hafiz

মিথ্যা মামলা ন্যায়বিচারের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে: বিচারপতি আবদুল হাফিজ

আপিল বিভাগের বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ বলেছেন, সম্পদ-সম্পত্তি, অপরাধ, নারী ও শিশু নির্যাতন এবং অধিকারবিষয়ক মোকদ্দমায় প্রতিনিয়ত মিথ্যা মামলা করা হচ্ছে। প্রতিপক্ষকে হয়রানি করার জন্য মিথ্যা মামলা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিচার বিভাগকে এর ভার বহন করতে হচ্ছে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে আপিল বিভাগের ২ নম্বর বিচারকক্ষে বিদায়ী সংবর্ধনায় বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ এসব কথা বলেন। এ সময় প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও আপিল বিভাগের অপর ছয় বিচারপতি বেঞ্চে ছিলেন। বিদায়ী সংবর্ধনাকালে বিচারকক্ষটি আইনজীবী ও আগত ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে পরিপূর্ণ ছিল।

১৯৫৭ সালের ১ জুন জন্ম নেওয়া বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজের বয়স ৬৭ বছর পূর্ণ হচ্ছে আগামীকাল শুক্রবার (৩১ মে)। তবে কাল সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় আজ তাঁর শেষ কর্মদিবস। প্রথা অনুসারে, আজ এই বিচারপতিকে বিদায়ী সংবর্ধনা জানানো হয়। অনুষ্ঠানে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন এই বিচারপতির কর্মময় জীবন নিয়ে বক্তব্য দেন।

‘দুর্নীতি সব অর্জন ক্ষতিগ্রস্ত করছে’

মিথ্যা মামলা ও দুর্নীতি প্রসঙ্গে বিদায়ী সংবর্ধনায় বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ বলেন, ‘দীর্ঘ সময় পাড়ি দিয়ে এটা মিথ্যা মামলা নির্ধারিত হয়তোবা ঠিকই হচ্ছে, কিন্তু এতে আদালতের প্রচুর সময় নষ্ট হচ্ছে। মিথ্যা মামলা ন্যায়বিচারের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি দুর্নীতি আমাদের সব অর্জনকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। দুর্নীতির ব্যাপকতা অনেক। দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের হাত থেকে অফিস–আদালতকে মুক্ত রাখতে হবে। একজন বেতনভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারী কীভাবে কোটি কোটি, এমনকি শতকোটি টাকার মালিক হন, তা দেশবাসীকে হতবাক করে। তাই এগুলোকে রোধ করতে রাষ্ট্রকেই দায়িত্ব নিতে হবে। তাহলে দেশ উপকৃত হবে। মানুষ অযাচিত বিপদ থেকে রক্ষা পাবে।’

১৯৫৭ সালের ১ জুন জন্ম নেওয়া এই বিচারপতির ৬৭ বছর বয়স পূর্ণ হচ্ছে ৩১ মে। তবে সেদিন সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় আজ তাঁর শেষ কর্মদিবস। প্রথা অনুসারে, আজ এই বিচারপতিকে বিদায়ী সংবর্ধনা জানানো হয়।
‘সময়ের বিবর্তনে অপরাধের ধরন প্রতিনিয়ত পাল্টে যাচ্ছে, যা আমাদের সন্তানদের ভয়াবহ অবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে’ উল্লেখ করে মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ বলেন, অভিভাবকদের বিভিন্নমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। পারিবারিক সম্প্রীতি, সংস্কৃতি ও দীর্ঘ লালিত মূল্যবোধ ইত্যাদিতে ভাঙচুর করা হচ্ছে। কিশোর গ্যাংয়ের উত্থান ঘটেছে। মাদক, সামাজিক অনাচারসহ অস্ত্রের প্রতিযোগিতা, হুমকি ও আশঙ্কার বিস্তার ঘটেছে। আর এগুলো টেকসই উন্নয়ন, শান্তি, প্রসারিত ভালোবাসা, ধৈর্য ও সহযোগিতা প্রতিষ্ঠার প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

‘মুহূর্তেই বড়লোক হওয়ার মানসিকতা বড় বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে’

বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ বলেন, ‘নীতি–নৈতিকতার তোয়াক্কা না করে মুহূর্তেই বড়লোক হওয়ার মানসিকতা আমাদের বড় বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে। আপনারা সবাই এ ব্যাপারে সম্যকভাবে অবহিত। তবু আরেকবার সবাইকে এটা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, জ্ঞানের আলো মেলে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।…সততার সঙ্গে জীবনযাপনে দেশবাসীকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।’

‘দুর্বলকে রক্ষায়, দুর্নীতি রোধে, ন্যায়সংগত অধিকার প্রাপ্তিতে, সামাজিক অনাচার রোধে, দেশ-জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তায় বিচার বিভাগ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে’ উল্লেখ করে মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ বলেন, ‘বিচার বিভাগের বিরাট দায়িত্ব, অথচ লোকবল কম। প্রয়োজন অধিকসংখ্যক বিচারক নিয়োগসহ আদালতের জনবল বৃদ্ধি, যা আইনের শাসন কায়েমে ইতিবাচক ফল দেবে।’

‘বিচারককে স্বাধীন চিত্তের অধিকারী হতে হবে’

বিচারকদের উদ্দেশে আপিল বিভাগের বিদায়ী এই বিচারপতি বলেন, ‘বিচারকেরা দায়িত্ব পালন করবেন সততা ও ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে সকল প্রকার পক্ষপাতিত্ব ও ভয়-ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে; গরিব-ধনী, ক্ষমতাশালী-ক্ষমতাহীন—সবাই তাঁর কাছে সমান। আইনজীবীরা আদালতকে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে আইনগত সহায়তা দেবেন, এটাই শাশ্বত নিয়ম। এর ব্যত্যয় ঘটলে নিয়মমাফিক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়াই হবে উত্তম কাজ। তবে বিচারক যাতে স্বাধীনভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করতে পারেন, সে জন্য সর্বপ্রকার সহযোগিতা করতে হবে। পাশাপাশি বিচারককেও বিচারকার্য পরিচালনায় স্বাধীন চিত্তের অধিকারী হতে হবে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সচেতন হোন। ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন। তবেই আমরা সম্ভবত সত্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখতে সক্ষম হব।’

সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর ১৯৮২ সালে ঢাকা জেলা আদালতের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ১৯৮৫ সালে হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ২০০৩ সালের ২৭ এপ্রিল হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান। দুই বছর পর ২০০৫ সালের ২৭ এপ্রিল হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হিসেবে স্থায়ী নিয়োগ পান। গত ২৪ এপ্রিল তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে পরদিন তাঁর নিয়োগ কার্যকর হয়।

Scroll to Top