করোনা: হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর ভিড়, লাগাম টানতে হবে সংক্রমণের উৎসে

বৈশ্বিক মহামারি সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে দিন কিংবা রাতে সবসময় হাসপাতালে লেগেই আছে নতুন রোগীর ভিড়। মধ্যরাতেও সন্দেহভাজন কিংবা কোভিড আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়ে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছুটতে হচ্ছে স্বজন আর পরিবারের সদস্যদের। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যসেবার নাজুক অবস্থা তুলে ধরে ক্ষোভ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।

আজ শনিবার (৩ এপ্রিল) ঘড়ির কাঁটা তখন রাত একটা পেরিয়ে গেছে। গভীর রাতের নীরবতা ভেঙে একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স আসছে রাজধানীর কোভিড নির্ধারিত কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। ভর্তির অপেক্ষায় নানা বয়সী মানুষ। যদিও রোগী চাপে ২৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে এখন ঠাঁই ৪৩২ জন করোনা আক্রান্ত রোগী।

পেশায় চিকিৎসক তৌহিদুল ইসলাম কয়েক হাসপাতালে গিয়েও পাননি ভর্তির সুযোগ। অবশেষে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে মিলল সেই সুযোগ। কোভিড সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে এমন তিক্ত অভিজ্ঞতা পেতে হচ্ছে অনেককেই।

করোনার লক্ষণ বয়ে বেড়ানো ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বিড়ম্বনাটা আরো বেশি। মোহাম্মদপুর থেকে আসা পঞ্চাশোর্ধ্ব শেফালি বেগম ভুগছেন শ্বাসকষ্টসহ কোভিডের নানা উপসর্গে। কয়েক হাসপাতাল ঘুরে এসেছেন কুর্মিটোলা জেনারেলে কিন্তু সুযোগ মেলেনি এখানেও ভর্তির।

দিন কিংবা রাতের সময়ই রোগী আসার ভিড় থাকলেও কিছুদিন আগেও চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। সপ্তাহ দুয়েক আগেও হাসপাতালটিতে ভর্তি ছিলেন বর্তমানের তুলনায় অর্ধেক রোগী।

হাসপাতালের গেটে পাহারায় থাকা আনসার সদস্যরা এমন তথ্য জানান। হাসপাতালের ওপর চাপ কমাতে হলে লাগাম টানতে হবে সংক্রমণের উৎসে এমনটাই মত দেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজীর আহমেদ বলেন, আমাদের এখন দরকার সমস্ত প্রকার চলাচল বন্ধ করা। যেমন হতে পারে অফিস আদালত বন্ধ করে দেওয়া, অফিস আদালত বন্ধ করে দিলেই অনেক চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। ক্ষেত্রবিশেষে যে এলাকা বেশি ঝঁকিপূর্ণ সেখানে কলকারখানা বন্ধ করে দেওয়া।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. রিদওয়ানুর রহমান বলেন, যখন ভ্যাকসিন এসে গেছে তখন একটা হইহই-রইরই পড়ে গেছে, আমরা ভ্যাকসিন পেয়ে গেছি, আমাদের এখান থেকে করোনা শেষ, করোনা চলে গেছে- শারীরিক ভাষা এটা ছিল (বডি ল্যাংগুয়েজ)। এ বডি ল্যাংগুয়েজের কারণে মানুষ সবকিছু ছেড়ে দিয়েছে। খুব কঠিন অবস্থা যাচ্ছে। এখন হচ্ছে অ্যাডমিস্ট্রিটিভ অ্যাকশন দরকার।

করোনার নতুন আচরণের সামনে হার্ড ইমিউনিটিও কোনো কাজে আসবে না জানিয়ে তার শঙ্কা- নতুন করোনা যদি দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে টিকাও অকার্যকর হবে। তাই এখন লকডাউনের বিকল্প নেই বলেও মনে করেন তিনি।

অধ্যাপক ডা. রিদওয়ানুর রহমান আরো বলেন, জিনকে পরিবর্তন করে একটা নতুন ভাইরাস হয়েছে, ওই ভাইরাস এখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। এটা একটা নতুন ভাইরাসের মতো করে সংক্রমিত হচ্ছে। আগেরটার হার্ড ইমিউনিটি এ ভাইরাসে কাজ করবে না। ওই ভাইরাসের হার্ড ইমিউনিটি ওই ভাইরাসের জন্য আছে কিন্তু এ ভাইরাসের জন্য ওই হার্ড ইমিউনিটি কোনো কাজ করছে না। এটা যদি ইউকেকেন্দ্রিক হয় এটার সংক্রমণ করার সক্ষমতা ৭০ ভাগ বেশি আগেরটার চেয়ে। যেহেতু সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট ওটাতে ভ্যাকসিন কম কাজ করে, শতকারা ১৫ ভাগ মাত্র কাজ করে।

একেবারে কারফিউয়ের মতো লকডাউন দিয়ে যদি নিয়ন্ত্রণ না করা যায় মানুষ এভাবে মরতেই থাকবে, হাসপাতালে না গিয়ে মারা যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। করোনা টেস্ট আরো সহজলভ্য করে আক্রান্তদের আলাদা করতে না পারলে পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হতে পারে বলেও শঙ্কা তাদের।