করোনাঃ ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট আসলে দেশে পরিস্থিতি আরও খারাপের আশঙ্কা

দেশ ও বৈশ্বিক তথ্য-উপাত্ত মূল্যায়ন করে একদল বিশ্লেষক বলছেন, করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বা ধরন বাংলাদেশে প্রবেশ করলে পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা আছে। করোনাভাইরাস সম্পর্কিত বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক তথ্য উপাত্ত, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা পদক্ষেপ, ভাইরাসের বিস্তারের ধরন – এমন নানা কিছু বিশ্লেষণ করে বিশ্লেষকদের দলটি যে সম্ভাব্য চিত্র তৈরি করেছে তাতে একথা বলা হয়।

বিশ্লেষক দলটির প্রধান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইন্সটিটিউটের শিক্ষক ডঃ শাফিউন নাহিন শিমুল বলেন, বাংলাদেশের বিশাল সীমান্ত ভারতের সাথে। তাই আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ যতই বন্ধ থাকুক – তাতে সেখানকার ভাইরাস আসবে না এই নিশ্চয়তা নেই। ভারতে এর ব্যাপকভাবে বিস্তার হচ্ছে এবং সেখানে ভাইরাসের ডাবল ভ্যারিয়েন্টের কথা বলা হচ্ছে। অন্যদিকে আমরা আগে ধারণা দিয়েছিলাম যে সেকেন্ড ওয়েভের চূড়া বা পিক আসবে মে মাসের শেষে বা জুনের দিকে। কিন্তু চলতি মাসের শুরু থেকেই স্বল্প মাত্রায় লকডাউনসহ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এখন আমাদের মডেল বলছে যে জুলাইতে আসতে পারে সেকেন্ড ওয়েভের পিক বা চূড়া। তবে স্বাস্থ্যবিধি সবাই ঠিক মতো মানলে সেটি তেমন খারাপ নাও হতে পারে।

এখানে পিক বা সর্বোচ্চ চূড়া বলতে দিনে অন্তত ১০/১২ হাজার সংক্রমণ শনাক্ত হওয়াকে বোঝানো হয়েছে বলে বলছেন তিনি।
ডঃ শাফিউন নাহিন শিমুল যে দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কনসোর্টিয়ামের অংশ হিসেবে কাজটি করছেন এবং তাদের প্রতি দু’সপ্তাহ পর পর সেখানে বাংলাদেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্য চিত্র সম্পর্কে একটি ধারণাপত্র উপস্থাপন করতে হয়।

বাংলাদেশি বিশ্লেষকদের দলটির আনুষ্ঠানিক নাম বাংলাদেশ কমো মডেলিং গ্রুপ। অক্সফোর্ডের ওই কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে ৪২টি দেশের গবেষক ও বিশ্লেষকরা কাজ করছেন। বাংলাদেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সম্পর্কিত সম্ভাব্য চিত্র সম্বলিত এ ধারণাপত্রটি গত ৩০ মার্চ সরকারের কাছে জমা দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশে গত বছরের ৮ মার্চ করোনা সংক্রমণ চিহ্নিত হবার পর এ পর্যন্ত ১০ হাজার ৮৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং মোট সংক্রমিত হয়েছেন ৭ লাখ ৩৯ হাজার ৭০৩ জন।

তবে এবার মার্চের শুরুতে দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর থেকে মৃত্যু ও সংক্রমণ বেড়েই চলছে।

বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে নয়দিন প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যা ছিলো ৯০ জনের বেশি। পরপর কয়েকদিন এ সংখ্যা একশর বেশি ছিলো।

মূলত বাংলাদেশের চলমান তথ্য উপাত্ত ও বৈশ্বিক তথ্যাদির ভিত্তিতে একটি গাণিতিক মডেল ব্যবহার করে সম্ভাব্য চিত্র তৈরির কাজ করেন তারা – যাতে দেশের চলমান অবস্থা, সরকারের পদক্ষেপ, মানুষের আচরণ এসব বিষয় গুরুত্ব পেয়ে থাকে।

শাফিউন নাহিন শিমুল বলছেন, সংক্রমণের গতি এখন একটু ধীর হয়েছে তবে রবিবার দোকানপাট খুলছে এবং ২৮ এপ্রিলের পর বিধিনিষেধ থাকে কিনা নিশ্চিত না। তাই এখন সংক্রমণ গতি ধীর হলেও ৮/১০ দিন ইনকিউবেশন টাইম পার হলেই আবার সংক্রমণ বাড়বে বলেই মনে করছেন তারা। তবে আমাদের মডেল বলছে মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে পারলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিলেও খুব একটা সমস্যা হবে না।

বিশ্লেষক দলটির আরেকজন সদস্য ডঃ আবু জামিল ফয়সাল বলছেন, তারা যখন বিশ্লেষণ করেছেন তখন দেশের লকডাউন ও যাতায়াতে বিধিনিষেধ ছিলো। আমাদের যে ধারণা সেগুলো নির্ভর করবে পরিস্থিতির ওপর। সামনে সব যদি খুলে যায় তখন হয়তো পরিস্থিতি ভিন্নও হতে পারে। এখন লকডাউন চলার কথা ছিলো ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত। কিন্তু তার আগেই দোকানপাট খুলে দেয়া হচ্ছে। ফলে একটা গোলমাল কিন্তু লেগে গেলো।

তিনি বলেন, পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্য পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা করতে গিয়ে তারা দেখেছেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় একদিকে সরকারি কাজে প্রচণ্ড সমন্বয়হীনতা রয়েছে, অন্যদিকে জনপ্রতিনিধিরা কার্যত কোন ভূমিকাই পালন করছেন না।

“সমন্বয়ের খুব অভাব দেখা যাচ্ছে। ধরুন করোনার যত নির্দেশনা এগুলো বাস্তবায়নে ১০টা মন্ত্রণালয় কাজ করার কথা। কিন্তু সেটি হচ্ছে না। আবার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়াতে প্রধানমন্ত্রীর আহবান বা নির্দেশনাসহ যেসব কাজে জনপ্রতিনিধিদের থাকার কথা ছিলো সেটিও দৃশ্যমান হয়নি। লকডাউন বাস্তবায়নে তাদের ভূমিকা কোথায়?”

তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ চেইন ভাঙার জন্য দরকার সমন্বিত ও কার্যকর পদক্ষেপ এবং একই সাথে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করতে হবে শতভাগ।