দুই মাসের ছুটি নিয়ে তিন বছর অনুপস্থিত কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার

নওগাঁর মান্দায় চাকরিতে বহাল থাকা সত্বেও প্রায় ৩ বছর ধরে অনুপস্থিত কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার মোছাঃ মৌসুমী আক্তার। এতে উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের দুইটি কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে গ্রামীণ জনপদের ১০ হাজার সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তা-ব্যক্তিদের নেই কোন তদারকি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে অক্টোবর মাসে ১৯ তারিখ আবিদ্য পাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) হিসেবে দায়িত্ব নেন মোছাঃ মৌসুমী আক্তার। এরপর গত ২০২০ সালের ১লা সেপ্টেম্বর অসুস্থতার কারণে ২ মাসের ছুটি নেন তিনি। এরপর ছুটির মেয়াদ শেষ হলেও তিনি কমিউনিটি ক্লিনিকে আসেননি। তারপর থেকে স্বাস্থ্য সহকারী নমিতা রানী দাস প্রায় ১ বছর দায়িত্ব পালন করেন এবং পরবর্তীতে সিএইচসিপি মোঃ আক্তারুজ্জামান উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের আবিদ্যপাড়া ও চক হুলিবাড়ির ২টি কমিউনিটি ক্লিনিকের দ্বায়িত্ব পালন করে আসছেন।

আরো জানা যায়, মোছাঃ মৌসুমী আক্তারকে কর্মরত অবস্থায় দায়িত্বে অবহেলা, কর্মস্থল ত্যাগ, অনিয়ম-গাফিলতির কারনে অফিস কর্তৃক কারণ দর্শানোর দুটি নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ২য় বারের নোটিশের জবাব কর্তৃপক্ষের কাছে সন্তোষজনক না হওয়ায় পরবর্তীতে স্ব-শরীরে জবাবের ব্যাখ্যা দিতে ৩য় বার নোটিশ দেওয়া হয়। বর্তমানে মোছাঃ মৌসুমি আক্তারের চাকরি এখনো বহাল থাকলেও বেতন বন্ধ রয়েছে। এ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, আবিদ্যপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে সকাল ১০টার সময় একজন আয়া ক্লিনিকটি খুলে বসে থাকলেও হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার এর কক্ষে ঝুলছে তালা। কয়েক জন নারী ও পুরুষ রোগী চিকিৎসা সেবার অপেক্ষায় বসে থাকলেও আসেননি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার। এছাড়াও চকহুলিবাড়ি ক্লিনিকে কর্মরত মোঃ আক্তারুজ্জামানকেও দুপুর সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। সেখানেও দেখা যায় ভবনের মূল ফটকে ঝুলছে তালা। যদিও নিয়ম অনুযায়ী সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত এটি খোলা থাকার কথা।

আবিদ্যপাড়া ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা মোছাঃ শিউলী খাতুন বলেন, এই কমিউনিটি ক্লিনিকে সপ্তাহে ৩ দিন খোলা থাকার কারণে আমরা সঠিকভাবে সেবা পাই না। ফলে আমরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। ক্লিনিকটি সঠিকভাবে পরিচালনা করা হলে আমাদের অনেক উপকার হতো।

চকহুলিবাড়ি ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা আনন্দ কুমার বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে আমরা সঠিকভাবে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছি না। সপ্তাহে ৩ দিন খোলা থাকলেও দুপুর ১২টার পর থেকে ক্লিনিকটি বন্ধ থাকে। আমাদের উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে প্রায় ১৪ কিলোমিটার পথ যেতে হয়। ফলে সঠিক সেবার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাই।

এ বিষয়ে আবিদ্যপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের জমিদাতা মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, \’আমি জনগণের চিকিৎসা সেবার জন্য ৫ শতক জমি কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য দান করেছি। কিন্তু বর্তমানে কয়েক বছর ধরে এই ক্লিনিকে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না জনগন। কিন্তু জনগন যদি স্বাস্থ্য সেবাই না পায় তাহলে আমার জমি দিয়ে লাভ কি?\’

এ ব্যাপারে সিএইচসিপি মোছাঃ মৌসুমী আক্তারের কাছে জানতে চাইলে মুঠোফোনে তিনি বলেন, \’২০২০ সালে ১লা সেপ্টেম্বর অসুস্থতার কারণে ২ মাসের ছুটি নেই আমি। তবে পরবর্তীতে আর আবিদ্যপাড়া ক্লিনিকে যাওয়া হয়নি। কিন্তু কবে ক্লিনিকে জয়েন করবো তা বলতে পারছিনা।\’

এ বিষয়ে সিএইচসিপি মোঃ আক্তারুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, \’আমি মূলত চকহুলিবাড়ি কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত আছি। কিন্তু বর্তমানে আবিদ্যপাড়া ক্লিনিকে মোছাঃ মৌসুমি আক্তার অনুপস্থিত থাকার কারণে আমাকে আবিদ্যপাড়া ও চকহুলিবাড়ি কমিউনিটি ক্লিনিকে অফিস কর্তৃক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে সপ্তাহে ৩ দিন করে দায়িত্ব পালন করে আসছি।\’

এ বিষয়ে মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ বিজয় কুমার রায় বলেন, \’আবিদ্যপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত সিএইচসিপি মোছাঃ মৌসুমি আক্তার অসুস্থতার কারণে ২০২০ সালের ১লা সেপ্টেম্বর ছুটি নেওয়ার পর থেকে অনুপস্থিত। এসব গাফিলতির কারণে সিবিএইচসিতে পত্র প্রেরণ করেছি। এরপর তাকে পরপর ৩ টি কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে জানানো হলেও সে দেখা করেনি। তবে মৌসুমী আক্তার চাকরিচ্যুত হয়েছেন কিনা সে বিষয়ে সিবিএইচসি থেকে তথ্য পাওয়া যায়নি।\’

Scroll to Top