়ে পুলিশের স্পষ্ট কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। গত মঙ্গলবার বিকেলে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) জ্যোতির্ময় সরকার বলেছিলেন, ‘আমার জানা মতে আকবরসহ সবাই পুলিশ লাইন্সেই আছেন।’

তবে আকবর পুলিশ লাইন্সে আছেন এমন দাবি মঙ্গলবার পর্যন্ত করা হলেও গতকাল পুলিশ বলেছে আকবরকে তারা খুঁজছে। গতকাল ফের জ্যোতির্ময় সরকারের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে ফোন ধরেন বি এম আশরাফ উল্লাহ তাহের। তিনি জানান, এসএমপির গণমাধ্যমের দায়িত্বে পরিবর্তন আনা হয়েছে। জ্যোতির্ময় সরকারের স্থলে তিনি এখন অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে এসএমপির মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছেন। আকবর কোথায় আছেন কিংবা তাঁর অবস্থান সম্পর্কে পুলিশ জানে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাঁকে গ্রেপ্তারে পুলিশ সর্বাত্মকভাবে কাজ করছে। যেকোনো সময় ভালো খবর জানতে পারবেন।’

তদন্ত শুরু করেছে পিবিআই: এদিকে এ ঘটনার আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্তে নেমেছে পিবিআই। তারা দুটি ঘটনাস্থল বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি এবং নগরের কাষ্টঘর এলাকা পরিদর্শন করেছে। পিবিআইয়ের তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানান, বন্দরবাজার ফাঁড়িতে কোনো আলামত পাওয়া যায় কি না তা তাঁরা খোঁজার চেষ্টা করছেন।

তোলা হবে রায়হানের লাশ : ফের ময়নাতদন্তের জন্য রায়হানের লাশ তোলার অনুমতি দিয়েছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক। এর আগে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই বাতেন রায়হানের লাশ কবর থেকে তোলার অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন।

প্রতিবাদ-বিক্ষোভ : এদিকে রায়হান হত্যার বিচারের দাবিতে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। গতকাল বিকেলে নগরের চৌহাট্টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে সিলেট উন্নয়ন সংস্থা।
:কালের কণ্ঠ