কিশোরী মীমের যাবতীয় দায়িত্ব নিলেন ব্যারিস্টার আহসান (ভিডিও সহ)

মাদারীপুরের শিবচরে পদ্মা নদীতে বালুবোঝাই বাল্কহেডের সঙ্গে স্পিডবোটের ধাক্কায় কিশোরী মীম হারিয়েছে বাবা-মা ও দুই বোনকে। বাবা-মা ও দুই বোনকে হারিয়ে নিঃস্ব এই কিশোরীর আশ্রয় এখন তার নানার বাড়ি। তবু সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আহসান হাবিব ভূঁইয়া তার ভরন-পোষণের দায়িত্ব নিলেন। আজ বুধবার ভোরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ফেসবুকে ব্যারিস্টার আহসান লেখেন- “মীম এর থাকা-খাওয়া, জামা-কাপড়, শিক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ সার্বিক তত্ত্বাবধায়ন এবং সুন্দর মানসিক ও পুষ্টিকর শারীরিক বিকাশের জন্য যাবতীয় দায়িত্ব নেওয়ার প্রাথমিক সকল ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছি। বর্তমানে সে তার নানা-নানির সাথে আছে। যেহেতু তারাই এখন তার গার্ডিয়ান, তাই এখনি তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা সম্ভব নয়। তবে তার নানা-নানির বয়স, আর্থিক সচ্ছলতা এবং তার সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনায় তাকে যত দ্রুত সম্ভব ঢাকায় নিয়ে আসার প্রক্রিয়া করছি। তেরখাজা উপজেলার ইউএনও আবিদা সুলতানার সাথে কথা হয়েছে। তিনি শীঘ্রই অত্র এলাকার উপজেলা চেয়ারম্যান এবং এলাকার গণ্যমান্য বাক্তিদের সাথে পরামর্শক্রমে এই বিষয়ে আমাকে সহযোগিতা করবেন জানিয়েছেন। অত্র এলাকার এমপি মহোদয়ের সাথে আজকে এই বিষয়ে কথা হবে। উদ্ধারকৃত শিবচর এলাকার মাননীয় এমপি লিটন চৌধুরী জানিয়েছেন আমি যদি সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেই তাহলে তিনিও মীমকে দ্রুত ঢাকায় আনার বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা করবেন।”

“মুহূর্তের দুর্ঘটনায় আট বছর বয়সী মেয়েটির জীবন সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে! তবে আল্লাহ সহায় থাকলে, তার একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারবো ইনশাল্লাহ। আমার ইচ্ছে তাকে একটি ভালো স্কুলে পড়ানো এবং ভবিষ্যতে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে পাঠানো। অনেকেই তাকে দত্তক নেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে যোগাযোগ করছেন। যদি আমার থেকে ভালো অপশন পাওয়া যায় তাহলে আইনগত পক্রিয়ায় সেই ব্যবস্থাও করবো তার নানা-নানির অনুমতি সাপেক্ষে, অন্যথায় সকল দায়িত্ব আমাদের পরিবর্তন করি ফাউন্ডেশনের পক্ষে আমিই পালন করবো ইনশাল্লাহ।”

“সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনায় উপস্থিত হয়ে মীমকে সাহায্য করা, তার বাবা-মার লাশ দাফনে সহযোগিতা করা এবং আমাকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করার জন্য শিবচর উপজেলার ইউএনও মো. আসাদুজ্জামান ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ওয়াহিদুজ্জামানের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। যমুনা টিভিকে ধন্যবাদ এই ধরনের একটি মানবিক সংবাদ প্রচার করার জন্য এবং ধন্যবাদ যারা ওই ভিডিওর কমেন্টে আমাকে ট্যাগ করে ও মেসেজে ভিডিওটি পাঠিয়ে সহযোগিতা করেছেন। দীর্ঘমেয়াদী একটা সিদ্ধান্ত নিলাম। সবাই দোয়া করবেন মীমের জন্য।”

উল্লেখ্য, গত ৩ মে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া থেকে ছেড়ে আসা একটি স্পিডবোট শরিয়তপুরের কাঁঠালবাড়ী ঘাটের কাছে এসে নোঙর করে রাখা একটি বাল্কহেডের সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মারা যায় মীমের বাবা মনির শিকদার, মা হেনা বেগম, তাদের মেয়ে সুমি আক্তার ও রুমি আক্তার। দুর্ঘটনায় স্পিডবোটটি উল্টে গেলেও সঙ্গে থাকা ব্যাগটি ধরেছিল শিশু মীম। সেই ব্যাগটি বুকে ধরে কোনোমতে সে পাড়ে আসে। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে। গত সোমবার বাবা-মা, বোনদের লাশ নিয়ে বাড়ি পৌঁছায় মীম। গতকাল মঙ্গলবার সকালে নিহতদের দাফন সম্পন্ন হয়।

ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন