রোজা পালনে হার্টের রোগীও সুস্থ থাকেন

রোজা পালনের মধ্য দিয়ে তাকওয়া অর্জিত হলেও আমাদের শরীর ও মনের জন্যও এর উপকারিতা রয়েছে, বিশেষ করে হৃদরোগীর জন্য। হার্টের কয়েক ধরনের রোগ রয়েছে। এর মধ্যে রক্তনালির রোগ সবচেয়ে মারাত্মক। এতে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক রোগীর মৃত্যু হয় এ রোগে। রক্তে অতিরিক্ত চর্বি, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপান ইত্যাদি কারণে হার্টের রোগ হয়ে থাকে। মানুষ আক্রান্ত হয়ে পড়ে হার্ট অ্যাটাকে। রমজানে ধূমপানের মাত্রা অনেক কমে যায়। কারও কারও পক্ষে পরবর্তী মাসগুলোয় ধূমপান একেবারে ছেড়ে দেওয়া সম্ভব। এভাবে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।

রোগীদের ওপর পরীক্ষা করে দেখা গেছে, উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা রোজা রাখার কারণে কমে আসে। রমজানের নির্দিষ্ট সময়ে রোজা রাখার কারণে আমাদের শরীরের চর্বি বার্ন হয়। কিন্তু এই উপবাস যদি দীর্ঘ সময় ধরে করা হয়, তা হলে মাংসপেশির আমিষ ভেঙে যায়, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। রাসুল (সা.) আমাদের সেহরি খেতে ও ইফতারে দেরি না করার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন। এটা কতটা যে স্বাস্থ্যসম্মত, তা আমরা সহজেই অনুমান করা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত রোজা রাখলে ৫৮ শতাংশ হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়। রোজা রাখায় ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমে এবং ঝঁমধৎ-এর গবঃধনড়ষরংস-এর উন্নতি হয়, যা ওজন বৃদ্ধি ও ডায়াবেটিসেরও ঝুঁকি কমায়, এমনকি হৃদরোগের ঝুঁকিও কমায়। রোজা রাখলে ৩০-৪০ শতাংশ উপকারী কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায় এবং ঞএ কোলেস্টেরল, শরীরের ওজন, ইগও কমে যায়। এক কথায় বলা যায়, রোজা হচ্ছে ওষুধবিহীন হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর অন্যতম একটি মাধ্যম।

রসুল (সা.) বলেছেন, রোজা রাখো, সুস্থ থাকো। রসুল (সা.) রমজান মাসের বাইরে নিয়মিত রোজা রাখতেন। সোম, বৃহস্পতিবার বা মাসে তিন দিন। এ ব্যাপারে পাশ্চাত্যে যথেষ্ট গবেষণা হচ্ছে। ওহঃবৎসরঃঃবহঃ ঋধংঃরহম বা মাঝে মধ্যে রোজা রাখলে রমজান মাসের রোজার মতোই সারা বছর রোজার সুফল পাওয়া সম্ভব। বর্তমানে ইউরোপ ও আমেরিকার অনেক ডাক্তার সপ্তাহে দুদিন চিকিৎসার অংশ হিসেবে রোগীদের ঋধংঃরহম-এর উপদেশ দিচ্ছেন। একটি প্রশ্ন গুরুত্বের দাবি রাখে, রমজানে হার্টের রোগী উপকৃত হচ্ছে বটে, তবে বাকি এগারো মাস হার্টের রোগী কিভাবে উপকৃত হবেন? রোজার হাদিসগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, রমজানের বাইরে মাঝে মধ্যে রোজা রাখার ব্যাপারে রসুল (সা.) আমাদের উৎসাহিত করেছেন। যেমন সাওয়ালের রোজা, মহররমের রোজা, আরাফাতের দিনে রোজা, সপ্তাহে দুই দিন বা মাসে তিন দিন রোজা, কোনো কোনো অপরাধের কাফফারা হিসেবে রোজা রাখার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ মাঝে মধ্যে উপবাস নিয়ে পাশ্চাত্যে যে আলোড়ন হচ্ছে, তা অনেক আগেই রসুল (সা.) আমাদের উৎসাহিত করেছেন।

খাদ্যাভ্যাস ব্যাপারে রসুল (সা.) পেটের তিন ভাগের এক ভাগ খাবার দিয়ে পূর্ণ করার জন্য বলেছেন। তিনি আরও বলেছেন, আদম সন্তানের জীবনধারণের জন্য কয়েক লোকমা খাবারই যথেষ্ট। কম খান, ভালো খাবারটি খান। তাতে সুস্থ থাকবেন, ভালো থাকবেন সবসময়।