রমজান মাসে অফিস সকাল ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত

সরকারি প্রতিষ্ঠানে রমজান মাসে সকাল ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত অফিস সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে এসব কথা জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে ‘হিজরি ১৪৪২ (২০২১ খ্রিস্টাব্দ) সালের পবিত্র রমজান মাসে সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের জন্য অফিস সময়সূচি নির্ধারণ’-এর পাশাপাশি অন্যান্য প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ও সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রীরা বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে ১৪ বা ১৫ এপ্রিল থেকে শুরু হবে মুসলমানদের সিয়াম সাধনার মাস রমজান। অফিস সময় বর্তমানে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, রমজানে সকাল ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত অফিস চলবে। বেলা সোয়া ১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত জোহরের নামাজের বিরতি থাকবে। সাপ্তাহিক ছুটি থাকবে যথারীতি শুক্র ও শনিবার। ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ডাক, রেলওয়ে, হাসপাতাল ও রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানা এবং অন্যান্য জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এ সময়সূচির আওতার বাইরে থাকবে। এসব প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব আইন অনুযায়ী জনস্বার্থ বিবেচনা করে সময়সূচি নির্ধারণ ও অনুসরণ করবে। সুপ্রিম কোর্ট ও এর আওতাধীন সব আদালতের সময়সূচি সুপ্রিম কোর্ট নির্ধারণ করবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

অব্যাহত ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের ধারা সামাল দিতে শনিবার ‘লকডাউনের’ ঘোষণা দেয় সরকার, যা গতকাল সোমবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে। রোববার এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার এ সময়ে কী করা যাবে আর কী করা যাবে না, তা সুস্পষ্ট করে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ৫ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ১১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।

মহামারী পরিস্থিতি পর্যালোচনায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় গত ২৯ মার্চ যে ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়েছিল, সেটির আলোকে এসব নির্দেশনা দেয়ার কথা জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ১৮ দফা নির্দেশনা অনুযায়ী, ৫০ শতাংশ লোকবল দিয়ে সরকারি অফিস চালানোর কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সোমবার সচিবালয়েরও বেশির ভাগ দপ্তর খোলা ছিল। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমরা তাদের বলে দিয়েছি, তাদের কমফোর্ট অনুযায়ী কমানোর জন্য। দরকারি কাজ চালানোর জন্য যতটুকু দরকার ততটুকুই থাকবে।

মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্য উদ্ধৃত করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কভিড-১৯ টিকার দ্বিতীয় ডোজ ৮ এপ্রিল থেকে দেয়া শুরু হবে। দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে সমস্যা হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা হয়েছে তার, সমস্যা হবে না। টিকা যা আছে, তা দিতে দিতেই আরো টিকা চলে আসবে।

এছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন করে আরো কিছু ভাতা দেয়ার প্রস্তাবে সায় দিয়েছে মন্ত্রিসভা। শ্রেণী অনুযায়ী তারা দুটি উৎসব ভাতা, বাংলা নববর্ষ ও বিজয় দিবস ভাতা পাবেন। এখন থেকে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বছরে দুটি উৎসব ভাতা এবং খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে বাংলা নববর্ষ ভাতা দেবে সরকার। জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পাঁচ হাজার টাকা করে বিজয় দিবসের ভাতা দেবে সরকার।

এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সাধারণ বীর মুক্তিযোদ্ধারা সব ধরনের ভাতা পাচ্ছেন। তবে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার উৎসব ভাতা, বিজয় দিবস ও বাংলা নববর্ষ ভাতা পাচ্ছিলেন না।

পবিত্র রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নিয়েও আলোচনা হয়েছে মন্ত্রিসভায়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়েছে। ভোক্তা পর্যায়ে যাতে তেলের দাম কমে, সে বিষয়ে এনবিআর চিন্তা করছে।

এছাড়া বৈঠকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন ২০২১-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন এবং বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।